Tareq Mahmud
পৃথিবীতে প্রথম বর্ণমালা আবিষ্কার করে ফিনিসীয়রা। তাদের বাস ছিল প্রাচীন ক্যানান দেশে, ইসরাইলের সঙ্গে। ফিনিসীয়রা ছিল বণিক জাতি, তাদের কাছ থেকে এটা শেখে গ্রিকরা, তাদের থেকে রোমানরা। আজ রোমান লিপি (যাকে আমরা অর্ধেক ভুল করে ইংরেজি হিসাবে জানি) সারা বিশ্বে প্রচলিত। ফিনিসীয়দের ছিল ২২টা ব্যাঞ্জনবর্ণ, কোন স্বরবর্ণ ছিল না। গ্রিকরা প্রথম স্বরবর্ণ অ্যাড করে।
যাই হোক, ফিনিসিয়া আর হিব্রু ভাষা ছিল জমজ বোন; বাংলা ও অসমিয়ার মতো। কিন্তু ওই অঞ্চলের ইমপেরিয়াল ভাষা ছিল অ্যারামাইক যার দাপটে দুটো ভাষাই মরে যায়, হিব্রু টিকে থাকে কেবল ইহুদিদের ধর্মীয় ভাষা হিসাবে (যীশু খ্রিষ্ট জাতিতে ছিলেন হিব্রু, কিন্তু সম্ভবত তার কথ্য ভাষা ছিল অ্যারামাইক)। ফিনিসীয় বর্ণগুলো বর্তমানে হিব্রু নামে পরিচিত। ফিনিসীয় বর্ণমালা থেকে অ্যারামাইক বর্ণমালার উদ্ভব ঘটে, তা থেকে সিরিয়াক, আরবি ও প্যাহলবী বর্ণমালা। অনেক তাত্ত্বিক মনে করেন যে আমাদের ভারতবর্ষের বর্ণমালাগুলোও (খরোষ্ঠী, ব্রাহ্মী> নাগরি, বাংলা) ওই একই সূত্র থেকে অ্যাসিরীয় মাধ্যমে এসেছে।
ফিনিসীয় ভাষার ২২টি বর্ণ হচ্ছে আলেফ, বেত, গিমেল, দালেথ, হে, wাও, যাইন, হেথ, তেথ, য়োদ, কাপ্পা, লামেদ, মেম, নূন, সামেখ, আইন, পে, ৎসাদ, ক্বফ, রেশ, শিন এবং তা। বর্ণগুলো মনে রাখার জন্য আরবিতে আবজাদি-হাwাজ-হুতি এই ধরনের একটা অ্যাক্রোনিম আছে। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে তখনও অঙ্ক (১, ২, ৩…) আবিষ্কার হয়নি। ফলে ক্রমিক বা অঙ্ক বোঝাতেও এই বর্ণগুলো ব্যবহার হত। আলেফ থেকে তেথ পর্যন্ত নয়টি বর্ণ দিয়ে যথাক্রমে ১ল থেকে ৯ বোঝানো হত। য়োদ থেকে ৎসাদ বর্ণগুলো দিয়ে বোঝানো হত ১০, ২০…, ৯০। আর ক্বফ-রেশ-শিন-তা বোঝাত ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০। হ্যাঁ, গণনা প্রথমে ৪০০ পর্যন্তই ছিল। আরবিতে এর সাথে ফে, খা, থা, জ্বোয়া ও দ্বদ যোগ করে ৯০০ পর্যন্ত লেখা গেল। এই ধরনের সংখ্যালেখনকে বলে Gematria, আরবিতে বলে আবজাদি। আমরা অনেকেই জানি প্রতিটি আরবি বর্ণের সংখ্যাগত মান রয়েছে- এটাই সেই রহস্য। এখান থেকে ব্যাবিলনে সংখ্যাজাদু ও আরবি তাবিজের উদ্ভব ঘটে। জ্বি, প্রাচীন আরবিতে বর্ণক্রম ছিল এটাই। ইসলামী যুগে রিলেটেড বর্ণগুলো পরপর সাজিয়ে বর্তমান বর্ণক্রম তৈরি হয়।
ফিনিসীয় ২২টি বর্ণ গেল গ্রিক ভাষায়। গ্রিসে হে, হেথ, তেথ, আইন, ৎসাদ, শিন উচ্চারণ ছিল না। তারা হে, হেথ ও আইনের জায়গায় এ-প্সিলন, এতা এবং ও-মিক্রন স্বরবর্ণ তৈরি করে। বর্ণগুলোর গ্রিক নাম হল আলফা, বেতা, গামা, দেলতা, এ-প্সিলন, দিগাম্মা, যাইন, এতা, থেতা, ইওতা, কাপা, লামদা, মূ, নূ, ক্সাই, ও-মিক্রন, পাই, [ৎসাদ], কপ্পা, রো, সিগমা ও তাউ। গ্রিকরা এর সাথে উ-প্সিলন, ফাই, খাই, প্সাই আর ও-মেগা যোগ করে। উচ্চারণ না থাকায় এক সময় দিগাম্মা, ৎসাদ ও কপ্পা বিলুপ্ত হয় তবে গেমাত্রিয়া গণনায় এখনো দিগাম্মা ও কপ্পা-র ব্যবহার আছে।
রোমানরা আদি ২২ বর্ণের গ্রিক বর্ণমালা পেয়েছিল এত্রুস্কানদের মাধ্যমে। এত্রুস্কান ভাষায় গ আর ক ধ্বনির পার্থক্য ছিল না। তারা গামা-এর জায়গায় লিখত কে (c, তখনও ‘সি’ হয় নি)। দিগাম্মা আকার রোটেট করে হল এফ। রোমানদের ভাষায় আবার গ ছিল, z-ধ্বনি ছিল না। তারা যাইন স্থানে c-কে মোডিফাই করে গে (g, তখনও জি হয় নি) বসায়। এতা স্থানে হল হেইচ। আর ৎসাদ তো বিলুপ্ত। ফলে বর্ণগুলোর নাম হল আ, বে, কে (c), দে, এ (e), এফ, গে (g), হেইচ, ই(iii), কে (গ্রিক), এল, এম, এন, ও, পি, কু, আর, এস, তে, উ (v), এক্স। হ্যাঁ, তখন v দিয়ে উ বোঝানো হত। পরে উষ্মধ্বনি বোঝাতে v আর স্বরধ্বনি বোঝাতে u লেখা হল। i-এর অন্তস্থ ধ্বনি হিসেবে j বর্ণ তৈরি হল। আর ক্লাসিক্যাল ভাষা হিসাবে গ্রিক থেকে নতুন করে y ও z আমদানি করা হল। জার্মানিক জাতিগুলো (ইংরেজিসহ) এর সাথে যোগ করে w। এইভাবেই পূর্ণ হল বর্তমান ২৬ বর্ণের ISO Basic Alphabet। মধ্যযুগের ইংরেজিতে এসে অনেকগুলো বর্ণের নামই বদলে গেছে। আ/a হয়ে গেছে এই; বা/ b হয়ে গেছে বী; ততদিনে c হয়ে গেছে সী, এ/e হয়ে গেছে ঈ, উ হয়ে গেছে য়ূ।
সূত্র: অ্যালফাবেটের গল্প, তারেক মাহমুদ, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক