Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
আফগানিস্তান (Afghanistan) : ইতিহাস ও নামকরণ – Dr. Mohammed Amin

আফগানিস্তান (Afghanistan) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (এশিয়া)

ড. মোহাম্মদ আমীন

আফগানিস্তান (Afghanistan) 

আফগানিস্তানের সরকারি নাম আফগানিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার এ রাষ্ট্রটি ইরান, পাকিস্তান, চীন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যস্থলে একটি ভূ-বেষ্টিত মালভূমির উপর অবস্থিত। আফগানিস্তানের পূর্বে ও দক্ষিণে পাকিস্তান, পশ্চিমে ইরান, উত্তরে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে গণচীন।

আফগানদের স্থান বা দেশই হচ্ছে আফগানিস্তান। ‘আফগান’ ও ‘স্তান’ – এ দুটি পৃথক শব্দের সমন্বয়ে আফাগানিস্তান। আফগান একটি জাতির নাম। ‘-স্তান’ ফার্সি প্রত্যয়। এর মানে দেশ, রাজ্য , জনপদ বা এলাকা। বাংলা ভাষায় এটাকে ‘স্থান’ শব্দের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সে হিসাবে, যে এলাকায় বা দেশে বা স্থানে আফাগান জনগোষ্ঠীর লোক বসবাস করে সেটি আফগানিস্তান। আফগানদের দেশকে ষোড়শ শতকে ফার্সিভাষায় লিখিত বাবরনামা গ্রন্থে আফগানেস্তান লেখা হয়েছে। দশম শতকে লিখিত হুদুদ-উল-আলম গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, হিন্দুকুশ পর্বতের দক্ষিণাংশে আফগান নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসবাস করত। মূলত পশতু জনগোষ্ঠীর লোকদের একটি অংশ আফগান নামে পরিচিত ছিল। এ গ্রন্থের সূত্রে বলা যায়, আফগান শব্দের সঙ্গে ‘স্তান’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে দেশটির নাম হয়েছে আফগানিস্তান। ঊনবিংশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত আফগানিস্তান নামক জনপদটি হিন্দুকুশ ও সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় বসবাসরত পশতু উপজাতীয় লোকদের রাজ্য হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় ইতিহাসবেত্তাদের লেখায় আফগানিস্তান শব্দটি একটি জনপদ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠে।

আফগানিস্তানের রাজাধানী কাবুল। কাবুল বা ক্যাবুল হচ্ছে প্রাক্তন কাবুল দেশের নতুন নাম। এলাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত কাবুল নদী হতে স্থানটি কাবুল দেশ নামে পরিচিতি পায়। কাবুল নদী সংস্কৃত ভাষায় কুবাহ্ নামে পরিচিত। কথিত হয় নামটি ‘সাতিয়ান’ কু-শব্দ হতে সৃষ্ট। ওই ভাষার ‘কু’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ জল। মুসলিম দখলের পর শহরটি প্রাচীন স্থান হতে সরিয়ে কৌশলগত কারণে বাগরাম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু নাম পূর্বের ন্যায় কাবুল থেকে যায়। আর একটি কথা, টলেমির বিবরণে দেখা যায় – প্রাচীন গ্রিক এলাকায় অবস্থিত কাবুলিয়েট এবং কাবুরা নামের সঙ্গে কাবুল নামকরণের সম্পর্ক আছে। তার কথা সত্য হলে বলতে হয়, গ্রিকরাই কাবুল নামটি দিয়েছিলেন। হতে পারে, আলেকজান্ডারের সময় এ নামকরণের ঘটনা ঘটে। অনেকে মনে করেন, সংস্কৃত কাম্বুজপুরা শব্দ হতে কাবুল নামের উৎপত্তি। সংস্কৃত শব্দ পুরা মানে শহর। সুতরাং কাম্বুজপুরা মানে কাম্বুজশহর।

আফগানিস্তানের আয়তন ৬৫২,৮৬৪ বর্গকিলোমটিার বা ২৫১,৮২৭ বর্গমাইল। যা পৃথিবীর ৪১-তম। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের আদম শুমারি অনুযায়ী লোক সংখ্যা ৩২,৫৬৪,৩৪২ জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৩.৫ জন। জনসংখ্যার দিক হতে আফগানিস্তান পৃথিবীর ৪০-তম জনবহুল দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ১৫০-তম। দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ৬৯৫ ইউএস ডলার, গিনি ২৯ এবং এইচডিআই ০.১৬৯। আফগানিস্তান একটি রুক্ষ এলাকা। গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া গরম ও শুষ্ক এবং শীতকালে প্রচ- ঠা-া পড়ে। কাবুল আফগানিস্তানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

আহমদ শাহ দুরানি ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমে এর রাজধানী ছিল কান্দাহার। পরে তা কাবুলে স্থানান্তর করা হয়। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিস্থল হিসেবে পরিচিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু লোক আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে চলাচল করেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে বসতি স্থাপন করেছেন। দেশটির বর্তমান জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এ ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। আফগানিস্তানে বসবাসরত সবচেয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী পশতু জাতি।

আফগানিস্তানের সরকারি ভাষা দারি ও পশতু। তবে এখানে পারসি, উজবেক ও তুর্কমেন ভাষাতেও কিছু কিছু লোক কথা বলে। আফগানিস্তানের মুদ্রার নাম আফগানি এবং নাগরিকদের বলা হয় আফগান। ভুলবশত মুদ্রার নামের স্থলে নাগরিকের নাম বসে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। পরে ভুল ধরা পড়লেও আর সংশোধন করা হয়নি। আফগানিস্তান ৩৪টি প্রাশাসনিক প্রদেশে বিভক্ত। প্রত্যেটি প্রদেশের নিজস্ব রাজধানী রয়েছে। আবার প্রত্যেক প্রদেশ কয়েকটি প্রদেশীয় জেলায় বিভক্ত।

আফগানিস্তানে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি বৌদ্ধমূতি ছিল। যা তালেবানেরা ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে নৃশংসভাবে ধ্বংস করে দেয়। তালেবানদের হাতে হারিয়ে যায় বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্য। যা আর কখনও ফিরে পাওয়া যাবে না। দক্ষিণ আফগানিস্তানের কান্দাহার এয়ারফিল্ড হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম একক রানওয়ে এয়ারস্ট্রিপ। এটি হচ্ছে নাটোর অধীনে পরিচালিত নন-ন্যাটো দেশের স্থাপিত প্রথম এয়ারফিল্ড। যা পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার সৈন্য, সে পরিমাণ সহায়ক শক্তি, সাংবাদিক, পরিদর্শক, সম্পর্কিত অন্যান্য মানুষ ও সরঞ্জাম এ বিমান বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়ার কাজ করা হয়েছে।

ব্রিটেন দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে দখল না করলেও দীর্ঘদিন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কর্মকা- যুক্তরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্ট তৃতীয় অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধেও পর দেশটি পররাষ্ট্রবিষয়ে তার সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করে। ১৮ হাজার ফুট উচ্চ হিন্দুকুশ আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আফগানিস্তানের এন্ডোরহিক সিস্তান (endorheic Sistan) অববাহিকা বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক এলাকা হিসাবে পরিচিত। এখানে কোনো বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে।

বুজখাসি বা ছাগল-দখল আফগানিস্তানের জাতীয় খেলা। এটি একটি নৃশংস ও বন্য খেলা । চিল উড়ানো বা গুদিপরান বাজি আফগানিস্তানের আর একটি জনপ্রিয় খেলা। আফিম আফগানিস্তানের একটি বর্ধিষ্ণু ও অত্যন্ত আয়কর ফসল। নান একপ্রকার রুটি। এটি ছাড়া খাদ্য আফগানদের নিকট পরিপূর্ণ খাদ্য হিসাবে স্বীকৃত নয়।

মরক্কো (Morocco) : ইতিহাস ও নামকরণ

মরিশাস (Mauritius) : ইতিহাস ও নামকরণ

মোজাম্বিক (Mozambique): ইতিহাস ও নামকরণ

এশিয়া

আফগানিস্তান (Afghanistan) : ইতিহাস ও নামকরণ

আযারবাইজান (Azerbaijan) : ইতিহাস ও নামকরণ

আর্মেনিয়া (Armenia) : ইতিহাস ও নামকরণ

বাহরাইন (Bahrain) : ইতিহাস ও নামকরণ

 

সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।