আর্য শব্দের অর্থ
সিন্ধু-সভ্যতা পতনের পর ভারতে অভিযানকারীরা নিজেদেরকে ‘আর্য’ বলতো। সংস্কৃতে ‘আর্য’ (অৎুধ) শব্দটিকে প্রাচীন পার্সিয়দের ধর্মগ্রন্থ আবেস্তায় ‘আইর্য’ (অরৎুধ) আর প্রাচীন পার্সিয় সাধারণ ভাষায় ‘আরীয়’ (অৎরুধ) বলা হতো। আর্য শব্দের সাধারণ অর্থ হলো ‘বিশ্বস্ত মানুষ’ বা ‘একই জাতির মানুষ’। তবে বেদের অনুসারী বা বেদ রচনাকারীরা নিজেদের ভারতের প্রাচীন অধিবাসীদের চেয়ে আলাদা, শ্রেষ্ট, সভ্য ও উন্নত জাতি মনে করে পার্থক্য বোঝাতে নিজেদের ‘আর্য’ এবং ভারতের আদি অধিবাসীদের ‘অনার্য’ বলত। অনার্যদের আর্যরা শত্রু মনে করত বলে আর্য-গ্রন্থে তাদের দাস বা দস্যু হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ অনার্য মানেই দাস বা দস্যু।
আর্যদের উৎস
একদল মানুষ আনুমানিক ১ লাখ ২৫ হাজার বছর পূর্বে আফ্রিকা থেকে বের হয়ে ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ৭৫ হাজার বছর পূর্বে তাদের একটি দল আরব উপদ্বীপে, ৬০ হাজার বছরের ভিতরে এশিয়া সংলগ্ন ইউরোপে এবং ৪০ হাজার বছরের মধ্যে ইউরোপের রাইন নদী থেকে তুরস্ক পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫ হাজার বছরের দিকে এদের একটি উপদল দানিয়ুব নদীর তীরে বসবাস করা শুরু করে। এদেরই একটি দল দার্দেনেলিশ প্রণালী হয়ে এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫ হাজার বৎসরের দিকে এরা ইউফ্রেটিস-টাইগ্রিস নদী পার হয়ে মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এদের একটি দল চলে ইউরোপের দিকে এবং অপর দলটি চলে আসে ইরানের দিকে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ অব্দের দিকে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীরা ভারতে প্রবেশ করে। ইরানে যারা থেকে গিয়েছিল তাদেরকে বলা হয় ইন্দো-ইরানীয়। ভারতে যারা প্রবেশ করেছিল, তাদেরকে বলা হয় আর্য। আর্যদের ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে ভারতে প্রবেশের প্রক্রিয়াটি ১৮০০ থেকে ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত চলেছিল।