Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
আমি শুবাচ থেকে বলছি: শুবাচির পোস্ট/যযাতি; মন্তব্য, প্রশ্ন উত্তর বিবিধ ৫ – Dr. Mohammed Amin

আমি শুবাচ থেকে বলছি: শুবাচির পোস্ট/যযাতি; মন্তব্য, প্রশ্ন উত্তর বিবিধ ৫

ড. মোহাম্মদ আমীন

আমি শুবাচ থেকে বলছি: শুবাচির পোস্ট/যযাতি; মন্তব্য, প্রশ্ন উত্তর বিবিধ ৫

এই শব্দের লিংক: https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ-5/

— — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — — —

 
পৃথিবীর শব্দের উদ্ভব জানতে চাই
পৃথিবী (√প্রথ্‌+ইব+ঈ) সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃত বানান— पृथिवी। সংস্কৃত পৃথ্বী (পৃথু+ঈ) থেকে পৃথিবী। প্রাচীন পৃথ্বীই বর্তমান পৃথিবী।পৃথ্বী ছিল পৌরাণিক রাজা পৃথুর রাজ্য। অর্থাৎ, প্রাচীন পৃথুর রাজ্যটিই বর্তমান পৃথিবী। পুরাণমতে, পৃথু ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর রাজা। হিংসায় উন্মুত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিষ্ঠুর দ্বন্দ্ব- – -।” (রবীন্দ্রনাথ)।  অবনি, ক্ষিতি, ধরণি, বসুধা, বসুন্ধরা, ধরা, মেদিনী, ধরিত্রী, ধরাতল, ভূমি, মহি, দুনিয়া, জগৎ প্রভৃতি পৃথিবীর সমার্থক শব্দ। “পৃথিবী আমারে চায়, রেখো না বেঁধে আমায় – – -।”
 
যৌনকর্মী
অভিধানমতে, সংস্কৃত যৌনকর্মী (যৌন+কর্মন্+ইন্) অর্থ— (বিশেষ্যে)  যৌনকর্ম যার পেশা। যিনি যৌনকর্ম দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করেন কিংবা যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তিনি যৌনকর্মী। নারী বা পুরুষে উভয়ে এই পেশা গ্রহণ করতে পারেন। অতএব, যৌনকর্মী নারী বা পুরুষ যে-কেউ হতে পারেন।

তুই আমার বাল করবি

 “তুই আমার বাল করবি!”,  এখানে বাল শব্দের অর্থ কী?এখানে বর্ণিত বাল শব্দের অর্থ— কচু। কচু অর্থ— কিছুই না। তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত অর্থহীন শব্দ। গুরুত্বহীন, অবজ্ঞা প্রভৃতির প্রকাশ।
ব্যবহারিক না কি ব্যাবহারিক
প্রাচীন এবং আধুনিক অভিধান বা বানানবিষয়ক গ্রন্থসমূহে উভয় বানানকে নানা আঙ্গিকের ব্যাকরণিক ব্যাখ্যায় শুদ্ধ বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক অভিধানে উভয় শব্দকে যথামর্যাদায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।
 
তবে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধান, ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ গ্রন্থে কেবল ‘ব্যাবহারিক’ বানানকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থে ‘ব্যবহারিক’ শব্দের ঠাঁই হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘সরকারি কাজে ব্যাবহারিক বাংলা’ পুস্তিকাতেও কেবল ‘ব্যাবহারিক’ বানানকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলা একাডেমি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেহেতু কেবল ‘ব্যাবহারিক’ বানানকে ঠাঁই দিয়েছে, ব্যবহারিক বানানকে ঠাঁই দেয়নি। বলা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ব্যবহারিক বানান দাপ্তরিক বিবেচনায় পরিত্যক্ত।
 
তাই ‘ব্যাবহারিক’ বানানটি ‘ব্যবহারিক’ বানানের চেয়ে অধিক গুরত্ব পেয়ে গেছে। এ অবস্থায়, ‘ব্যাবহারিক’ বানানই সমধিক বিধেয়।
ঠাঁই দিলে গুরুত্ব, অন্যথায় দূরত্ব।
 

কলু কলুর বলদ; ঘানি আর ঘানি টানা

 
কলু: সাঁওতালি কুল্‌হু থেকে উদ্ভূত দেশি কলু অর্থ— (বিশেষ্যে) ঘানিতে তৈলবীজ পেষণ করে তেল উৎপাদন যার পেশা; তৈলকার জাতিবিশেষ; স্ত্রীলিঙ্গে কলুনি। যারা সরিষা বা অন্যান্য তৈলবীজ পিষে তেল বের করে তাদের কলু বলে। কলুর পেশা তৈলবীজ পিষে তেল উৎপাদন করা।
 
কলুর বলদ: কলুর বলদ বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি বাগ্‌ধারা। এর শাব্দিক অর্থ— তেল উৎপাদানের কাজে নিয়োজিত তৈলকারের বলদ। তবে অন্তর্নিহিত বা আলংকারিক অর্থ— এমন ব্যক্তি যাকে অন্যের ইচ্ছানুসারে সারাক্ষণ খেটে মরতে হয়, কিন্তু নিজের কোনো লাভ হয় না বা পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে পারে না; ফলভোগের অধিকার হতে বঞ্চিত পরিশ্রমী।
 
বলদ, তেল উৎপাদনের জন্য তার মালিক কলুর নির্দেশ অনুসারে সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে। সামান্য ভুলত্রুটি হলেও কলু তার বলদকে পেটায়। মুহূর্তের জন্যও বিশ্রাম দেয় না। বলদ, আশা করে থাকে— একটু তেল অন্তত গায়ে মেখে চকচকে হওয়ার জন্য পাবে। কিন্তু পায় না। দিন শেষে মালিক কলু সব তেল নিয়ে যায়। এক ফোঁটা তেল তার একান্ত অনুগত পরিশ্রমী বলদটিকে দেয় না। কলুর বলদ বাগ্‌ধারাটিতে পরিশ্রমী ও অনুগত বলদদের বঞ্চনার করুণ, কিন্তু চিরন্তন চিত্রটি ফুটে উঠেছে।
 
ঘানি ও ঘানি টানা: কলু যে দেশীয় যন্ত্রটি ব্যবহার করে বলদের সাহায্যে তৈলবীজ থেকে তেল উৎপাদন করে তাকে বলা হয় ঘানি। এই ঘানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বাগ্‌ধারা ঘানি টানা। বলদ ঘানি টানে। ঘানি টানা কথার অন্তর্নিহিত বা আলংকারিক অর্থ কলুর বলদের মতো কঠোর পরিশ্রম করা।

রেজিস্টার বনাম রেজিস্ট্রার

ইংরেজি রেজিস্টার (register) অর্থ (বিশেষ্যে) নিবন্ধনের খাতা, জন্ম, মৃত্যু প্রভৃতি তথ্যসম্বলিত বহি, দৈনন্দিন ক্রয়বিক্রয়ের হিসেব রাখার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। লাতিন রেজিস্ট্রার (registrar) অর্থ (বিশেষ্যে) নিবন্ধক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব, সাব-রেজিস্ট্রার। রেজিস্টার বস্তু, কিন্তু রেজিস্ট্রার পদবি; ওই পদবি-যুক্ত ব্যক্তি।
নিমোনিক: র-ফলা ব্যক্তির নিম্নাঙ্গ পদ বা পা। তাই যার নিচে র-ফলা আসে সে ব্যক্তি।

আঞ্চলিক ভাষা

আঞ্চলিক ভাষা মাতৃদুগ্ধ, প্রমিত ভাষা কৌটার,
বিদেশি ভাষা ফল-ফলারি, প্রয়োজন আছে সবটার।”
ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা ভাষা সিলেটে আহত চট্টগ্রামে নিহত
ড. মোহাম্মদ আমীন, শ্রীমতীর পরকীয়া।
 
পূর্ব-প্রাচী, পশ্চিম-প্রতীচী, উত্তর- উদীচী, দক্ষিণ-অবাচী
অবাচী, অবাচী উষা, অবাচ্য, অবাচ্যদেশ:  সংস্কৃত অবাচী (অবাচ্+ঈ) অর্থ (বিশেষ্যে)— দক্ষিণ দিক, দক্ষিণ দিকের দেশসমূহ, অধোদিক। যেমন, দক্ষিণ মেরুর অবাচী উষা। অবাচী উষা অর্থ— কুমেরুজ্যোতি। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়: aurora australis। অবাচ্য অর্থ (বিশেষণে) ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য, অকথ্য; বলা উচিত নয় এমন। এর আর একটি বৈশেষণিক অর্থ— দক্ষিণদিকসংক্রান্ত। তবেঅবাচ্যদেশ শব্দের অর্থ— যোনি। এর সঙ্গে দক্ষিণের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে  অবাচীর একটি অর্থ অধোদিক বা নিম্নদিক। অবাচ্যদেশ  সেই অধোদেশটাকে নির্দেশ করেছে।
 
 
উদীচী, উদীচীউষা, উদীচীজ্যোতি, উদীচীন: সংস্কৃত উদীচি (উদচ্‌+ঈ) অর্থ (বিশেষ্যে)— উত্তর দিক, উত্তরদিকের দেশসমূহ। উদীচীউষা (উদীচী+উষা) অর্থ (বিশেষ্যে)— মেরুপ্রভা, ইংরেজিতে  যাকে বলা হয় অরোরা (aurora)। উদীচীজ্যোতি শব্দটি উদীচীউষার সমার্থক। অন্যদিকে, উদীচীন (উদচ্‌+ঈন) অর্থ (বিশেষণে)— উত্তরদিকস্থ, উত্তরদিকসম্বন্ধীয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘অবাচী উষা’ অসংলগ্ন; কিন্তু ‘উদীচীউষা’ নিরেট।  কিন্তু কেন? যদি লিখি ‘অবাচী উষা’ ও ‘উদীচী উষা’, দুটি প্রকাশের প্রতিটিই দুটি শব্দে—মাঝখানে ফাঁক রেখে, অসংলগ্নভাবে—তাহলে সমস্যা কোথায়?
 
প্রাচী, প্রাচীন, প্রাচীর: সংস্কৃত প্রাচী (প্র+অনচ্‌+ক্বিপ) অর্থ (বিশেষ্যে)— পূর্বদিক, পূর্বদিকের দেশসমূহ। প্রাচীন অর্থ— পুরাতন এবং প্রাচীর অর্থ— দেওয়াল।
 
প্রাচ্য প্রাচ্যা: সংস্কৃত প্রাচ্য (প্রাচ্‌+য) অর্থ (বিশেষ্যে) — পূর্বদিকস্থ, পূর্বদেশীয় এবং (বিশেষ্যে) ইউরোপের পূর্বদিকস্থ দেশসমূহ। তবে প্রাচ্যা অর্থ মাগধি প্রাকৃত ভাষাবিশেষ।
 
 
মেখলা, নদী মেখলা — √
সংস্কৃত মেখলা [মি+খল্+আ(টাপ্‌)] অর্থ (বিশেষ্যে) নারীর কটিভূষণ, কোমরে পরার অলংকার বা গয়না, চন্দ্রহার; তরবারিরর মুখের চামড়ার খাপ।  মেখলা শব্দের আরেকটি অর্থ ‘বিছা’ নামের অলংকারবিশেষ।
ও আমার রসিয়া বন্ধুরে তুমি কেন কোমরের বিছা হইলা না – – –
 
নদীমেখলা অর্থ নদী যার অলংকার; যে দেশের মাটিতে প্রবাহিত নদী কটিবন্ধ বা চন্দ্রহারের মতো ওই দেশের ভূমিকে লাস্য সৌন্দর্যে বেষ্টন করে রোখে। নদীমেখলা শব্দের আলংকারিক অর্থ নদীমাতৃক দেশ। শব্দটি মূলত এই অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।
 
 
ব্যয় ব্যবসায় ও ব্যাবসা
ব্যয়: ব্যায় নয়, ব্যয়।ব্যয়-এর কোনো আ-কার নেই। তাই ব্যয় সীমাহীন। এজন্য ব্যয় বানান আ-কার ছাড়া লিখতে হয়।
 
ব্যবসায়: তৎসম ব্যবসায় বানানের শেষে আয় বানানের  না-দিলে ব্যবসায় আয় হয় না। এজন্য ব্যবসায় বানানে অন্তস্থ-য় দিতে হয়।
 
ব্যাবসা: ব্যবসায় বানানে য় না-দিলে আ-কার দিয়ে লিখতে হয় ব্যাবসা। ব্যাবসা বানানটি ব্যবসায় বানানের চলিত রূপ।অর্থাৎ ব্যবসায় ও ব্যাবসা উভয় বানান শুদ্ধ। 
 
শুদ্ধ: ব্যয়।
 
শুদ্ধ: ব্যবসায় ও ব্যাবসা।
 
 
চিঠির খামে লেখা ‘প্রযত্নে’ বা C/O অর্থ কী
এটা অনেকটা রেফারেন্সের মতো। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঠিকানা দিয়ে চিঠি পৌঁছানো কঠিন। তাই বাড়ির যে লোকটিকে সবাই চেনে তার নাম ব্যাবহার করা হয়। প্রাপক যদি অপরিচিত হয় তাহলে যার কাছে চিঠিটা সহজে পৌঁছে যায় কিংবা পৌঁছে গেলে যত্নসহকারে প্রাপকের হাতে পৌঁছিয়ে দেবে কিংবা প্রাপক নিজে সহজে সংগ্রহ করে নিতে পারবে, তিনিই care of বা c/o, প্রযত্নে। তিনি পিতামাতা ভাইবোন, বন্ধু, বস, আত্মীয় অনাত্মীয় যে কেউ হতে পারে। ডাক বিধি মোতাবেক চিঠি বিলিকারী আগে প্রাপককে খুজবেন, তাকে না পেলে C/o কে চিঠি দিবেন। রেজিস্টার্ড চিঠির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
সংখ্যাবাচক শব্দ
সংখ্যাবাচক শব্দগুলো বৈশিষ্ট্যের বিচারে বিশেষণস্থানীয়।তাই এগুলোর ব্যবহার বিশেষণ শব্দের ব্যবহারের অনুরূপ হবে।
 
-সংশ্লিষ্ট, সংশ্লিষ্ট
‘সংশ্লিষ্ট’ যুক্ত (সমাসবদ্ধ) ও মুক্ত উভয় রূপেই ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন― বিয়ষসংশ্লিষ্ট কথাই কেবল আলোচনার উপযুক্ত। অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই ধন্যবাদের যোগ্য
 
খোলনলচে
খোলনলচে শব্দের অর্থ আমুল পরিবর্তন, পুরো পরিবর্তন, ব্যাপক পরিবর্তন, বিদ্যমান ব্যবস্থা বা সাজসজ্জাকে সম্পূর্ণ পালটে নতুনভাবে সজ্জিতকরণ। কোনো বিষয় বা ব্যবস্থার আংশিক পরিবর্তনে  ঢেলে সাজানো  এবং এর চেয়ে ব্যাপক পরিবর্তন নির্দেশে খোলনলচে  পাল্টানো বা খোলনলচে পরিবর্তন  বা খোলনলচে বদল কথাটি ব্যবহৃত হয়।
 
খোলনলচে শব্দের সমন্বয়ে খোলনলচে শব্দের উদ্ভব।  ‘খোল’ হলো হুকোর মূল কাঠামো। যা নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি। অন্যদিকে, এর সঙ্গে যুক্ত কাঠের নলটিকে বলা হয় নলচে। অর্থাৎ হুুঁকোর পূর্ণ কাঠামো হচ্ছে খোলনলচে। সুতরাং, খোলনলচে পরিবর্তন মানে হুঁকোর আমুল পরিবর্তন।
 
ঢেলে সাজানো কথাটি এসেছে কোনো কিছু ঢেলে পুনরায় সাজানো থেকে। এটি যে-কোনো কিছু হতে পারে।  তামাকসেবীদের হুঁকোর পুরানো জল, কল্কি,  পোড়া তামাক, পুরানো জল, টিকা প্রভৃতি  নতুনভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করাকেও ঢেলে সাজানো বলা হয়। হুঁকো পানের পর নির্ধারিত সময়ে কলকে, তামাক, টিকা, জল প্রভৃতি পরিবর্তন করা হলে তাকে বলা হতো ঢেলে সাজানো। এই ঢেলে সাজানো কথাটি হুঁকো থেকে প্রাত্যহিক জীবনের সর্বত্র কোনো কাজ নতুনভাবে করা বা  কোনো বিষয় সাধারণভাবে সাজানো অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে। এখন এটি এই অর্থ প্রকাশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় বাগ্‌ভঙ্গি।
 
সবসময় ঢেলে সাজানোয় কাজ হয় না। সময়ের প্রয়োজনে হুঁকোর মূল কাঠামো বা খোলনলচে  প্রভৃতিও পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য হুকোর খোলনলচে পাল্টাতে হয়। হুুঁকোর আমুল পরিবর্তন মানে তার মূল কাঠামো বা খোল আর নলচে পরিবর্তন বা পাল্টানো। যা একদম আমুল বা পুরো পরিবর্তন করার তুল্য।  অর্থাৎ বিদ্যমান পুরো কাঠামোয় পরিবর্তন আনাকে বলা হয়   ‘খোলনলচে পাল্টানো’। কথাটি এখন হুঁকো থেকে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।

অলাতচক্র

সংস্কৃত অলাতচক্র (অলাত+চক্র) অর্থ— (বিশেষ্যে) জ্বলন্ত বস্তুকে ঘোরালে চক্রাকারে যে অগ্নিবলয় দেখা যায়, বহ্নিবলয়। অনুরূপ শব্দ— অলাতশিলা।অলাত অর্থ— (বিশেষ্যে) জলন্ত কয়লা বা অঙ্গার। আলাত অর্থ— (বিশেষ্যে) জ্বলন্ত অঙ্গার; (বিশেষণে) জ্বলন্ত অঙ্গারসম্বন্ধীয়। আহমদ ছফার একটি উপন্যাসের নাম: অলাতচক্র।
ওঙ্কার
 
ওঙ্কার সংস্কৃত ওঙ্কার (ওম্‌+√কৃ+অ) অর্থ— (বিশেষ্যে) ঈশ্বরবাচক ধ্বনি, বাদ্যযন্ত্রবিশেষ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এটি পৃথিবীর আদি শব্দ। শব্দই ব্রহ্ম। এটি ব্রহ্ম শব্দ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঈশ্বরবাচক প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত অ-উ-ম্ বা ওম= প্রণব=ওঙ্কার। বৈদিক সাহিত্যে মেঘের শব্দের(মেঘধ্বনি) দেবী সরস্বতী –মাধ্যমিকা বাক্ প্রভৃতিও ওঙ্কার হিসেবে চিহ্নিত।
 
 
বিরাটকায় শব্দের অর্থ
হিন্দি বিরাট ও সংস্কৃত কায় শব্দের সমন্বয়ে গঠিত বিরাটকায় (বিরাট+কায়) অর্থ— (বিশেষণে) বিশাল আকৃতিবিশিষ্ট, বড়ো আকারের।
প্রয়োগ: বিমানবন্দরের সামনে ভেঙে পড়ল বিরাটকায় গার্ডার।
 
মহত্তম ও মহোত্তম কোনটি শুদ্ধ
 
দুটোই শুদ্ধ
মহৎ+তম=মহত্তম (সর্বাপেক্ষা মহৎ)
মহা+উত্তম=মহোত্তম(খুব ভালো)। আবার প্রদত্ত নমুনায় ‘মহত্তম’। “সবচেয়ে মহৎ”  অর্থে  মহৎ+তম= মহত্তম (superlative degree)।  মহা+উত্তম = মহোত্তম, স্বরসন্ধি। সবচেয়ে উত্তম প্রকাশ করে।
 
মদ খাওয়া বড়ো দায় জাত রাখার কী উপায় 
উনিশ শতকের কলকাতায় তখন মদ্যপানের জোয়ার এসেছে। রাজনারায়ণ বসু, ভুদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় মধুসূদন দত্ত, কৃষ্ণদাস বসাক প্রমুখ থেকে শুরু করে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত কেউ মদের আসক্তি এড়াতে পারেননি। ফলে সমকালীন ‘ইয়ং বেঙ্গল’ অনুগামীদের দেখাদেখি ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে সমাজের প্রভাবশালীদের একটা বড়ো অংশ মদ খাওয়ার ব্যাপারে খুব উৎসাহী হয়ে পড়ে।
 
চারিদিকে মদ খাওয়ার ওই রমরমা দেখে এগিয়ে আসেন কিছু সমাজ সচেতন মানুষ। পত্র-পত্রিকাতেও লেখালিখি আরম্ভ হলো। মদ্যপান বিরোধী ওই আন্দোলনে দুই ‘প্যারী’র নাম অগ্রগণ্য। এক জন প্যারীচাঁদ মিত্র এবং অন্য জন ডেভিড হেয়ারের এবং হিন্দু কলেজের ছাত্র প্যারীচরণ সরকার। প্রথম জন মদ খাওয়ার বিরোধিতা করে ‘মাসিক পত্রিকায়’ কয়েকটি প্রবন্ধ লিখলেন। তারপর টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে ‘মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায়’ নামে একটি বইও লিখে ফেলেন।
 
 টেকচাঁদ ঠাকুর হচ্ছে প্যারীচাঁদ মিত্রের ছদ্মনাম। টেকচাঁদ ঠাকুর ওরফে প্যারীচাঁদ মিত্র ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ‘মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায়’ ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়–যেখানে লেখকের নাম হিসেবে পাওয়া যায় টেকচাঁদ ঠাকুর। উনিশ  শতকের কলকাতার শিক্ষিত বাঙালিদের, বিশেষত পুরুষদের জীবনযাপন নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক রচনা ‘মদ খাওয়া বড় দায় জাত থাকার কি উপায়’
 
আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় মদ পান করা অনেকটা অসামাজিক কর্ম বলে স্বীকৃত। এ পরিস্থিতিতে একজন মদ আসক্ত ব্যক্তি মদ পান করতে চায় আবার মদ পান করার কারণে মানসম্মান বজায় রাখা তার জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ে। কারণ মদ পান করে তা গোপন রাখা যায় না।  এমন অবস্থায় পড়ে তার যে আকুতি তাও এ বাক্যে উঠে এসেছে বলা যায়। 
 
কাকপদ মানে কী 
লেখার সময় ভুলক্রমে কোন শব্দ বা শব্দাদি বাদ পড়লে ঐ শব্দ বা শব্দাদির স্থানসূচক চিহ্ন; ^ এই চিহ্নটিকে বলে কাকপদ। তাছাড়া উদ্ধরণ চিহ্ন,” ” এই চিহ্ন ও শূন্যস্থান বুঝানোর চিহ্ন, × × × এই চিহ্নকেও কাকপদ বলে।
 
 
শব্দ দ্বৈত
 
মাঝে মাঝে কাঁদো কাঁদো  হাসে খিলখিল,
টলমল ছোটো পায়ে, বাড়ে তিলতিল
রাতদিন বসে আছি মৃত্যুর কাছাকাছি
সুখেদুখে মিলেমিশে করি নাচানাচি।
 
এই কাঁদোকাঁদো, মাঝেমাঝে, খিলখিল, টলমল, তিলতিল, কাছাকাছি প্রভৃতি শব্দ প্রতিটি দুবার করে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো সমার্থক শব্দ হিসেবে, কখনো বা ধ্বন্যাত্মক-অনুকারাত্মক , বিপরীতার্থক বা ব্যাতিহার শব্দ হিসেবে। এই যুগ্মশব্দগুলো ভাব বা অনুভূতির প্রকাশকে বিশিষ্টতা দান করে। অর্থের মাত্রাতেও আনে নান্দনিক ব্যাপকতা। বহুমুখী ব্যঞ্জনা সৃষ্টিকারী শব্দসমূহে শব্দদ্বৈত বলে।
অর্থাৎ, শব্দের বৈচিত্র্য ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তথা অনুভূতিকে বিশিষ্টতা দানের জন্য “ব্যাপক অর্থে” একই শব্দের দুবার বা একাধিকবার প্রয়োগকে শব্দদ্বৈত বলা হয়। এটি শব্দদ্বিত্ব, শব্দজোড়, দ্বিরুক্তশব্দ প্রভৃতি নামেও পরিচিত। রাতদিন, সুখেদুখে, মিলেমিশে প্রভৃতিও একই প্রকৃতির শব্দ।
 
https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ-5/
 

 —  —  — —  —  —  — —  —  —  — —  —  —  — —  —  —  — —  —  —  —

 
 
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
 
 
 
 
 
— √
All Link: https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-all-link/
 
৬. এই পেজের লিংক: https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ-6/
 
৫.  পোস্টের সংযোগ: https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ-5/
 
 
৩. পোস্টের সংযোগ https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ-3/

২. পোস্টের সংযোগ: https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ-2/

১. পোস্টের সংযোগ: https://draminbd.com/আমি-শুবাচ-থেকে-বলছি-শুবাচ/