ড. মোহাম্মদ আমীন
আবর্জনা
‘আবর্জনা’ শব্দের প্রচলিত ও আভিধানিক অর্থ: ময়লা, জঞ্জাল, অপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রভৃতি। সংস্কৃত ‘আবর্জন’ হতে বাংলা ‘আবর্জনা’ শব্দের উদ্ভব। আবর্জন হচ্ছে আনন্দের সঙ্গে বর্জন। সংস্কৃতে শব্দটির অর্থ ছিল ত্যাগ করা, নত হওয়া, দান করা, অন্যকে দিয়ে দেওয়া প্রভৃতি। কিন্তু বাংলায় এসে শব্দটি এসব নান্দনিক অর্থ হারিয়ে নোংরা, ময়লা, জঞ্জাল প্রভৃতি অর্থ ধারণ করে।
কিন্তু কেন?
এর কারণ রয়েছে। আবর্জনা ত্যাগ করতে হয়, ফেলে দিতে হয়, অতি সুচারুভাবে এর ব্যবস্থাপনা করতে হয়। দান করা, ত্যাগ করা এবং নত হওয়া যেমন মহৎ তেমনি নোংরা, জঞ্জাল প্রভৃতি জিনিস বিচক্ষণতার সঙ্গে ত্যাগ করা আরও মহৎ। একসময় (প্রজাপতি যুগে) সঞ্চিত সম্পদকে আবর্জনা মনে করা হতো। তাই সবাই ও সঞ্চিত সম্পদ পরিত্যাগ করার জন্য উদগ্রীব থাকত।
কেউ ধনসম্পদ ত্যাগ না-করলেও বাঁচতে পারে, কিন্তু ময়লা এমন একটা জিনিস যা খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আবশ্যিকভাবে ত্যাগ না-করলে জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই সংস্কৃত ‘আবর্জন’ বাংলায় অতিথি হয়ে পূর্বতন অর্থ হারালেও আরও চমৎকার অর্থে সম্পূরক ভাষ্যে ‘আবর্জনা’ নাম নিয়ে কাজের মতো কাজ করেছে।
সূত্র: বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়।