ড. মোহাম্মদ আমীন
অ্যাঙ্গোলা (Angola)
অ্যাঙ্গোলা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম রিপাবলিক অব অ্যাঙ্গোলা। আয়তন বিবেচনায় এটি আফ্রিকা মহাদেশের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। এর দক্ষিণে নামিবিয়া, উত্তরে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, পূর্বে জাম্বিয়া এবং পশ্চিমে আটলান্টিক সাগর। অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে রিপাবলিক অব কঙ্গো ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর এক্সক্লেভ প্রভিন্স ক্যাবিন্ডার সীমান্তও রয়েছে। লুয়ান্ডা এর রাজধানী।
অ্যাঙ্গোলা নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা কিংবদন্তী রয়েছে। অ্যাঙ্গোলা শব্দের অর্থ নডোঙ্গোর দেশ বা খধহফ ড়ভ ঘফড়হমড়। পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক নাম রেইনো ডি এঙ্গোলা হতে এঙ্গোলা নামের উদ্ভব। এর অর্থ কিংডম অব অ্যাঙ্গোলা বা অ্যাঙ্গোলা রাজ্য। ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধে পর্তুগিজ নাবিক ডাম্বি কোয়ান্জা নদী ও লুকালা নদীর মাঝখানে অবস্থিত এ উর্বর ভূমিটি দখল করে নেন। পর্তুগিজ নাবিক ডাম্বি স্থানীয় রাজা নডোঙ্গার পদবি নগোলা হতে নামটি গ্রহণ করেন। ঘফড়হমড় এর রাজ্য কোয়ানজা ও লুকালা নদীর মধ্যবর্তী একটি উর্বর উঁচুভূমিতে অবস্থিত ছিল। এটিই পর্তুগিজরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট হতে দখল করে নিয়েছিল। নগোলা অর্থ চিফ স্মিথ বা রাজা বা যাজক।
অ্যাঙ্গোলার মোট আয়তন ১২,৪৬,৭০০ বর্গকিলোমিটার বা ৪,৮১.৩৫৪ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ প্রায় শূণ্য। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে অ্যাঙ্গোলার জনসংখ্যা ২,৪৩,৮৩,৩০১ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার ৩৮.৪ জন লোক বাস করে। আয়তন বিবেচনায় অ্যাঙ্গোলা পৃথিবীর ২৩-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ১৯৯-তম জনবহুল দেশ।
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, অ্যাঙ্গোলার জিডিপি (পিপিপি) ১৩৯.০৫৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার (৬৪-তম) এবং মাথাপিছু আয় ৬,৪৮৪ (১০৭-তম) ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১২৯.৭৮৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৬,০৫২ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম কোয়ানজা। রাজধানী লুয়ান্ডা। অ্যাঙ্গোলার নাগরিকদের অ্যাঙ্গোলান বলা হয়।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর অ্যাঙ্গোলা পর্তুগাল হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ওই দিনই অ্যাঙ্গোলার বর্তমান পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। এ দেশের জাতীয় পতাকায় একটি বিশাল দা রয়েছে। যা দেখলে ভয় লাগে। অ্যাঙ্গোলার সরকারি ভাষা পর্তুগিজ। এছাড়া আরও অনেক স্থানীয় ও আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত আছে। অ্যাঙ্গোলার অধিবাসীর প্রায় সবাই খ্রিস্টান। তবে ৮০-৯০ হাজার মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মের খুব সামান্য সংখ্যক অনুসারী দেখা যায়।
ডায়মন্ড ও তেল অ্যাঙ্গোলার জাতীয় আয়ের প্রাথমিক ও অন্যতম উৎস। চীনে যে সকল দেশ তেল সরবরাহ করে তন্মধ্যে অ্যাঙ্গোলা অন্যতম একটি। টিপস দেওয়া এখানে রীতিসিদ্ধ নয়। যদি কেউ দিতে চায় তবে তা, মোট বিলের ১০% এর অধিক হবে না এবং তা নগদ দেওয়া যাবে না। সিগারেট বা অন্য কোনো দ্রব্যে দিতে হবে। অ্যাঙ্গোলার মুদ্রা দেশের বাইরে নেওয়া যায় না। এমনটি করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হয়। এটা একটা উদ্ভট দেশ। মধ্যযুগীয় অনেক রীতি-নীতি এখনও বহাল তবিয়তে আছে। অ্যাঙ্গোলার সরকারি ভবন, সামরিক স্থাপনা বা এরূপ অন্যান্য অবকাঠামোর ছবি তোলা নিষিদ্ধ। তুললে শাস্তি পেতে হয়।
সাব সাহারান অঞ্চলে অ্যাঙ্গোলার অর্থনীতি খুব দ্রুতবর্ধনশীল। এর রাজধানী লুয়ান্ডাকে বলা হয় আফ্রিকার প্যারিস। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, অ্যাঙ্গোলার ৭০% অধিবাসীর বয়স ২৪ এর নিচে। গড় আয়ু কিন্তু নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ৫৪.৫৯ বছর। রাজধানী লুয়ান্ডা পৃথিবীর ব্যয়বহুল শহর টোকিও বা মস্কোর চেয়ে নানা বিষয়ে অনেক বেশি। লুয়ান্ডায় মাসিক বাসা ভাড়া ১০,০০০ হতে ১৫,০০০ ইউএস ডলার। হোটেলের রুম ভাড়া প্রতি রাত ৪০০ ইউএস ডলার, সকালের নাস্তা কমপক্ষে ৭৫ ইউএস ডলার, নন অ্যালকোহলিক ড্রিংক ১০ ইউএস ডলার – – আর বলার প্রয়োজন আছে কী!
ভ্রমণ ও ভিসা গ্রহণের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট দেশ। ভিসার জন্য আবেদন করার আগে হোটেলের অফেরতযোগ্য অর্থ এবং বিমানের টিকেট দেখাতে হয়। ভিসা না হলে হোটেলের বুকিং আর ফেরত পাওয়া যায় না। ভিসা হবে এমন নিশ্চয়তাও নেই। এখানকার লোকদের আচার-আচরণও তেমন আন্তরিক নয়। এজন্য বলা হয়, কেউ যদি জাহান্নামে যেতে চায় তো ভালো, তবু অ্যাঙ্গোলা নয়।