আইসল্যান্ড (Iceland) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)

ড. মোহাম্মদ আমীন

আইসল্যান্ড (Iceland)

আইসল্যান্ড এর সরকারি নাম আইসল্যান্ড প্রজাতন্ত্র। এটি ইউরোপ মহাদেশের একটি প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম রেইকিয়াভিক। দেশটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে গ্রীনল্যান্ড, নরওয়েূ, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ফারো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সদাসক্রিয় ভূ-গাঠনিক প্লেটগুলির সীমারেখার ঠিক উপরে অবস্থিত একটি আগ্নেয় দ্বীপ। আইসল্যান্ডের উত্তর প্রান্ত সুমেরুবৃত্তকে স্পর্শ করেছে। ডিম্বাকার এই দ্বীপটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪৮৫ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ। পার্শ্ববর্তী গ্রিনল্যান্ডকে উত্তর আমেরিকার অংশ ধরা হলেও আইসল্যান্ডকে ইউরোপের অন্তর্গত রাষ্ট্র গণ্য করা হয়।

আইস (ice) ও ল্যান্ড(land) শব্দের সমন্বয়ে আইসল্যান্ড শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ল্যান্ড অব আইস বা বরফের দেশ। কথিতহয় স্ক্যান্ডিনিভিয়ান অভিবাসীরা দ্বীপটির নাম রাখেন আইসল্যান্ড। অভিযাত্রী ও অভিবাসী ফ্লকি ভিলগেরোয়ারসন (Floki Vilgeroarson) বরফাচ্ছিদত এ ভূখণ্ডটির নাম রাখেন আইসল্যান্ড। এ বিষয়ে তাঁর লেখা (Landnamabok) ভ্রমণ কাহিনিতে আকর্ষণীয় নানা বর্ণনা রয়েছে। আইসল্যান্ড নামের পূর্বে দ্বীপটির নাম ছিল (Garoarsholmi)। ল্যান্ডনামাবোক অনুসারে, ৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে  নরওয়ে গোত্রপ্রধান  ইনগোলপর আর্নারসোন এ দ্বীপে প্রথম স্থায়ী অভিবাসী হন। ১২৬২ হতে ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আইসল্যান্ড শাসন করেছে নরওয়ে।এরপর করেছে ডেনমার্ক। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে  আইসল্যান্ড স্বাধীন হয় এবং ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে  প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।

আইসল্যান্ডের  মোট আয়তন ১,০২,৭৭৫ বর্গকিলোমিটার বা ৩৯,৬৯৯ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ২.৭%। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে আইসল্যান্ডের মোট অধিবাসী ৩,২৯,১০০ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩.২। আয়তন বিবেচনায় আইসল্যান্ড পৃথিবীর ১০৮-তম ও জনসংখ্যা বিবেচনায় ১৮২-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ২৩৩-তম জনবহুল দেশ। রাজধান ও বৃহত্তম শহর রিকজভিক, দাপ্তরিক ভাষা আইসল্যান্ডিক। এ দেশের অধিকাংশ লোক চার্চ অব আইসল্যান্ডের অনুসারী। সরকারিভাবে আইসল্যান্ডের অধিবাসীদের আইসল্যান্ডার বলা হয়।

আইসল্যান্ডের জিডিপি (পিপিপি) ১৪.৪৮৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৪৪,৫৭৫ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (পিপিপি)১৭.২১৬ বিলিয় ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৫২.৯৬৭ ইউএস ডলার। মাথাপিছু আয় বিবেচনায় আইসল্যান্ড পৃথিবীর ১৬-তম ধনী রাষ্ট্র। মুদ্রার নাম আইসল্যান্ডিক ক্রোনা। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুন আইসল্যান্ডের বর্তমান জাতীয় পতাকাটি গ্রহণ করা হয়।

আইসল্যান্ডের পার্লামেন্ট ইউরোপের প্রথম পার্লামেন্ট। ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে  বর্তমান পিঙবেলি ন্যাশনাল পার্কে আইসল্যান্ডের প্রথম পার্লামেন্ট বসেছিল। স্থানটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করে। পিংবেলি পৃথিবীর দুটি টেকটোনিক প্লেটের অন্যতম। আর একটি আফ্রিকায় অবস্থিত। পিংবেলি প্রতিবছর প্রায় ২ সেন্টিমিটর করে নড়ে যায়।

আইসল্যান্ডে কোনো পাহাড় নেই। যা ছবিতে পাহাড়ের মতো মনে হয়, সেগুলো উপত্যাকা। এখানে ম্যাকডোনাল্ডের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই।

গুমের সুমেরু বৃত্তের খুব কাছাকাছি হওয়ায় আইসল্যান্ডে শীতকালে সবচেয়ে লম্বা রাত এবং গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে লম্বা দিন পাওয়া যায়। ডিসেম্বর মাসে প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা রা তবা গোধূলিময় এবং জুন মাসে প্রায় ২৪ ঘণ্টায় থাকে দিন। সংগতকারণে আইসল্যান্ড হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখান থেকে উত্তরের আলো এবং মধ্যরাতের সূর্য দুটোই উপভোগ করা যায়। যদিও প্রকৃতপক্ষে আইসল্যান্ডের চিরপরিবর্তনীয় আবহাওয়ার জন্য এমনটি উপভোগ করা কষ্টকর।

আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকজভিক পৃথিবীর সর্ব উত্তরের অবস্থিত কোনো স্বাধীন দেশের রাজধানী। এখঅনে ১৩০টি আগ্নেয় পর্বত রয়েছে। তন্মধ্যে ১৮টি ১১০০ বছর পূর্বে বিস্ফোরিত হয়েছিল। আইসল্যান্ডের জিডিপির ৪০% মৎস্যশিল্প এবং ৩১% অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। আয়তনে মোটমোটি বড় দেশ হলেও এ দেশে কোনো রেলপথ নেই। পৃথিবীর কয়েকটি শান্তিপূর্ণ দেশের মধ্যে আইসল্যান্ডের অবস্থান প্রথম সারিতে থাকে সবসময়। অন্যান্য নরডিক দেশ, যেমন ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনের ন্যায় আইসল্যান্ডে সম্পদের বণ্টনে বৈষম্যের হার অনেক কম।

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও সংখ্যাঘরিষ্ঠ আইরিশ পরী বিশ্বাস করে। এখানে গড়ে প্রতি চার বছর অন্তর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। এ দেশে কোনো বন নেই। প্রতিসপ্তাহে আইসল্যান্ডবাসী গড়ে ৪৩.৫ ঘণ্টা কাজ করে। আইসল্যান্ডের ভাষা গত ১০০০ বছরে একটুও পরিবর্তন হয়নি। ঠিক সবকিছু অবিকল রয়ে গেছে, যেমন ছিল ১০০০ বছর আগে। ৬০% লোক রাজধানী রিকজভিকে বাস করে। আইসল্যান্ডের মোট আয়তনের ১৪.৩% হ্রদ ও হিমাবহে আবৃত। মেরু অঞ্চলের বাইরে, বিশ্বের বৃহত্তম হিমাবহ আইসল্যান্ডে অবস্থিত। যার পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ৮%।

আাইসল্যান্ডে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে কোনো মহিলাকে এবং স্বঘোষিত গে (gay) বা সমকামী প্রধানমন্ত্রী হয়। কোকাকোলা পানে আইসল্যান্ডবাসী বিশ্বে প্রথম। আইসল্যান্ডে কোনো পারিবারিক বা বংশগত নাম নেই। তারা ঐতিহ্যবাহী নরম্যাডিক পদ্ধতিতে নাম রাখে। শেষ নাম পিতা বা মাতার নামের প্রথম অংশ। আইসল্যান্ডিক নেমিং কমিটির অনুমোদন ছাড়া নামের প্রথম অংশ ব্যবহার করা যায় না।

আইসল্যান্ডের অধিবাসীরা সিনেমা পাগল জাতি। তাদের মতো পৃথিবীর আর কোনো দেশের লোক এত বেশি সিনেমা দেখে না। এ দেশে কোনো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমান বাহিনী নেই। কোনো মশাও এ দেশে নেই। আইসল্যান্ডের পুলিশ হাতে কোনো বন্দুক বা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র রাখে না। অপরাধের পরিমাণ খুব কম এবং যা ঘটে তা খুব সাধারণ অপরাধ। পুস্তক ও পত্রিকা পাঠে আইসল্যান্ডের অধিবাসীরা বিশ্বের সেরা। এ দেশের ১০% অধিবাসী তাদের জীবদ্দশায় পুস্তক প্রকাশ করে থাকেন।


জার্মানি (Germany) : ইতিহাস ও নামকরণ

গ্রিস (Greece) : ইতিহাস ও নামকরণ

হাঙ্গেরি (Hungary) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

 

Language
error: Content is protected !!