বাসা বাড়ি ঘর

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাসা বাড়ি ঘর

‘বাড়ি’ ও ‘বাসা’ দুটোই বাসস্থান। অভিধানেও এমন উল্লেখ আছে। তবে উভয় শব্দের আভিধানিক অর্থে কিছু পার্থক্য আছে। মানুষের ক্ষেত্রে যা বাসা তা বাড়ি হলেও পাখিদের বাসস্থান সবসময় বাসা। তাদের বাসস্থানকে বাড়ি বলা হয় না। অতএব একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেল, পাখিদের বাসস্থানকে বাসা বলা হয়। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘বাড়ি’ অর্থ, ‘বাসস্থান’, ‘আদিনিবাস’। সমার্থক: ঘর। এবং ‘বাসা’ অর্থ,(১)‘পৈতৃক ভিটা ভিন্ন বাসস্থান’, ‘শহরের ভাড়া

করা বাড়ি’ এবং (২) ‘কুলায়’, ‘নীড়’। অভিধানিক অর্থ বিচারে পাখির বাসস্থানকে কোনোরূপ সংশয় ছাড়া ‘বাসা’ বলা যায় কিন্তু মানুষের বাসস্থানকে নিঃসশয়ে বাসা বলা যায় না। মানুষের জন্য বাসা হচ্ছে পৈতৃকভিটা ছাড়া অন্যকোনো বাসস্থান বা আদিনিবাস। এ হিসেবে শুধু শহরের ভাড়া করা বাড়ি নয়, কেউ তার আদিনিবাস বা পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে অন্যকোথাও বাসস্থান নির্মাণ করে বসবাস করলে সেটিও বাসা হয়ে যায়। আবার অভিধান অনুযায়ী বাড়ি হচ্ছে, আদিনিবাস, পৈতৃক বাসস্থান এবং নিজের বাড়ি। হয়তো এজন্য বাড়ির মালিক অন্যকে ভাড়া-দেওয়া বাসস্থানকে সাধারণত বাড়ি বলেন। তবে নিজে যে বাসস্থানে থাকে সেটি স্বমালিকানাধীন হলেও সাধারণত ‘বাসা’ বলেন।

অভিধানে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, এখন শব্দ দুটোর প্রায়োগিক অর্থ শুধু আভিধানিক অর্থে সীমাবদ্ধ নেই। বড়ো বড়ো আবাসন এলাকাসমূহে নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্বিচারে বাসা নম্বর বা বাড়ি নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে লোকমুখে এবং দাপ্তরিক দলিলপত্রেও অভিধানের মতো ‘বাসা’ ও ‘বাড়ি’র কোনো পার্থক্য লক্ষ করা যায় না। এখানে যা বাসা, তাই বাড়ি। আসেলে, শহুরেদের অধিকাংশ বাসস্থানই পাখির নীড়ের মতো ক্ষুদ্র, অস্থায়ী এবং অনিরাপদ। এসব বাসা পাখির বাসার মতোই, আজ এখানে কাল ওখানে, বস্তি তো পুরো শহরই – হয়তো এজন্য শহরে মানুষের বাস্থানকে বলা হয় বাসা।

শুবাচি খুরশেদ আহমেদের ভাষায়, “বাড়ি এবং বাসা এ দুটির মধ্যে পার্থক্য ঠিক ততটুকু, যতটুকু পার্থক্য নিচের দুটি প্রশ্নে আপনার জবাবের মধ্যে : আপনার বাড়ি কোথায়? আপনার বাসা কোথায়?” তবে গ্রামাঞ্চলে ‘বাড়ি’ এবং শহরাঞ্চলে ‘বাসা’ শব্দটির প্রচলন বেশি। যাই হোক, ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী বাসা অর্থ, (১)পৈতৃক ভিটা ভিন্ন বাসস্থান, (২) শহরের ভাড়া করা বাড়ি এবং (৩) পাখির বাসস্থান।

Leave a Comment

ধারণ শব্দে মূর্ধন্য-ণ; ধরন শব্দে নেই কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

ধারণ শব্দে মূর্ধন্য-ণ; ধরন শব্দে নেই কেন

‘ধরন’ শব্দে দন্ত্য-ন কিন্তু ‘ধারণ’ শব্দে মূর্ধন্য-ণ, কিন্তু কেন? শুবাচ গ্রুপে এবং শ্রেণিকক্ষে অনেকে এর কারণ জানতে চেয়েছেন। বিষয়টি সংক্ষেপে বলে ফেলার মতো নয়। কেননা, এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। তাই একটু বিস্তৃত ব্যাখ্যার দাবি রাখে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধিকাংশ শিক্ষক এবং বৈয়াকরণ মনে করেন, ণত্ববিধির কারণে ‘ধরন’ বানান ‘মূর্ধন্য-ণ’ মুক্ত। বাংলা বানানে সাধারণত শুধু তৎসম শব্দে ‘মূর্ধন্য-ণ’ বজায় আছে। তদ্ভব, অর্ধতৎসম, দেশি ও বিদেশি শব্দে /মূর্ধন্য-ণ/ এর প্রয়োগ নেই। /ধরন/ শব্দটি তৎসম নয়; সে জন্য এর বানানে /দন্ত্য-ন/।

আর একদল বলেন, ‘সংস্কৃত /ধৃ/ ধাতুর সঙ্গে /অন/ যোগে গঠিত /ধরন/ শব্দটি বরাবরই তৎসম। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে’ও শব্দটিকে তৎসম

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

বলা হয়েছে। ওই অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত এবং পদ্ধতি, প্রণালি, বর্ষণবিরতি, আকৃতি, ভঙ্গি, চালচলন প্রভৃতি অর্থ দ্যোতক /ধরন/ শব্দটি সংস্কৃত; যার ব্যুৎপত্তি— /√ধৃ+অন/। সুতরাং, ণত্ববিধি অনুযায়ী শব্দটির বানান হওয়া উচিত /ধরণ/। তারপরও শব্দটির বানান /ধরন/ হলো কেন?

সুভাষ ভট্টাচার্য আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধানে লিখেছেন, “সংস্কৃতে ধরণ শব্দের একটি অর্থ ধারণ। শব্দটির এই অর্থে প্রয়োগ বাংলায় হয় না। অর্থাৎ শব্দটি অর্থের দিক থেকে তৎসম নয়। আর এই কারণেই ণত্ববিধান এতে প্রয়োগ করার কারণ নেই।”

এবার /ধরন/ শব্দটির জন্মবৃত্তান্ত  এবং বানানে ‘দন্ত্য-ন’ এর ঐতিহাসিক যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করা যাক। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’ গ্রন্থে /ধরন/ শব্দটি নেই, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষেও শব্দটি পাওয়া যায় না। অথচ এই দুটি অভিধান সর্বপণ্ডিতস্বীকৃত বিশুদ্ধ বাংলা শব্দকোষ। এই দুই গ্রন্থে কেবল /ধরণ/ শব্দটি স্থান পেয়েছে। তার মানে, ওই দুটি অভিধান প্রণয়নকালে বাংলায় বর্তমানে প্রচলিত অর্থে /ধরন/ শব্দটির অস্তিত্ব ছিল না। সংগত কারণে বলা যায়, /ধরণ/ শব্দটিই /ধরন/ হয়ে বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অথবা /ধরণ/ শব্দ থেকে নতুন অর্থে /ধরন/ শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে।  যেটিই হোক না কেন, শব্দটি (ধরন) ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত হলেও অর্থের উৎস বিবেচনায় তৎসম নয়। তাই  বৈয়াকরণগণ /ধরন/ বানানে  ‘দন্ত্য-ন’ সিদ্ধ বলে মনে করেছেন।

এখান থেকে আমরা আর একটি বিষয় পাই এবং সেটি হলো : ভিন্ন অর্থ প্রদানের কারণেও কোনো শব্দ তার তৎসমত্ব হারাতে পারে।  আসলে /ধরণ/ শব্দের দুটি রূপ। একটি হলো /ধরণ/ এবং অন্যটি /ধরন/। /ধরণ/ শব্দের অর্থ ধরে রাখা, ধারণকারী, ধরণি এবং /ধরন/ শব্দের অর্থ প্রকার, রকম, পদ্ধতি ইত্যদি। উপর্যুক্ত আলোচনায় এটিই প্রতীয়মান হয় যে, /ধরন/ শব্দটি উৎসগতভাবে সংস্কৃত হলেও অর্থগতভাবে সংস্কৃতকে অনুসরণ না-করে অন্য অর্থ ধারণ করায় তার তৎসমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। বিষয়টাকে অনেকটা পিতামাতার অবাধ্য ত্যাজ্যপুত্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ত্যাজ্যপুত্র ত্যাজ্য হলেও পিতামাতার নাম হতে চ্যুত হতে পারে না। তাই ‘ধরন’ সংস্কৃত হতে চ্যুত হলেও অভিধানে উৎস হিসেবে সংস্কৃত পরিচয় রেখে দেওয়া হয়েছে। এখানেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে।

উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

#subach

 

 

 

Leave a Comment

টিকা ঠিকা; টিকাদার ও ঠিকাদার

ড. মোহাম্মদ আমীন

টিকা ঠিকা; টিকাদার ও ঠিকাদার

বাংলা ক্লাসে এক  শিক্ষার্থী প্রশ্ন করলেন, “টিকা শব্দের অর্থ কী?”  সরাসরি এবং এককথায় তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘টিকা’ শব্দের চারটি পৃথক ভুক্তিতে চারটি ভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী কোন ‘টিকা’র অর্থ জানতে চেয়েছে তা আমি কী করে বুঝব? বাক্যে পদ হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়া পর্যন্ত কোনো শব্দের সঠিক ও স্পষ্ট অর্থ জানানো সম্ভব নয়। কেননা একই বানানের শব্দ বাক্যে ভিন্নার্থে ব্যবহারের  অনেক নজির রয়েছে। বললাম,

টিকা পরে টিকা হাতে আসে টিকাদার
টিকা নিলে টিকে  যাবে বলে ডাক্তার

উপরের দুই লাইনের ছড়াটায় চারটি টিকা আছে এবং একটি আছে টিকাদার। চার ‘টিকা’র অর্থ চার রকম। বাক্যে শব্দকে বসিয়ে নির্দিষ্ট করে না দিলে উত্তরদাতা কোন টিকা বুঝবে? আসলে বাক্যে না বসলে শব্দের অর্থ সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয় না।  কারণ,  একটি শব্দের একাধিক ভিন্নতাদ্যোতক অর্থ থাকতে পারে। টিকাতে যেমন হয়েছে :

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

টিকা যখন সংস্কৃত গুটিকা শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়ে বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ — রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য দেহে প্রতিষেধক বীজ প্রয়োগ। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় vaccination. বাংলা ‘টিকা’ এবং ফারসি ‘দার’ এর মিলনে সৃষ্ট ‘টিকাদার’ শব্দের অর্থ প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মী।তবে ‘ঠিকাদার’ অন্য বিষয়।

টিকা যখন সংস্কৃত ‘তিষ্ঠন’  থেকে উদ্ভূত হয়ে বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন এর অর্থ : থাকা, অবস্থান করা; তিষ্ঠানো (টিকে থাকা), বজায় থাকা ( ধোপে টিকা), স্থায়ী হওয়া (জামার রংটা টিকে গেল), জীবিত থাকা (রোগিটা শেষপর্যন্ত টিকে গেল) প্রভৃতি।

টিকা যখন দেশি এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন শব্দটির অর্থ – হুঁকোর তামাকে আগুন দেওয়ার জন্য ভাতের মাড়ের সঙ্গে কাঠকয়লার গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি রোদে শুকানো চাকতিবিশেষ)।

টিকা যখন সংস্কৃত তিলক শব্দ থেকে উদ্ভূত এবং বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন টিকা শব্দের অর্থ- কপালের টিপ, তিলক, রাজচিহ্ন।

এবার আমার বর্ণিত দু-লাইনের ছড়ায় বর্ণিত চার ‘টিকা’র অর্থ আপনারাই  বলতে পারবেন।

ঠিকাদার: বাংলা ঠিকা ও ফারসি দার শব্দের সমন্বয়ে গঠিত ঠিকাদার অর্থ—(বিশেষ্যে) যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চুক্তিপত্রে বর্ণিত শর্তানুসারে অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ কোনো পণ্য সরবরাহ বা কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইংরেজিতে— contractor.

উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment

নেত্রকোণা না কি নেত্রকোনা

ড. মোহাম্মদ আমীন

 নেত্রকোণা না কি নেত্রকোনা

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘কোণ’ শব্দের অর্থ (১) পরস্পর মিলিত দুটি সরলরেখার মধ্যবর্তী স্থান, কোনা; (২) দুই পার্শ্বের মিলনস্থান (ঘরের কোণ), (৩) সূক্ষ্ণ প্রান্ত (আঁখিকোণ), (৪) অস্ত্রাদির অগ্রভাগ (ছুরির কোণ), (৫) খুঁট (কাপড়ের কোণ), (৬) গৃহাভ্যন্তর, অন্তঃপুর প্রভৃতি।

অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘কোনা’ শব্দের দুটি পৃথক ভুক্তি পাওয়া যায়। প্রথম ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘কোণ’ থেকে উদ্ভূত ‘কোনা’

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

শব্দের অর্থ  বিশেষ্যে প্রান্ত, ধার (কোনাকুনি), এবং বিশেষণে কোণযুক্ত, কোণবিশিষ্ট প্রভৃতি। দ্বিতীয় ভুক্তি অনুযায়ী ‘কোনা’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে (১) তিনশত পানপাতার গুচ্ছ, (২) ধান মাপর পাত্র, (৩) ঘরের চাল ধরে রাখার জন্য মাটিতে পোঁতা খুঁটি প্রভৃতি। তবে দ্বিতীয় ভুক্তির অর্থগুলো আলোচ্য বর্ণনায় প্রাসঙ্গিক নয়। বর্ণিত ‘কোণ’ ও ‘কোনা’ শব্দের অভিধার্থ হতে দেখা যায়, ‘কোণ’ শব্দের একটি অর্থ কোনা। সুতরাং ‘কোণ’ ও ‘কোনা’ ক্ষেত্রবিশেষে সমার্থক। তবে ‘কোণ’ তৎসম এবং ‘কোনা’ অতৎসম শব্দ। এবার দেখা যাক, নেত্রকোণা না কি নেত্রকোনা। অভিধানে ‘কোণ’ শব্দ পাওয়া যায়, কিন্তু ‘কোণা’ শব্দ পাওয়া যায় না। কিন্তু ‘কোনা’ শব্দ পাওয়া যায়, যা ‘কোণ’ শব্দের সমার্থক।

এ আলোচনা থেকে বলা যায়, অভিধার্থ মতে ‘নেত্রকোণ’ হতে পারে, কিন্তু নেত্রকোণা হতে পারে না। কারণ, কোণা’ শব্দটির কোনো অভিধার্থ নেই। অধিকন্তু, অতৎসম শব্দের বানানে সাধারণত মূর্ধন্য-ন বসে না। অতএব, অভিধার্থ বিবেচনায় ‘নেত্রকোনা’ হওয়াই যুক্তিযুক্ত। যদিও সংস্কৃত ‘নেত্র’ শব্দের সঙ্গে অতৎসম ‘কোনা’ যুক্ত হওয়াটা কিছুট অস্বাভাবিক। কিন্তু আলোচ্য নাম বর্ণনায় নেত্রকোনা শব্দটির উৎপত্তিতে সংস্কৃত বা তৎসম-অতৎসম কোনো বিবেচনা ছিল না। কেন ছিল না তা নেত্রকোনা জেলার নামকরণ বিবেচনা করলে বোঝা যায়। এখন দেখা যাক, নামকরণ ইতিহাস বিবেচনায় জেলার নাম হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় ‘নেত্রকোনা’ নামটি কতটুকু যৌক্তিক।

নেত্রকোনা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। একসময় এটি থানা এবং মহকুমা ছিল। ইংরেজ আমলে ইংরেজদের কাছে এলাকাটি ‘নাটোরকোনা’ নামে পরিচিত ছিল। যার অপভ্রংশ নেত্রকোনা। এটি তৎসম নয়। নেত্রকোনা থানা সদর মগরা নদীর বাঁকে অবস্থিত। নদীর বাঁক স্থানীয় ভাষায় নদীর কোনা নামে পরিচিত। মগরা নদীর কোনায় এলাকাটি অবস্থিত ছিল। তাই স্থানীয় লোকজন এলাকাটিকে ‘নদীর কোনা’ নামে অভিহিত করে। যা আস্তে আস্তে নদীরকোনা> নতেরকোনা> নেতেরকোনা>নেতরকোনা এবং অবশেষে নেত্রকোনা নামে স্থিতি পায়। নেত্রকোনা নামকরণের আর একটি প্রবাদ নেত্র প্রবাদ নামে পরিচিত। কথিত হয় মগড়া নদীর যে বাঁকে এলাকাটি গড়ে উঠে সেটি এক সময় অনেকটা নেত্র বা চোখের কোনার মত ছিল। তাই লোকজন মজা করে এলাকাটিকে নেত্রের কোনা নামে ডাকত। যা আস্তে আস্তে  ‘নেত্রকোনা’ নামে স্থিতি পেয়ে যায়। সুতরাং ব্যাকরণ, অভিধান এবং নামকরণ ইতিহাস প্রভৃতি বিবেচনায় ‘নেত্রকোনা’ নামই যৌক্তিক।

#subach

Leave a Comment

জেনে নিন আপনার নামের অর্থ

ড. মোহাম্মদ আমীন

জেনে নিন আপনার নামের অর্থ

আমি বাংলা বানান শিখি, শেখাই; পড়ি এবং পড়াই। প্রমিত বাংলা বানান নিয়ে গবেষণা করা আমার শখ, বলা যায় নেশা।  শ্রেণিকক্ষে, সভা সেমিনারে  আমাকে প্রায়শ একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় — ‘আমীন’ বিদেশি শব্দ। আপনিই বলে থাকেন বিদেশি শব্দে ‘ঈ-কার’ হয় না। তো, আপনার নামের বানানে ‘ঈ-কার’ কেন? বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানান-বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম কী  হবে সেটি ওই নাম যারা রাখে বা ধারণ করে তাদের উপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানের নামের

বানান নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলেও ব্যক্তির নামের বানান নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রমিত বানানবিধি অনুযায়ী অর্থহীন। যদিও আমার নাম রাখার সময় আমি বর্তমান

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

সময়ের মতো অভিজ্ঞানের অধিকারী হলে হয়তো বলতাম, আমার নামের বানানে দীর্ঘ ‘ঈ-কার’ দিও না, ‘হ্রস্ব ই-কার’ দাও। ‘আমীন’ ব্যক্তিনাম না-হয়ে শব্দ হলে বাংলা বানানে ‘ঈ-কার’ ভুল হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে নয়। এবার আসে দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনার নামের অর্থ কী? উত্তরে আমি বলতাম, “আমি শুধু আমার নয়, পৃথিবীর সবার নামের অর্থ বলতে পারি।”  

প্রকৃতপক্ষে, আমিই আমার নামের অর্থ। আমার নাম, আমার পরিচায়ক। তাই ব্যক্তিনামের কোনো আক্ষরিক অর্থ নেই। আমার নাম অদ্বিতীয়, যেমন আমি অদ্বিতীয় এবং পৃথিবীতে আমি ছাড়া আমার সত্তায় অধিষ্ঠিত আর কোনো আমি ‘আমীন’ নেই। বাবা-মা, পূর্বপুরুষ, ডিএনএ প্রভৃতি বিবেচনায় আমি বিশ্বের এক অদ্বিতীয় সত্তা। তাই আমীন শব্দের অর্থ আমি আমীন, অন্য কিছু নয়, অন্য কেউ নয়।  তবে ‘মোহাম্মদ/মুহাম্মদ ’ ও ‘ আমীন/ আমিন’ শব্দের অর্থ আছে। এগুলোর অর্থ অভিধানে পাওয়া যায়, কিন্তু তা শব্দ হিসেবে, কারো নাম হিসেবে নয়। আমীন নামের অর্থ মেনে নিলে পৃথিবীর সব আমীন আমি ‘আমীন’ হয়ে যাবে।

ব্যক্তিনাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব এবং অদ্বিতীয় প্রত্যয়। ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ এবং চিহ্নিত করার জন্যই কেবল নাম রাখা হয়। তাই ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ওই ব্যক্তি ছাড়া নামের কোনো  অভিধার্থ থাকে না, থাকা উচিতও নয়। তাহলে আমাদের পাড়ার বড়ো ভাই নিউটন আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী নিউটন অভিন্ন হয়ে যাবে। নন্না মিয়ার ছেলে আজাদ ‘ফ্রিডম’ শব্দে অনূদিত হয়ে,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আজাদ হয়ে যাবে। ব্যক্তিই ব্যক্তিনামের অর্থ এবং ব্যক্তিনাম কেবল একজন ব্যক্তিকেই শনাক্ত করে। তাই আমিই আমার নামের অর্থ। আমার নামই আমার পরিচায়ক। সংগত কারণে আমার নামের কোনো অভিধার্থও নেই। অভিধার্থ নেই বলে ব্যক্তিনামের কোনো ভাষান্তর  হয় না। অভিধার্থ থাকলে আইনস্টাইন-এর বাংলা নাম হতো একটি পাথর। কেননা ‘আইন’ মানে একটি এবং ‘স্টাইন’ মানে পাথর। kohl মানে বাধাকপি। নামের যদি অর্থ থাকত, তাহলে ‘ kohl’ অনূদিত হয়ে বাঁধাকপি হয়ে যেত।  সেক্ষেত্রে জার্মানির চ্যান্সেলর ‘হেলমুট কোল’ হয়ে যেতেন জার্মানির বাঁধাকপি।

শব্দার্থের অভিধানে শেক্সপিয়র,  সক্রেটিস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কারো নামের কোনো অর্থ পাওয়া যায় না। চরিতাভিধানে তাঁদের নামের পাশে যে বর্ণনা থাকে, তাতে তাঁদের পরিচয়, কর্ম, কৃতিত্ব প্রভৃতি বিধৃত থাকে। ব্যক্তির নাম সংশ্লিষ্ট জনের একান্ত নিজস্ব এবং অদ্বিতীয় প্রত্যয়। এর অর্থ ওই ব্যক্তিকে প্রকাশের জন্য, চিহ্নিত করার জন্যই কেবল রাখা হয়। তাই কাউকে ‘আপনার নামের অর্থ কী?’ প্রশ্ন করা সমীচীন বলে মনে হয় না। বরং বলা যেতে পারে “আপনার নাম যে শব্দ/ শব্দগুচ্ছ দিয়ে গঠিত সে শব্দ/ শব্দগুচ্ছের অর্থ কী?”

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

মোগল মুগল এবং মুঘল মোঘল: কোনটি শুদ্ধ কোনটি প্রমিত

ড. মোহাম্মদ আমীন

মোগল মুগল এবং মুঘল মোঘল: কোনটি শুদ্ধ কোনটি প্রমিত

মোগল কী? বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, মঙ্গোলিয়া থেকে বাবরের নেতৃত্বে ভারতে আগত সাম্রাজ্য স্থাপনকারী জাতিবিশেষ। একই অভিধানে উল্লেখ আছে, মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীকেও মোগল বলা হয়। অর্থাৎ ‘মোগল’ হচ্ছে মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী বা মঙ্গোলিয়া থেকে আগত ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনকারী একটি জাতি। ভারতে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন : বাবর; তিনি হুমায়ুনের পিতা এবং আকবরের পিতামহ। মঙ্গোলিয়া, পূর্ব এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। যার রাজধানী উলানবাটোর। মঙ্গোলিয়ার উত্তরে রাশিয়া; দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিমে গণচীন। মঙ্গোলিয়ার বেশির ভাগ লোক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

মোগল শব্দটিকে মুগল, মুঘল, মোঘল প্রভৃতি নামে লিখতে দেখা যায়। ইংরেজি বানান (mughal) এর জন্য অনেকে শব্দটিতে ‘ঘ’ ব্যবহার করেন। আসলে কোনটি প্রমিত বানান? বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘মোগল’ই ইংরেজি ‘mughal’ শব্দের একমাত্র প্রমিত বানান। এর কোনো বিকল্প বানান নেই। এই অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত তুর্কি ‘মোগল’ শব্দের অর্থ মঙ্গোলিয়া থেকে বাবরের নেতৃত্বে ভারতে আগত সাম্রাজ্য স্থাপনকারী জাতিবিশেষ এবং মোঙ্গলিয়ার অধিবাসী। এবার ‘মোঙ্গল’ শব্দের অর্থ কী তা দেখা যাক। এবং দেখা যাক, মোগলাই কী জিনিস। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ফারসি ‘মোগল’ শব্দ থেকে ‘মোঙ্গল’ শব্দর উদ্ভব। ‘মোঙ্গল’ হচ্ছে এশিয়ার একটি জাতি। মোঙ্গলিয়ার অধিবাসীদেরও মোঙ্গল বলা হয়।

মোগল ছাড়াও অভিধানে মোগলাই বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়। এর অর্থ: মোগলসুলভ বা মোগলের মতো। ‘মোগলাই’ শব্দের পরে পরোটা বসালে হয় ‘মোগলাই পরোটা’- এ শব্দ জোড়টির সঙ্গে মোগলদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানা যায় না। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে — পুর দেওয়া পরোটা বিশেষ। অনেকে মনে করেন, ‘মোগলাই পরোটা’র সঙ্গে মোগলদের সম্পর্ক আছে। বাবর ডিমের পুর দেওয়া পরোটা খুব পছন্দ করতেন। মোগল দরবারেও মোগলদের রসনায় এই পরোটার একটা ভালো ইজ্জত ছিল।

 উৎস: কোথায় কী লিখবেন বাংলা বানান: প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

 

Leave a Comment

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

ড. মোহাম্মদ আমীন

কথা— ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না: কথার অপর নাম অযথা

১. প্লিজ, আপনার স্ত্রীর নাম্বারটা দিন।

আমার স্ত্রী কি গাড়ি, যে নাম্বার থাকবে?

সরি।

২. মা বললেন, তোমার ডিমটা অনেক্ষণ ধরে টেবিলে পড়ে আছে। ঠান্ডা হয়ে যাবে, খেয়ে নাও।

ছেলে বলল,  ওটা আমার ডিম নয়। 

কার ডিম?

মুরগির ডিম। মানুষ কি ডিম পাড়ে?

সরি।

৩. অনেক দিন পর আমেরিকা থেকে রিং করল জাভেদ, কেমন আছ?

বাংলাদেশ থেকে বন্ধু আরিফ বলল, তুমি ফোন দাও না কেন? ফোন দেওয়ার কথা ছিল না?

ফোন দেব, চিন্তা করো না।

তাহলে একটা আইফোন দিও। আমেরিকায় নাকি আইফোন বেশ সস্তা।

সরি। ফোন নয়, রিং দেব।

রিং মানে আংটি, আংটি দেবে?

না।

ফোন করব।

তাই বলে।

৪. স্বামী বললেন, এত চিল্লাচিল্লি করছ কেন?

স্ত্রী বললেন, তোমার মেয়ের সব মাংস কুকুরে খেয়ে ফেলেছে।

পড়ার রুম থেকে মেয়ে বলল, বাবা, আমার মাংস নয়, গোরুর মাংস।

সরি।

৫. হোটেল বয় বললেন, আপনি গোরু, খাসি, মুরগি না কি মাছ?

ক্রেতা বললেন, আমি গোরু, খাসি, মুরগি-মাছ কিছুই না।

তাহলে আপনি কী?

মানুষ।

বয় বললেন, সরি, স্যার — আমাদের হোটেলে নরমাংস পাওয়া যায় না।

৬. প্রকাশক শ্যামল পালের অফিসে দুপুরের খাওয়ার খাচ্ছিলাম। এক টুকরো মুরগির মাংস আমার পাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, মাংসটা নিন।

ধন্যবাদ, খাব না, আমি বললাম।

খুব স্বাদ পাবেন। শ্যামল পাল বললেন, “আপনার ভাবির হাতের মাংস।

আমি বললাম, আমি ভাবির হাতের মাংস খাই না।

এমন আরও আছে। জানা থাকলে বলুন।

৭. দরজার কড়া নড়ছে – টক টক টক। নিশ্চয় কোনো আগন্তুক।

গৃহস্বামী চিৎকার দিলেন, কে?
আমি, বাহির থেকে আগন্তুকের গলা ভেসে এল।
গৃহস্বামী বললেন,  আমি কে?
 আগন্তুক বললেন, তুমি কে তার আমি কি জানি? 

৮. ভাত খেয়েছ?

 খেয়েছি।

কী দিয়ে খেয়েছ?

হাত দিয়ে ।

আরে ভাই, আমি জানতে চাইছি- মানে কী কী দিয়ে খেয়েছ?

আমার হাত, আমার আঙুল, আমার দাঁত, আমার জিহ্বা – এসব দিয়ে আর কী!

৯.  বাবা বললেন, ওই শোনো ঘণ্টা পড়ে গেছে, তাড়াতাড়ি করো। 

কী পড়ে গেছে?

ঘণ্টা।

ঘণ্টা  পড়ে না, ঘণ্টা বাজে।

সরি।

১০.  নজরুল কোথায়? কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ (১৮৮৯-১৯৭৩) হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে বললেন।

 শৈলজানন্দ বললেন, পায়খানায় গেছে।

নজরুল পেছন থেকে এসে বললেন, পায়খানায় নয়, যায়খানায় গিয়েছি।

এরপর কোথায় যাবে?

পায়খানায়, মানে খাবার টেবিলে। 

কী বলো, এসব?

নজরুল বললেন, যেখানে শরীরের খানা  যায় সেটি পায়খানা আর শরীর যেখানে খানা  সেটি পায়খানা।

১১. আপনি কী করেন?
পাশের সিটে বসা ছেলেটি  বলল, আমি গাই।
ও আপনি গাই! তো কতটুক করে দেন?
কতটুকু করে দিই মানে?
 বললেন আপনি গাই, তাই কতটুক করে দুধ দেন জানতে চাইছি।
আমি গাই মানে,গান করি।

সরি।

১২. বাবা ঢাকা যাবেন।  ছেলে গেছে বাবার জন্য টিকেট আনতে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল ছেলে আসে না।

বাবা বিরক্ত হয়ে মোবাইল করল ছেলেকে, তুমি এখন  কী করছ?

টিকেট কাটছি।

খবরদার, তুমি আমার টিকেট কেটো না।

তোমার  টিকেট যে আমি কেটে ফেলেছি।

হারামজাদা, টিকেট কেটে ফেললে আমি ঢাকা যাব কীভাবে?

১৩. কোথায় যাচ্ছ?

বিয়ে খেতে?

কী খেতে? 

 বিয়ে খেতে।

মানুষ ধান খেতে যায়, পাট খেতে যায়, কচু খেতে যায়, শসা খেতে যায়; বিয়ে খেতে যায় কীভাবে?

এই খেত শস্য খেত নয়। বলছি বিয়ে খবি।

বিয়ে কী করে খাবে?

বিয়ে খাব না।

কী খাবে?

বিয়ের  নেমন্তন্ন খাব।

তাই বলো।

১৪.  তোমার বাবা কোথায়? 

চুল কাটতে গেছেন।

 তোমার বাবা নাপিতগিরি শুরু করল কখন থেকে?

সরি, না মানে – বাবা চুল কাটাতে গেছেন।

তাই বলো।

১৫.   রহিম চেয়ারম্যান  পাড়ার ভবঘুরে ছেলেটাকে থানায় এনে ওসি সাহেবকে বললেন, একে আটকান।

 এ কী করেছে?

নদীতে কুলি ফেলে দিয়েছে, একটা নয়, তিন তিনটা।

ওসি সাহেব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নদীতে কয়টা কুলি ফেলেছ?

তিনটা।

ওরা কোথায়?

নদীর জলে ভেসে গেছে।

তাহলে তোমার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যম্ভাবী। কুলিগুলো নিশ্চয় এতক্ষণে মরে গেছে।

ভবঘুরে জসিম বলল, আমার কুলি মানুষ কুলি নয়।

কী কুলি?

মুখের কুলি।

১৬. আমার কথাটা ধরো। আখেরে লাভ হবে।

কথা কি ধরা যায়?

 ধরলে অনেক কিছু, না ধরলে কিছুই না।

১৭. মজনু তুমি এখন বাজারে যাবে?

হ্যাঁ, বাবা।

এখন যেয়ো না।

কেন?

সূর্যটা এখন তো ঠিক মাথার ওপর।

কই, আমার মাথায়  কোনো সূর্য নেই। বাবা, ইদানীং তুমি বেশ মিথ্যুক হয়ে গেছ।

১৮. হ্যালো !

– হ্যালো !
– সরি, দোস্ত, মনে হয় রিং করে ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম।
ঘুম কি  ভঙ্গুর কাচের পাত্র যে, ভেঙে যাবে। 

১৯. স্যার, ঘণ্টা পড়ে গেছে। 

ঘণ্টা কী সিঁদুর গাছে আম যে, পড়ে যাবে। বলো, ঘণ্টা বেজেছে ।

 

 ২০. বাবা: তাড়াতাড়ি খেয়ে পড়ার টেবিলে বোসো।

ছেলে: টেবিলে কি বসা যায়?
২১. অনেক হয়েছে, এবার ঘুমিয়ে পড়ো।
ঘুমিয়ে কি পড়া যায়?
২২. ধরো x=৫ y=৬।।
এগুলো কীভঅবে ধরব?
২৩. আজানা পড়েছে।
কোথায় পড়েছে?

Leave a Comment

মার্কিন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন শব্দের উদ্ভব

 ড. মোহাম্মদ আমীন

মার্কিন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন শব্দের উদ্ভব 

ইউনাইটেড্ স্টেইটস অফ্ আমেরিকা (United States of America ) বা সংক্ষেপে ইউনাইটেড স্টেটস বা ইউ.এস (US) বা ইউএসএ (USA) নামে পরিচিত উত্তর আমেরিকার দেশটি ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’ বা শুধু ‘যুক্তরাষ্ট্র’ নামে পরিচিত। ১৫০৭ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান মানচিত্রকর মার্টিন ওয়াল্ডসিম্যুলার বিশ্বের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। ওই মানচিত্রে তিনি ইতালীয় আবিষ্কারক ও মানচিত্রকর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে পশ্চিম গোলার্ধের নামকরণ করেন “আমেরিকা”। অর্থাৎ আমেরিকা হচ্ছে একজন ব্যক্তির নাম।

১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই “unanimous Declaration of the thirteen united States of America” নামের একটি ঘোষণাপত্র “Representatives of the united

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

States of America” কর্তৃক গৃহীত হয়। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসে আর্টিকলস অফ কনফেডারেশন বিধিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ‘আমেরিকা’ নামটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। এই আর্টিকেলে বলা হয়েছে: “The Stile of this Confederacy shall be ‘The United States of America.'” সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে the United States নামটি প্রামাণ্য। অন্যান্য প্রচলিত নামগুলো হচ্ছে : the U.S., the USA, ও America। দেশটির কথ্য নামগুলো হলো the U.S. of A. ও the States।

আমরা দেখলাম, ব্যক্তিনাম ‘আমেরিকা’ থেকে দেশটির নাম চয়িত হয়েছে। কিন্তু ‘আমেরিকা’ নামটি কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় ‘মার্কিন’ হয়ে গেল তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আমেরিকান শব্দটি ইংরেজি American হতে উদ্ভূত একটি স্থাননাম। গবেষণায় দেখা যায়, আমেরিকান শব্দের ‘আ’ ঝরে গিয়ে ষোড়শ শতক থেকে শব্দটি মেরিকান’ রূপে উচ্চারিত হতে থাকে। যার অপভ্রংশ হচ্ছে মার্কিন Markin. এটি এখন বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। এবার বাংলায় মার্কিন শব্দের অর্থ কী তা দেখা যাক।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে স্থাননাম হিসেবে শ্রেণিকৃত  ‘মার্কিন’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে  : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত কোরা সুতোর তৈরি মোটা কাপড়বিশেষ প্রভৃতি। অন্যদিকে বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হলে ‘মার্কিন’ শব্দটির অর্থ হয় : যুক্তরাষ্ট্র সম্বন্ধীয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত প্রভৃতি।  অভিধানে স্থাননাম হিসেবে চিহ্নিত হলেও আমেরিকা বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র  প্রকাশে ‘মার্কিন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। 

 দেশনাম হিসেবে মার্কিন শব্দটি এককভাবে ব্যবহৃত না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে। ফলে সে এখন বাংলায় আমেরিকার মতোই প্রভাবশালী একটি শব্দ।  যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় ৯৮.৩ লাখ বর্গকিলোমিটার (৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল) এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪০ কোটি।  সামগ্রিক আয়তনের হিসেবে এটি বিশ্বের তৃতীয় বা চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। আবার স্থলভূমির আয়তন ও জনসংখ্যার হিসেবে  বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং প্রভাবশালী দেশ। বিশ্বে এমন লোক খুব কম আছেন যিনি আমেরিকা চেনেন না  বা ‘আমেরিকা’ নাম শুনেননি। প্রসঙ্গত, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, মার্কিনদেশ শব্দের অর্থ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিনি অর্থ আমেরিকার অধিবাসী বা ওই দেশ উৎপাদিত কাপড়। 

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

#subach

Leave a Comment

পোস্ট: পোস্ট শব্দের বাংলা: ফেসবুক পোস্ট শব্দের বাংলা

ড. মোহাম্মদ আমীন

পোস্ট: পোস্ট শব্দের বাংলা: ফেসবুক পোস্ট শব্দের বাংলা

ফেসবুকে পোস্ট হিসেবে যেসব লেখা, চিত্র, অডিও-ভিডি বা অন্যকিছু প্রকাশ করা হয় সেটার বাংলা কী অনেকে জানেন না। ইংরেজি পোস্ট (post) শব্দ দিয়ে তা প্রকাশ করা হয়। অথচ ফেসবুকে ব্যবহৃত ইংরেজি ‘পোস্ট’ শব্দের একটি সুন্দর বাংলা আছে- যা ইংরেজি পোস্ট শব্দের চেয়ে অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট, কার্যকর অর্থদ্যোতক, শ্রুতিমধুর এব সহজ। শব্দটি হচ্ছে : যযাতি।

ইংরেজি post শব্দের অর্থ ডাকঘর, খাম, আসন, কর্মচারীর পদ, ডাকগাড়ি, গঁজ, বাণিজ্যস্থল, কর্মচারীর চাকুরি, নির্দিষ্ট খানা, নির্দিষ্ট অবস্থানস্থল, আড্ডায় স্থাপন

ড. মোহাম্মদ আমীন

করা, ডাকঘরে দেওয়া, ডাকব্যবস্থা, ডাকবক্স, ত্বরা, পিছনে, পরে, পত্র প্রেরণ করা প্রভৃতি ছাড়াও আরও অনেক কিছু হতে পারে। কিন্তু যযাতি শব্দের অর্থ অনেক সুনির্দিষ্ট এবং ব্যুৎপত্তি বিবেচনায় বেশ প্রাসঙ্গিক। বাংলার অনেক শব্দের মতো ‘যযাতি’ শব্দটিও ভারতীয় পুরাণ থেকে প্রাসঙ্গিক ঘটনার অনুকূল পরিক্রমায় সৃষ্ট একটি অর্থবহুল শব্দ। এখন ‘যযাতি’ শব্দটি কীভাবে সৃষ্টি হলো এবং কেনই বা ফেসবুক প্রসঙ্গে ইংরেজি ‘পোস্ট’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘যযাতি’ হলো তা বিশ্লেষণ করা যাক :

ভরতীয় পুরাণ শব্দটির উৎস। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– চন্দ্র বংশের মহারাজা ‘যযাতি’  হচ্ছেন নহুষের পুত্র এবং পাণ্ডবদের অন্যতম আদিপুরুষ। যযাতির দুই স্ত্রীর ছিল- দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী ও দৈত্যরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা। দেবযানীর অজ্ঞাতে যযাতি শর্মিষ্ঠার সঙ্গে মিলিত হন।  বিষয়টি দেবযানী শুক্রাচার্যকে বলে দেন। শুক্রাচার্যের অভিশাপে যযাতি অকালে জরাগ্রস্থ বা নপুংসক হয়ে যান। চার পুত্রের মধ্যে শুধু কনিষ্ঠ পুত্র যযাতির জরা নিতে রাজি হলেন। পুরুকে জরা দিয়ে যযাতি সহস্র বছর যাবৎ ভোগ, প্রজাপালন এবং ধর্ম-কর্ম করলেন। তারপর পুরুকে রাজত্ব দিয়ে বনবাসে চলে গেলেন। সেখান থেকে কিছুকাল পরে সুরলোকে গমন করলেন।

সুরলোকে থাকাকালীন আত্মপ্রসংসা করায় ইন্দ্রের আজ্ঞায় তিনি স্বর্গচ্যূত হন। তবে, ভূতলে না পরে যযাতি কিছুকাল অন্তরীক্ষে অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমান বা বসুমনা ও শিবি – এই চারজন রাজর্ষির সঙ্গে বিবিধ ধর্মালাপ করে কালাতিপাত করতে থাকেন।তাঁরা সবাই ছিলেন যযাতির কন্যা মাধবীর পুত্র। ধর্মালোচনা কালে মাধবী ও গালব মুনি এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন এবং সকলে নিজেদের তপস্যার কিছু ভাগ যযাতিকে দান করায় তিনি আবার স্বর্গে ফিরে যেতে পারলেন। কথিত হয়, তাদের এই অবস্থান ছিল আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারের আন্তরীক্ষক ক্ষেত্র। তাদের চিন্তাভাবনা বা ধর্মালাপ কোনো কঠিন বস্তুতে লিখিত হতো না। এগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে অন্তরীক্ষে লিখিত হতো এবং যযাতি বিশেষ কৌশলে লেখাগুলোকে প্রয়োজনীয় চিহ্নাদি-সহ  অন্তরীক্ষেই সংরক্ষিত করে রাখতেন। এখান থেকে তিনি তার প্রার্থনা এবং সম্মিলিতি ধর্মীয় ভাবনা স্বর্গালোকে প্রেরণ করতেন। যযাতির চিন্তা, ধর্মালাপ ও লেখা স্বর্গালোকে প্রেরণকে সাধারণভাবে বলা হতো- যযাতি।

অন্তরীক্ষ অনুকূল হলে যখনই ইচ্ছা তখনই যযাতি, অন্তরীক্ষে বসবাসকারী রাজর্ষিবর্গ এবং এমনকি স্বর্গমত্যের অনেকেও ওই লেখা দেখতে পেতেন। অন্তরীক্ষে সম্পাদিত যযাতির  লেখালেখি এবং তা সংরক্ষণ ও পরিশেষে যযাতির স্বর্গারোহণের সঙ্গে বর্তমান ফেসবুক-সহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদত্ত পোস্ট-এর মিল থাকায় বাংলায় এর নাম করা হয়েছে যযাতি।

#subach

Leave a Comment

নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে

ড. মোহাম্মদ আমীন

নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে

নিথুয়া শব্দের অর্থ কী? শব্দের অর্থ বলা কঠিন। কেননা, বাক্যে বসে কোনো শব্দ পদে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত তার অর্থ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কেননা, বাক্যই শব্দের প্রায়োগিক রূপ তথা পদের অর্থকে পদার্থে গিয়ে সুনির্দিষ্ট করে দেয়। সর্ববোধ্য ও বহুল প্রচলিত ‘বলি’ শব্দ দিয়ে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া যায় : “বুড়ো বলীর বলি দেখে বলি/ জীবনটা বলি ছেড়া, সময়ের বলি।”

ছড়ার লাইন দুটোয় একটি ‘বলী’ ও চারটি ‘বলি’ আছে। এবার দেখুন এদের অর্থ- প্রথম বলী শব্দের অর্থ: বলবান বা শক্তিশালী; দ্বিতীয় বলি শব্দের অর্থ: চামড়ার

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

কুঞ্চন রেখা; তৃতীয় বলি শব্দের অর্থ; বলা, উচ্চারণ করা; চতুর্থ বলি শব্দের অর্থ: কানের মাকড়ি বা অলঙ্কার এবং পঞ্চম বলি শব্দের অর্থ: যজ্ঞাদিতে নিবেদনযোগ্য বস্তু বা হত্যাযোগ্য জন্তু। সুতরাং, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে ‘বলি’ অর্থ কী, তো আমি কী জবাব দেব? সেক্ষেত্রে প্রশ্নকর্তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সবগুলো অর্থ বলে যেতে হবে। অতএব, একটা বিষয় পরিষ্কার যে, শব্দের সুনির্দিষ্ট অর্থ জানতে হলে তা বাক্যসহ উপস্থাপন বাঞ্ছনীয়। কারণ পদের অর্থ সুনিদিষ্ট, শব্দের অর্থ নয়। একটি শব্দ বাক্যে বসে অনেক অর্থে দ্যোতিত হতে পারে। শব্দকে একটি ধাতু (যেমন লোহা) হিসেবে কল্পনা করুন। একটি ধাতু দিয়ে অনেক বস্তু তৈরি করা যায়; কিন্তু পদ হচ্ছে ওই ধাতু দিয়ে তৈরি নির্দিষ্ট কোনো বস্তু। এবার নিথুয়া শব্দের প্রয়োগ-সাপেক্ষে অর্থ কী দেখা যাক। কবি লিখেছেন এবং গায়ক গেয়েছেন:

“নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে
ধর বন্ধু আমার কেহ নাই
তোল বন্ধু আমার কেহ নাই
চিকনো ধুতিখানি পরিতে না জানি
না জানি বান্ধিতে কেশ,
অল্প বয়সে পিরীতি করিয়া
হয়ে গেল জীবনেরও শেষ
প্রেমেরও মুরলি বাজাতে নাহি জানি
না পারি বান্ধিতে সুর।”

এবার এই গানে বর্ণিত ‘নিথুয়া’ শব্দের অর্থ কী দেখে নিই। ‘’নিথুয়া শব্দটি বাংলা একাডেমির কোনো অভিধানে নেই। হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থেও পাইনি। বিশ্বনাথ জোয়ারদারের ‘অচলন্তিকা’তেও  দেখলাম না। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বাংলা একাডেমী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান গ্রন্থেও শব্দটি স্থান পায়নি। অথচ, এটি তত অপরিচিত শব্দ নয়। ধারণা করা হয় ‘নিথুয়া’ একটি বহুল প্রচলিত আঞ্চলিক শব্দ, কালক্রমে যার ব্যবহার বিরল হয়ে গিয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সংগ্রামমুখর জীবনে অথই, নিথুই, নিথুয়া, নিদয়, নিধুয়া শব্দসমূহ লোকগীতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছেও বহুল পরিচিত ছিল। ‘নিথুয়া’ শব্দটি এসব শব্দেরই প্রতিনিধি।

অনেকগুলো প্রাচীন অভিধান ও গ্রন্থ  ঘেঁটে আমি যে সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, তা হচ্ছে – “থুয়ে (থুয়ে : অক্রি রেখে) থেকে থুয়া শব্দের উদ্ভব। এ থুয়া শব্দের সঙ্গে ‘নি-’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে নিথুয়া (নি+থই+আ>নিথুয়া ) নিতুয়া বা নিধুয়া শব্দ গঠিত হয়েছে। এর সম্প্রসারিত এবং প্রায়োগিক অর্থ : যে কোনো কিছু থুয়ে (রেখে) যায় না, যার পেটে পতিত হলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে না, বিশাল নির্জন প্রান্তর, নিষ্ঠুর, সর্বনাশা, যার ক্ষুধার অন্ত নেই, ভয়ের স্থান প্রভৃতি। আবার এও মনে করা হয়, নিষ্ঠুর অর্থে ব্যবহৃত আঞ্চলিক ‘নিদয়’ শব্দ থেকে ‘নিথয়/নিতয়/’ এবং তা থেকে ‘নিথুয়া/নিতুয়া, নিধুয়া’ শব্দের উদ্ভব। যার অর্থও নিথুয়া শব্দের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। আর একটি উৎস হতে পাওয়া যায়, ‘থই’ শব্দের সঙ্গে ‘নি-’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘নিথই’ এবং তা থেকে ‘নিথুয়া/নিধুয়া’ শব্দের উদ্ভব। সেক্ষেত্রে ‘নিথুয়া’ শব্দের অর্থ হয় অথই, তলহীন, অতল প্রভৃতি। দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় দেখতে পাই, ‘নিথুয়া’ শব্দের অর্থ নেই থই যার এবং প্রথম ব্যাখ্যায় পাই ‘নিথুয়া’ অর্থ থুয়ে না যাওয়া। অনেকে মনে করেন, শব্দটির বানান ‘নিতুয়া’, যেটিই হোক- অর্থ কিন্তু অভিন্ন। এবার গানের কথার সঙ্গে এবার অর্থগুলো মিলিয়ে নিতে পারি:

নিথুয়া পাথারে, নেমেছি বন্ধুরে
ধরো বন্ধু আমার কেহ নাই।
তোল বন্ধু আমার কেহ নাই।
অর্থাৎ আমি অথই/ নিষ্ঠুর/তলহীন সাগরে/ জনমানবহীন প্রান্তরে নেমেছি/পড়েছি, বন্ধু আমাকে ধরো, সাহায্য করো আমার কেউ নেই, বন্ধু আমাকে তোলো (আমি ডুবে যাচ্ছি/ আমি হারিয়ে যাচ্ছি), আমার একমাত্র ভরসা তুমি, আমার ( একমাত্র তুমি ছাড়া) কেউ নেই।

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

#subach

Leave a Comment