ড. মোহাম্মদ আমীন
র্যাংকিঙে বর্তমান স্থান যাই হোক না, অক্সফোর্ড-এর মর্যাদা এখনো অতুলনীয়। একাদশ শতকে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ইংলিশভাষীর জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত চারজন ইংরেজ রাজা, আটজন বিদেশি রাজা, ৪৯ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ২৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ২৮ জন বিদেশি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, সাতজন সেইন্ট, ১৯ জন কার্ডিনাল এবং ১ জন পোপ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তাই ঐতিহ্যিক গাম্ভীর্যের দিক থেকে অক্সফোর্ড এখনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাকর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। মোটামুটি অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ও ভর্তি-নির্ধারিত বিষয়ে ভালো জ্ঞান এবং ইংজিতে দক্ষ হলে সহজে অক্সফোর্ডে ভর্তি হওয়ার ইন্টারভিউতে পাস করা যায়। প্রসঙ্গত, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তির ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত অর্জনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় কিন্তু অক্সফোর্ডে এর কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় ন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল একাডেমিক ফল এবং ইংরেজি অভিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অক্সফোর্ডে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ২৫ জন বাংলাদেশি এবং ৪১১ জন ভারতীয় অধ্যয়ন করছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো কলেজের সমন্বয়ে গঠিত। তন্মধ্যে ৩৫টি কলেজে এইচএসসি পাস করার পর আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে পড়ার জন্য আবেদন করা যায়। কলেজগুলোর নাম, ঠিকানা এবং শর্তাদি গুগুল হতে জানা যাবে। আবেদন করতে হবে নির্দিষ্ট কলেজে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি আবেদন করা যায় না। তবে পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক বিষয়াদি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে।
প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে বিষয়। তারপর অক্সফোর্ডের অধীন কোন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নির্ধারিত বিষয়টি পড়ানো হয় তা দেখতে হবে। মনে করুন, আপনি অর্থনীতি শাস্ত্রে অধ্যয়ন করতে চান। অনেকগুলো কলেজে অর্থনীতি পড়ানো হয়। সেগুলো থেকে পছন্দের কলেজটি বেছে নেবেন। প্রতিটি কলেজে বিষয়ভিত্তিক আসন নির্ধারিত থাকে। তাই নির্ধারিত যে কলেজে ভর্তির আবেদন করবেন কেবল সে কলেজে ওই বিষয়ে ভর্তীচ্ছুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। কিছু কিছু কলেজ আছে যেগুলোয় অধ্যয়ন অত্যন্ত মর্যদাপূর্ণ। সেসব কলেজে প্রতিযোগিতা খুব বেশি হয়। তাই ভর্তির সম্ভাবনাকে অধিকতর নিশ্চিত করার জন্য কম প্রতিযোগিতামূলক কলেজে ভর্তির আবেদন করা সমীচীন। পছন্দের বিষয়টি কোন কোন কলেজে পড়া যাবে তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
অক্সফোর্ডের অধীন কলেজে ভর্তির আবেদন করবেন UCAS- এর মাধ্যমে। UCAS- সাইটে আবেদন ফরম এবং নিয়মাবলী আছে। অক্সফোর্ডে আবেদন করার সময় সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। তাই আবেদনে ইচ্ছুক হলে পূর্ব থেকে IELTS দিয়ে দিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকা আবশ্যক। একটা বিষয়, বাংলাদেশের এইচএসসি-কে যু্ক্তরাজ্যে A Level এর সমমান ধরা হয় না। তাই SAT দিতে হয়। যারা এইচএসসি দিয়ে অক্সফোর্ডে ভর্তি হতে চান তাদের উচিত হবে পছন্দের বিষয়, কলেজ প্রভৃতি নির্ধারণপূর্বক ভর্তির শর্তাদি জেনে নেওয়া এবং সেপ্টেম্বর মাসের আগে SAT দিয়ে দেওয়া। অনলাইন থেকে SAT- বিষয়ে জানা যাবে। SAT পরীক্ষা হবে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে। বাংলাদেশিরা বাংলাদেশে থেকে এ পরীক্ষা দিতে পারবেন। পছন্দের বিষয়ের জন্য অতিরিক্তি অন্য কোনো পরীক্ষা দেয়া আবশ্যক কি না তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করতে পারেন।
এতদূর যদি পৌঁছতে পারলে আপনি ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। ইন্টারভিউতে কী রকম প্রশ্ন করা হয় তা গুগুল সার্চ করে সহজে জেনে নেওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে নির্ধারিত বিষয়ে এইচএসসি পর্যায়ে তথা এ- লেভেলে বিশ্বমানের জ্ঞান এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অপরিহার্য। ওভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। ইন্টারভিউতে পাস করার পর সংশ্লিষ্ট কলেজের ওয়েব সাইটে গিয়ে কী কী স্কলারশিপ ওই কলেজ দিচ্ছে তা জেনে নিয়ে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। স্কলারশিপ পেলে টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া এবং বিমান ভাড়ার টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
আবেদন করার যোগ্যতা:
ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। থাকতে হবে।
শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে দ্বিতীয় বিভাগ থাকলে আবেদন করা যাবে না। অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।
শারিরীকভাবে সুস্থ হতে হবে ।
যুক্তরাজ্যে গিয়ে অধ্যয়নের মানসিকতা থাকতে হবে।
অধ্যয়ন শেষে স্বদেশে ফিরে আসতে হবে।
আর একটা কথা, ভর্তি হওয়ার আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ আপনার আর্থিক সামর্থ্য দেখতে চাইবে। এজন্য দেখাতে হবে, ব্যাংকে বেশ মোটা অংকের অর্থ জমা আছে। কারণ এখানে টিউশন ফি বাবদ খরচ হতে পারে আনুমানিক ২৮ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ টাকা।এছাড়া খাওয়াদাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। অতএব ভর্তি হওয়ার পর স্কলারশিপ না পেলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য আছে কি না তা চিন্তা করে পদক্ষেপ গ্রহণ উচিত। অক্সফোর্ডের টিউশন ফি বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম। ক্যামব্রিজে টিউশন ফি ৩০ হাজার ডলার, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির টিউশন ফি ৫০ হাজার ডলার। কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ৩২ হাজার ডলার। জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মাত্র ১২৪ মার্কিন ডলার।
লেখক : প্রভাষক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ক্রিস্ট চার্চ কলেজ।