কীভাবে হলো দেশের নাম (এশিয়া)
ড. মোহাম্মদ আমীন
আর্মেনিয়া (Armenia)
আর্মেনিয়া পশ্চিম এশিয়ার দক্ষিণ রাশিয়ায় অবস্থিত তেল ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র। জর্জিয়া ও আজারবাইজানের সঙ্গে এটি দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের স্থলযোজকের উপর অবস্থিত। ইয়েরেভান দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আর্মেনিয়া রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষ্ণ সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের অন্তর্বতী অঞ্চলে অবস্থিত।
আর্মেনিয়া নামকরণ নিয়ে আর একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। পূর্ব এশিয়া মাইনর অঞ্চলে অবস্থিত উরারতুয়া রাজ্যের পঞ্চম স¤্রাট ছিলেন মেনুয়া। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৮১০ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৮৬ পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করেন। তিনি মেনুয়াসহ্যাইসাআজিজ উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলটি জয় করে নেন। মেনুয়াস অব উরারতু অঞ্চলটি দখল করে নেওয়ার পর এলাকটি উরামানি বা উরমেনু নাম ধারণ করে। কথিত হয়, বাইবেলে বর্ণিত মিন্নি বা মিন্নিয়া নামের সাথে আর্মেনিয়া নামকরণের সম্পর্ক রয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন, উরারতিয়ান ও আরমিয়াক আমালগাম নাম যুক্ত হয়ে আর্মেনিয়া নাম সৃষ্টি হয়। আর্মেনিয়া শব্দের মূলবাচ্য হচ্ছে আর্মেনিয়ানদের দেশ। যে ভূখ-ে আর্মেনিয়ান লোকজন বসবাস করতো সেটি আর্মেনিয়া। প্রাচীন গ্রিক যুগে আর্মেনিয়া নামটি ল্যাটিন হয়ে ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করে। আর্মেনিয়ান বলতে আর্মেনিয়ার লোকদের বুঝান হতো। খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ খ্রিষ্টাব্দে নারামসিন (Naram-Sin) আস্যাইরিয়ান আরমানাম (Assyrian Armanum) জয় করে ডিয়ারবেক্র অঞ্চলের আক্কাডিয়ান কলোনির অন্তর্ভূক্ত করে।
আর্মেনিয়ার আয়তন ২৯,৭৪৩ বর্গ কিমি বা ১১,৪৮৪ বর্গ মাইল। জনসংখ্যা ২,৯৭৪,৬৯৩, যা বিশ্বের ১৩৪ তম। আর্মেনিয়ার প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যা ঘনত্ব ১০১.৫ এবং সে হিসাবে আর্মেনিয়া পৃথিবীর ৯৯-তম জনবহুল দেশ। এখানে জলীয় ভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ৪.৭১ ভাগ। দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ৩,০৩৭ মার্কিন ডলার। গিনি (Gini) ৩০.৯ এবং এইচডিআই(HDI) ) .৭৩০। কারেন্সির নাম দ্রাম (Drum)
জাতিগত আর্মেনীয়রা নিজেদের ‘হায়’ (Հայ) বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। আর্মেনিয়ার ৯০% লোক হায় গোষ্ঠীভুক্ত। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে আর্মেনিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে দেশটিতে সোভিয়েত-পরবর্তী প্রথম সংবিধান পাস হয়। আর্মেনিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয় এবং এর ফলে অনেক প্রাণহানি ঘটে।
আর্মেনিয়ার প্রায় অর্ধেক এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে ২০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। দেশটির মাত্র ৩% এলাকা ৬৫০ মিটারের নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত। ৪৪৩০ মিটার উঁচু আরাগাৎস পর্বত আর্মেনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। ৩৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সর্বোচ্চ ৭২.৫ কিলোমিটার প্রস্থবিশিষ্ট সেভান হ্রদ আর্মেনিয়ার ভূগোলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হ্রদটি সমুদ্রতল থেকে ২০৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
খ্রিস্টানধর্ম, আরও বিশেষ করে বলতে গেলে, আর্মেনিয় অ্যাপসল গির্জার ধর্ম, আর্মেনিয়ার প্রায় ৯৫% অধিবাসীর ধর্ম। যিশুর দুই শিষ্য বার্থেলেমিউ ও থাদেউস প্রথম শতকেই এখানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। ৩য় শতকে আর্মেনিয়ার রাজা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। এরপর তিনি খ্রিস্টকে দেশটির রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে প্রচলিত করেন। এছাড়া দেশটিতে স্বল্পসংখ্যক ইহুদি, ইয়াজিদি ও মুসলমান অধিবাসী বসবাস করেন। আর্মেনিয়ার ৯৮% অধিবাসী আর্মেনীয় ভাষায় কথা বলে থাকেন। আর্মেনীয় ভাষা দেশটির রাষ্ট্রভাষা। আর্মেনীয় ভাষাকে পূর্ব ও পশ্চিম এ দুইটি সাহিত্যিক আদর্শ ভাষায় ভাগ করা যায়। আর্মেনীয়রা স্কুলে রুশ ও ইংরেজি- দুই বিদেশি ভাষা সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। তবে ইদানিং ইংরেজির আধিপত্য বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে রুশ আধিপত্য।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগস্ট আর্মেনিয়ার বর্তমান পতাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়।
মরক্কো (Morocco) : ইতিহাস ও নামকরণ
মরিশাস (Mauritius) : ইতিহাস ও নামকরণ
মোজাম্বিক (Mozambique): ইতিহাস ও নামকরণ
এশিয়া
আফগানিস্তান (Afghanistan) : ইতিহাস ও নামকরণ
আযারবাইজান (Azerbaijan) : ইতিহাস ও নামকরণ
আর্মেনিয়া (Armenia) : ইতিহাস ও নামকরণ
বাহরাইন (Bahrain) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।