আলতাফ মাহমুদ রক্তে রাঙানো সুরের জাদুকর

ড. মোহাম্মদ আমীন

আলতাফ মাহমুদ রক্তে রাঙানো সুরের জাদুকর

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানখ্যাত সুরকার এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে  ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডের বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়। চালানো হয়  অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ধারণা করা হয়, ওই দিনই তাঁকে হত্যা করা হয়।

 তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে  ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত গাইতেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের গানটিতে তিনি সুর সংযোজন করেন। গানটির প্রথম সুরকার আব্দুল লতিফ হলেও পরবর্তীকালে আলতাফ মাহমুদের সুরটিই গৃহীত হয়। এই সুরটি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে জহির রায়হান তাঁর জীবন থেকে নেয়া  চলচ্চিত্রে  ব্যবহার করেন। বর্তমানে এই গানটি হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশ ও জাপানিসহ ১২টি ভাষায় গাওয়া হয়। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার ২০টি শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় গানটি তৃতীয় স্থান লাভ করে

আলতাফ মাহমুদের পিতার নাম  নাজেম আলী হাওলাদার। আলতাফ মাহমুদ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে  মেট্রিকুলেশন  পাশ করে বিএম কলেজে ভর্তি হন। পরে  চিত্রকলা শেখার জন্য ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে ভর্তি হন। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন আলতাফ মাহমুদ গান গাইতে শুরু করেন। তিনি প্রথমে প্রসিদ্ধ ভায়োলিনবাদক সুরেন রায়ের কাছে সংগীতে তালিম নেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সারা আরা মাহমুদ এবং তাঁদের মেয়ের নাম শাওন মাহমুদ।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসংগীত গাইতেন।   ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারি আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের গানটিতে তিনি সুর সংযোজন করেন। গানটির প্রথম সুরকার আব্দুল লতিফ হলেও পরবর্তীকালে আলতাফ মাহমুদের সুরটিই গৃহীত হয়। এই সুরটি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে জহির রায়হান তার চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া-তে ব্যবহার করেন।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় আসেন এবং ধুমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংস্থার ‘সংগীত পরিচালক’ পদে উন্নীত হন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে “ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে” আলতাফ মাহমুদ আমন্ত্রিত হন, কিন্তু করাচিতে সরকার তাঁর পাসপোর্ট আটকে দেয়। ফলে তিনি যেতে  পারেননি। তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খাঁ’র কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতবিষয়ক তালিম নিয়েছিলেন।১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আলতাফ মাহমুদ করাচি বেতারে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। তিনি ‘ইত্তেহাদে ম্যুসিকি’ নামে দশ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা ও পরিচালনা করতেন।

করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর আলতাফ মাহমুদ ১৯টি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তন্মধ্যে জীবন থেকে নেয়া, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, সংসার, আঁকাবাঁকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, কখগঘঙ, কুচবরণ কন্যা, সুযোরাণী দুয়োরাণী, আপন দুলাল, সপ্তডিঙ্গা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি রাজনীতি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথেও জড়িত ছিলেন। চিত্রশিল্পী হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে আলতাফ মাহমুদকে মরণোত্তর একুশে পদক এবং ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তার শ্রদ্ধার প্রতি সম্মান জানিয়ে   প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহিদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। তাঁর কয়েকটি জনপ্রিয় গান:

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

এই  চৈতালী রাতে

ঐ আঁখির কাজলে লিখে যাই !!

সখীরে সখী কেমনে ধরিবো হিয়া

পাগলা মনটারে তুই বাঁধ

পাগলা তুই ভবের রীতি


শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক

 

Language
error: Content is protected !!