অপভ্রংশ হলো— মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষার অর্থাৎ, প্রাকৃত ও পালি ভাষার পরবর্তী ধাপ। অন্যভাবে বলা যায়— মধ্যভারতীয় আর্যভাষা পালি-প্রাকৃতের শেষ স্তরই হলো অপভ্রংশ।অপভ্রংশ ভাষার কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে খ্রিস্টীয় ১৭শ অব্দ পর্যন্ত। এ ভাষা নিম্নশ্রেণীর লোকদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। ‘অপশব্দ’ বা ‘অপভ্রষ্ট’ শব্দ থেকে অপভ্রংশ শব্দের উদ্ভব।
সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘অপভ্রংশ’ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত কিছু অশিষ্ট শব্দকে নির্দেশড. মোহাম্মদ আমীন
করার জন্য অপভ্রংশ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। পতঞ্জলি যাকে অপভ্রংশ বলতেন, বর্তমানে তা— পালি ও প্রাকৃত ভাষা নামে পরিচিত।
আধুনিক বৈয়াকরণগণের সর্বসম্মত অভিমত— “সকল প্রাকৃত ভাষারই শেষস্তর অপভ্রংশ, যা থেকে বিভিন্ন নব্যভারতীয় আর্যভাষার উৎপত্তি হয়েছে।” এই মতবাদ অনুযায়ী পূর্বভারতে প্রচলিত মাগধী প্রাকৃত থেকে পূর্বী অপভ্রংশ; তা থেকে ভোজপুরী, মগহী ও মৈথিলী— এ তিন বিহারী ভাষা এবং বাংলা, অসমীয়া ও উড়িয়া— এ তিন গৌড়ীয় ভাষার উদ্ভব ঘটে। অন্যদিকে, পশ্চিমা শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে সৃষ্টি হয়— হিন্দি প্রভৃতি ভাষা।
অপভ্রংশ ভাষার অধিকাংশ গ্রন্থই জৈনদের দ্বারা রচিত। তাঁরা বিভিন্ন চরিতকাব্য, নীতিকাব্য, কথানক কাব্য, এমনকি জৈনদর্শন পর্যন্ত অপভ্রংশ ভাষায় রচনা করেছেন। চরিতকাব্যের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন স্বয়ম্ভূদেবের (৭ম/৮ম শতক) পউমচরিউ। এতে ৫৬টি সন্ধি এবং ১২,০০০ শ্লোকে রামচন্দ্রের কাহিনি বিধৃত। এ ছাড়া ধাহিলের (বা দাহিলের) পউমসিরিচরিউ (১০ম শতক), পুষ্পদন্তের (১০ম শতক) মহাপুরাণ, জসহরচরিউ ও নয়কুমারচরিউ, হরিভদ্রের নেমিণাহচরিউ (১১৫৯ খ্রি), পদ্মকীর্তির পার্শ্বপুরাণ (১৪শ শতক) ইত্যাদি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিতকাব্য। মহাভারতের কৃষ্ণ-বলরাম এবং কুরু-পাণ্ডবের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ধবলকবির হরিবংশপুরাণ।
জৈনদের এসব গ্রন্থা পশ্চিমী ও দক্ষিণী অপভ্রংশে রচিত। পূর্বী অপভ্রংশে যাঁরা সাহিত্যচর্চা করেছেন তাঁরা ছিলেন মূলত বাঙালি বৌদ্ধ। তাঁদের মধ্যে কাহ্নপা (৭ম শতক), সরহপা (১০ম শতক) প্রমুখ অন্যতম। কাহ্নপা ও সরহপার দোঁহাকোষ সাধনসংকেতমূলক গ্রন্থ। এটি উপদেশাত্মক হলেও এতে প্রভূত কবিত্বশক্তির নিদর্শন আছে। ডাকার্ণবতন্ত্রও এ শ্রেণির গ্রন্থ। এঁরাই প্রথম কবিতায় অন্ত্যমিল বা অন্ত্যানুপ্রাসের প্রচলন করেন এবং এখান থেকেই দেশীয় ভাষার ছন্দে মিলের উদ্ভব ঘটে। পিঙ্গলাচার্যের (আনু. ১৪শ শতক) প্রাকৃতপৈঙ্গল এবং বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতির (১৫শ শতক) কীর্তিলতা পূর্বী অপভ্রংশের আরও দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ। প্রাকৃতপৈঙ্গলে মাত্রাবৃত্ত ও বর্ণবৃত্ত উভয় জাতীয় ছন্দেরই আলোচনা আছে। পিঙ্গল উদাহরণসহ যেসব ছন্দের আলোচনা করেছেন সে সবের মধ্যে মাত্রাবৃত্তে গাহা, বিগ্গাহা, উগ্গাহা, দোঁহা, রোলা, ছপ্পঅ, কববলক্খণ, দোঅই (দ্বিপদী) প্রভৃতি এবং বর্ণবৃত্তে পঞ্চাল, মন্দর, মালতী, মল্লিকা, রূপমালা, তোটক, চাসর, চ্চচরী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
To provide the best experiences, we use technologies like cookies to store and/or access device information. Consenting to these technologies will allow us to process data such as browsing behavior or unique IDs on this site. Not consenting or withdrawing consent, may adversely affect certain features and functions.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.