ড. মোহাম্মদ আমীন
শীতাতপ যন্ত্রের (ডব্লিউ এইচ ক্যারিয়ার আবিষ্কৃত) নিচে বসে ফেসবুক ব্যবহারের সময় ভাবি না, মার্ক জুকারবার্গ ইহুদি না খ্রিষ্টান। শিশু সন্তানকে বসন্তের টিকা দেওয়ার সময় ভাবি না, আবিষ্কারক এডওয়ার্ড জেনার কে ছিলেন। ভাবি না, যক্ষ্মা রোগের টিকার আবিষ্কারক রবার্ট কচ অবিশ্বাসী ও অধার্মিক ছিলেন। উড়োজাহাজে চড়ার সময় ভাবি না, অরভিল রাইট ও উইলভার রাইট পাখির মতো নগণ্য প্রাণী থেকে উড়োজাহাজ আবিষ্কারের প্রেরণা পেয়েছেন। রেল গাড়িতে চড়ার সময় ভাবি না, জর্জ স্টিভেনসন গ্রামের কিছু বাচ্চার ধোঁয়া-খেলা দেখে রেল ইঞ্জিন আবিষ্কারের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। ডায়াবিটিস প্রতিরোধক খাদ্য খাওয়ার সময় ভাবি না, ফালবার্গ-এর হাতের ময়লা স্যাকারিন আবিষ্কারের উৎস।একটি আপেল থেকে নিউটন আবিষ্কার করেছেন জগদ্বিখ্যাত মাধ্যাকর্ষণ সূত্র।
টেলিভিশন দেখার সময় ভাবি না, আবিষ্কারক জন লজি বেয়ার্ড তার সহকর্মীর সূত্র দিয়ে সফলতা পেয়েছেন। চিকিৎসা নেওয়ার সময় ভাবি না, জেমস ইয়ং সিম্পসন তার বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে গিয়ে ক্লোরোফরম আবিষ্কার করে ফেলেছেন। পেনিসিলিনজাতীয় অজস্র ওষুধ সেবনের সময় ভাবি না, বউয়ের বকাঝকার কারণেই আলেক্সেন্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
টেলিফোনে কথা বলার সময় ভাবি না, গ্রাহামবেল কেমন মানুষ ছিলেন। এক্সরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভাবি না, ডব্লিউ কে রন্টজেন কার আবিষ্কৃত রশ্মি দিয়ে এটি আবিষ্কার করেছেন। বৈদ্যুতিক বাল্বের নিচে বসে প্রাত্যহিক কাজ করার সময় ভাবি না, টমাস আলভা এডিসন একজন প্রতারক ছিলেন— নিকোল তেসলার মতো বিজ্ঞানীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। করোনাভাইরাসের ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক সামগ্রী ব্যবহারের সময় ভাবি না, এগুলো ধর্মবিদ্বেষী চায়নিজদের তৈরি।একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে আত্মরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আগে ভাবি না এটি ইহুদিদের তৈরি এবং মুসলিম দলনের হিংস্র উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
নজরুল সংগীত শ্রবণের সময় ভাবি না, তিনি অসুস্থ হওয়ার পূর্বে দশ বছর যাবৎ কোন মতাদর্শ লালন করতেন। প্রিয়জনের উদ্দেশে “Happy birthday to you” সংগীত গাওয়ার সময় ভাবি না, জনৈক মাতাল এক যৌনকর্মীর জন্মদিনে মাতাল অবস্থায় সুর দিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন এবং পরে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কেন্টাকির লুইস ভাইলের এক কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ প্যাটি ও তার বোন মির্ল্ডাড জে হিল (Patty and Mildred J. Hill) মাতালের কথা ও সুরে গানটি পুনরায় সজ্জিত করেছেন।
শুধু ভাবি, এসব আবিষ্কার যুগযুগ ধরে মানুষের কল্যাণ করে আসছে। কাউকে আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে সুবিধা হতে বিরত থাকতে কিংবা সমালোচনায় মুখর হতেও দেখিনি। সমালোচনা করলেও সুবিধা নিতে পিছপা হতে কাউকে দেখিনি।
ঠিক তেমনি রবীন্দ্রনাথ কে, কোন ধর্মের কিংবা কোনো দেশের; তিনি কেন কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে ও কী উদ্দেশ্যে এবং কার কথা-সুর নিয়ে “আমার সোনার বাংলা (বর্তমানে আমাদের জাতীয় সংগীত)” লিখেছেন তাও ভাবি না, ভাবতেও পারি না। কারণ এখন এটি আমাদের জাতীয় সংগীত। কোনো সুসন্তান তার মায়ের বিবাহপূর্ব যুবকালীন অতীত আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে না। যতবার সংগীতটা শুনি ততবার অনবদ্য সুর আর অনুপম বাণীছন্দে মনপ্রাণ দেশপ্রেমবোধের মন্দ্রিত শিহরনের শ্রদ্ধাবিজড়িত মুগ্ধতায় স্তব্ধ হয়ে যায়। আমার ভাবনা আমার জাতীয় সংগীতে হারিয়ে যায় দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণায়। আমার মুখ, মূক হয়ে যায় ভাবনাহীন মৌনতায়।
——————-
প্রাসঙ্গিত হওয়ায় শুবাচি জনাব আবু রায়হানের Abu Raihan-এর একটি যযাতি নিচে দেওয়া হলো:
জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে আমার কথা
#রবি ঠাকুর বিদেশি? আরে ভাই, রবি ঠাকুর যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন কলিকাতা আর বাংলাদেশের ভিন্ন দেশ ছিল না। তিনি আমাদের দেশেরই নাগরিক ছিলেন। পরিস্থিতি যখন আমাদের পৃথক করে দেয় তখন রবীন্দ্রনাথ আর পৃথিবীতে নেই।
#রবি ঠাকুর হিন্দু? কিন্তু এটা মানতেই হবে যে, বাংলা সাহিত্যের শ্রী বৃদ্ধিতে যাদের অবদান সর্বাধিক সে তালিকার সিংহভাগ ব্যক্তিই হিন্দু। তাছাড়া জাতীয় সঙ্গীতের কোথাও হিন্দুয়ানী আছে বলে আমার জানা নেই।
#তিনি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করার পক্ষে ছিলেন না? তাতে দোষের কিছু আছে বলে মনে করছি না। তিনি ভিন্ন এলাকার লোক ছিলেন। আমরাও চাই বড় একটা উন্নয়ন কর্ম অন্য জেলায় না হয়ে আমাদের জেলায় হোক।
#যদি উক্তি হয় শিক্ষণীয় তবে লেখকের চরিত্রে কী যায় আসে? তেমনই গানটি যদি অর্থ আর ভাবে হৃদয় ছুয়ে যেতে পারে তবে পরিবর্তনের প্রশ্ন কেন? ##কোন ভুল হলে বাজে মন্তব্য না করে প্লিজ comment এ বুঝিয়ে বলুন।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥
All Link
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলা সাহিত্যবিষয়ক লিংক
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
বিবিধ এবং হযবরল : জ্ঞান কোষ
সেবা কিন্তু পরিষেবা কেন
ভাষা নদীর মতো নয় প্রকৃতির মতো
এককথায় প্রকাশ
শব্দের বানানে অভিধানের ভূমিকা
আফসোস নিয়ে আফসোস
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু
যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা
প্রায়শ ভুল হয় এমন কিছু শব্দের বানান/২
গীতাঞ্জলি
রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর
রবীন্দ্রনাথের রাজা
রবীন্দ্রনাথের চতুরঙ্গ
রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা