ড. মোহাম্মদ আমীন
অশ্বমেধ প্রাচীন ভারতের অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ কঠিন একটি যজ্ঞ। শ্রেষ্ঠ রাজাগণ পুত্রলাভ বা রাজচক্রবর্তী হয়ে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এ যজ্ঞ সম্পন্ন করতেন। নিরানব্বইটি যজ্ঞ করার পর অতি সুলক্ষণযুক্ত অতি দুর্লভ ক্ষমতা ও মোহনীয় দেহাবয়বের অধিকারী প্রচণ্ড বেগবান এবং সুগন্ধযুক্ত অশ্বের কপালে জয়পত্র বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হতো। ওই অশ্বের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজা সসৈন্যে অশ্বের অনুগামী হতেন। অশ্ব বছরকাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করত। অশ্বের অগ্রগতি কোনো রাজা রোধ করতে এলে প্রমাণ হতো যে, তিনি অশ্বাধিকারীর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেন না। তখন যুদ্ধের মাধ্যমে উভয়ের শক্তি পরীক্ষা হতো। ভিন্ন রাজ্যে অশ্ব প্রবেশ করলে সে রাজ্যের রাজাকে যুদ্ধ করতে হতো অথবা অশ্বাধিকারীর বশ্যতা স্বীকার করে নিতে হতো। এভাবে অশ্বের অধিকারী রাজা অন্য সব রাজাকে বশ্যতা স্বীকার করাতে পারলে মহাসম্মানসূচক ‘রাজচক্রবর্তী’ উপাধি লাভ করতেন।
এক বছর পর অশ্ব দেশে ফেরত আসার পর শাস্ত্রানুসারে যজ্ঞের আয়োজন শুরু করা হতো। যূপবদ্ধ অশ্বটিকে শাস্ত্রমতে ব্রাহ্মণগণ বধ করতেন। রাতে রাজপত্নীবর্গ অশ্বের মৃতদেহ রক্ষা করতেন। অশ্বের বক্ষঃস্থলের চর্বি আগুনে দগ্ধ করে যজ্ঞ-দীক্ষিত রাজা ধূম আঘ্রাণ করতেন। অশ্বদেহের অন্যান্য অংশ অগ্নিতে আহুতি দিয়ে হোম করা হতো। যজ্ঞ শেষে ব্রাহ্মণদের নানা দক্ষিণা এবং নিমন্ত্রিত নৃপতি ও অন্যান্য অতিথিগণকে যথাযোগ্য উপহার দিয়ে বিদায় করা হতো।
হিন্দুধর্মে বিশ্বাস, এ যজ্ঞের ফলে যজ্ঞকারীর সর্বপ্রকার পাপ ক্ষয় হয় এবং তিনি স্বর্গ ও মোক্ষ লাভ করেন। শত অশ্বমেধযজ্ঞকারী রাজা ইন্দ্রত্ব লাভ করতেন। এজন্য ইন্দ্রের আর এক নাম শতক্রতু। রামচন্দ্র ও যুধিষ্ঠির উভয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত অশ্বমেধ (অশ্ব+মেধ) অর্থ (বিশেষ্যে) যে যজ্ঞে অশ্ব বলি দেওয়া হয়, পৌরাণিক নৃপতিদের ঘোড়া বলিদানের যজ্ঞ।
সূত্র: পৌরাণিক শব্দের উৎসকথন ও ক্রম বিবর্তন অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন।