অতৎসম চীনা অসংগত নয়, অতৎসম ঈদ অসংগত হবে কেন
সংযোগ: https://draminbd.com/অতৎসম-চীনা-অসংগত-নয়-অতৎসম/
চিন না কি চীন? চিনদেশ না কি চীনদেশ? পত্রপত্রিকা ও বইপত্রে কমবেশি উভয় বানান দেখা যায়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান এবং অন্যান্য আরও অনেক অভিধানমতে চীন সংস্কৃত শব্দ। তবে, শব্দটির আদি উৎস বা মূল সংস্কৃত ছিল না। গবেষণায় দেখা যায়— শব্দটি
আনুমানিক আড়াই হাজার বছর আগে চায়না থেকে সংস্কৃত ভাষায় ঢুকে সংস্কৃত ভাষার শব্দের ন্যায় সংস্কৃতে অঙ্গীভূত/একীভূত হয়ে গেছে। ফলে তা সংস্কৃত শব্দ গণ্যে সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুগত হয়ে পড়ে। বলা হয়— শব্দটি সংস্কৃতে যখন আসে তখনই চীন নামে প্রতিবর্ণীকৃত হয়। প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থেও শব্দটির বানান ঈ-কার দিয়ে চীন লেখা— এমন দেখা যায়। মনুসংহিতা এবং মহাভারতে শব্দটির বানান করা হয়েছে চীনা। সংস্কৃতে মিহি পশমি বস্ত্রকে চীনাংশুক বলা হতো। চীনাংশুক আসত চীন থেকে, তাই এমন নাম। প্রাচীনকালে চীনদেশের রেশম বিশ্বখ্যাত ছিল। সিল্করুট তার ঐতিহাসিক প্রমাণ। চীন ও অংশুক মিলে চীনাংশুক। অংশুক অর্থ আঁশযুক্ত তন্তু, অতি চিকন রেশম, অতি সূক্ষ্ণ পশম প্রভৃতি। অংশু অর্থ সূর্য, সূর্যের কিরণ। অতি মমৃণ বলে চীনা তন্তুকে সূর্যের কিরণের সঙ্গে তুলনা করা হতো। তাই সূর্য কিরণের মসৃণতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চীনাংশুক শব্দটির উদ্ভব। অংশুক শব্দের সঙ্গে চীন সন্ধিবদ্ধ হয়ে গঠন করে চীনাংশুক (=চীন+অংশুক)।
এবার দেখা যাক, আমাদের কাছে বাংলা বানানে চীনদেশ নামে পরিচিত দেশটির নাম চিন হলো কী করে। বিখ্যাত চৈনিক ভাষাবিদ থান য়ুন শানের মতে, নামটি এসেছে তৎকালীন বর্তমান মূল চীনের একটি করদ রাজ্য থেকে। স্থানীয় ভাষায় করদ রাজ্যটির নাম ছিল চিন। চৌ বংশের রাজত্বকালে চিন নামের করদ রাজ্যটি শক্তিশালী হয়ে আশেপাশের অন্যান্য রাজ্যগুলো একে একে জয় করে খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতকের প্রথমে
বিশাল এক রাজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে যায়। প্রাক্তন এই অঙ্গরাজ্য থেকে পুরো দেশের নাম রাখা হয় চিন বা জিং। সে হিসেবে নামটির বানান চিন হওয়াই ছিল সমীচীন। কিন্তু সংস্কৃতে অঙ্গীভূত করার সময় প্রতিবর্ণীকরণে চীন লেখা হয়।
এর ভাষায় বলা যায়, “আপনি-আমি শুরু করলেই সংগততর ‘ইদ’ বানানটি প্রচলিত হতে শুরু করবে।” শব্দটির বাংলা বানান নিয়ে বির্তকের এক পর্যায়ে একাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী শুবাচি জনাব Minha Siddika মন্তব্য করেছেন : “আমাদের ঐকমত্য দূরহ বিষয়, যে কোনো ক্ষেত্রে।।” অনুজ/উত্তরসুরীদের এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের করে আনার দায়িত্ব আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।