আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে জুন ঢাকা সেনানিবাসে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার কাজ শুরু হয় ।
আগড়তলা ষড়ন্ত্র মামলার বিচারালয়
ঢাকার কুর্মিটোলা সেনানিবাসে একটি সুরক্ষিত কক্ষে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মোট ১০০টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। সরকার পক্ষে মামলায় ১১ জন রাজসাক্ষী-সহ মোট ২২৭ জন সাক্ষীর তালিকা আদালতে পেশ করা হয়। তন্মধ্যে ৪ জন রাজসাক্ষীকে সরকার পক্ষ থেকে বৈরী ঘোষণা করা হয়।
মামলার বৈধত্যা চ্যালেঞ্জ করে রিট
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ই আগস্ট ব্রিটিশ আইনজীবী ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টমাস উইলিয়ম শেখ মুজিবের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল গঠন সংক্রান্ত বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন পেশ করেন। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনায় তাঁর সহযোগী ছিলেন আবদুস সালাম খান, আতাউর রহমান খান প্রমুখ।
মামলার কৌশলী
এই মামলার বিচার চলাকালীর ২৬ জন কৌশলী ছিলেন। শেখ মুজিবের প্রধান কৌশলী ছিলেন আব্দুস সালাম খান। একটি সেশনের জন্য ব্রিটেন থেকে আসেন আইনজীবী টমাস উইলিয়াম। তাকে সাহায্য করেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আহমেদ। এই মামলার ১০০ টি অনুচ্ছেদ ছিল। ১১ জন রাজসাক্ষী ও ২২৭ জন সাক্ষীর তালিকা আদালতে পেশ করা হয়।
সরকার পক্ষেরআইনজীবী
আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঞ্জুর কাদের, এম এর খান, বাঙালি ছিলেন মুকসুদুল করিম।
ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান
৩-সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি এস এ রহমান। তিনি ছিলেন অবাঙালি। অপর দুজন এম আর খান ও মুকসুমুল হাকিম ছিলেন বাঙালি।
আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা শিরোনামের কারণ
সরকারি নির্দেশে মামলাটিকে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মামলার এ শিরোনামের পেছনে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের হয়ত উদ্দেশ্য ছিল; মামলার এ নামকরণ করে শেখ মুজিবকে দেশের জনগণের কাছে ভারতীয় চর ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে জনসমর্থন সরকারের পক্ষে যাবে এবং শেখ মুজিবকে কঠোর সাজা দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু ঘটেছে উল্টো।
সরকারি সাক্ষিদের ভূমিকা
সরকারি সাক্ষীরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সরকারের বিপক্ষেই বিষোদ্গার করতে থাকেন। সাক্ষীরা বলেন, সরকার তাদের নির্যাতন করে এ মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছে, অথচ এ মামলা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। ফলে দেশবাসীর কাছে সরকারের এ ষড়যন্ত্র সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সরকারি এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে এবং মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবসহ সকল বন্দির মুক্তির দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।