আশীর্বাদ দোয়া : আদব ও আদাব
ড. মোহাম্মদ আমীন
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘আশীর্বাদ(আশিস্+√বদ্+অ)’ শব্দের অর্থ আশীর্বচন।বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘আশীর্বচন (আশিস্+বচন)’ শব্দের অর্থ কল্যাণ বা মঙ্গলসূচক উক্তি, শুভেচ্ছা, দোয়া ইত্যাদি।অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত আরবি ‘দোয়া’ শব্দের অর্থ— প্রার্থনা, আশীর্বাদ, মঙ্গলকামনা, শুভেচ্ছা ইত্যাদি।
আভিধানিক অর্থ বিশ্লেষণে দেখা যায়— ‘আশীর্বাদ’ ও ‘দোয়া’ পরস্পর সমার্থক। বিভিন্ন প্রয়োগ ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করে বলা যায় উভয় শব্দ একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় এবং হয়। যেমন: (১) দোয়া করি, জীবনে অনেক বড়ো হও। (২) আশীর্বাদ করি, জীবনে অনেক বড়ো হও। তবে, ‘দোয়া’ আরবি ভাষা থেকে আগত বলে মুসলিমদের মধ্যে শব্দটির প্রচলন ‘আশীর্বাদ’ শব্দটির চেয়ে বেশি। একসময় মুসলিমরা ‘আশীর্বাদ’ শব্দটি খুব কমই ব্যবহার করতেন। এখন অবশ্য মুসলিমদের মধ্যেও ‘আশীর্বাদ’ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। তবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ‘দোয়া’ শব্দটির ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। তারা সাধারণত ‘আশীর্বাদ’ শব্দটিই বেশি ব্যবহার করেন। ‘আশীর্বাদ’ ও ‘দোয়া’ শব্দের ব্যবহারে অর্থগতভাবে ছোটো-বড়ো কিংবা ধনী-গরিব কোনো পার্থক্য নেই— পার্থক্য কেবল শব্দের উৎস বিবেচনায় আমাদের স্বভাবজাত প্রয়োগে।
আদব ও আদাব
‘আদব’ ও ‘আদাব’ দুটিই আরবি থেকে বাংলায় আগত অতৎসম (বিদেশি, আরবি) শব্দ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, আরবি শব্দ ‘আদব’ এর অর্থ শিষ্টাচার, ভদ্রতা, বিনয়, নম্রতা, শ্রদ্ধাপ্রদর্শন প্রভৃতি। ‘আদাব’ শব্দটিও আরবি। একই অভিধানমতে, আরবি শব্দ থেকে সৃষ্ট ‘আদাব’ শব্দের অর্থ অভিবাদনসূচক উক্তি, ভালো থাকুন, মঙ্গল হোক, সালাম, অভিবাদন প্রভৃতি। মুসলিম শাসনামলের প্রথম থেকে, ‘আদাব’ শব্দটি দিয়ে পরস্পর সম্মান প্রদর্শন করার জন্য ব্যবহার হতে শুরু হয়। শাসকবর্গ উৎস ও অর্থ বিবেচনায় আরবি হিসেবে ‘আদাব’ শব্দটি পছন্দ করতেন। হিন্দু রাজন্যবর্গ মুসলিম শাসকদের সন্তুষ্ট করার জন্য ‘আদাব’ বলে সম্মান প্রদর্শন শুরু করেন। প্রত্যত্তুরেও বলা হতো— আদাব। মুসলিম শাসকবর্গও হিন্দু রাজন্যবর্গ বা প্রশাসকগণকে ‘আদাব’ শব্দে সম্মান প্রদর্শন করতেন। ফলে সাধারণ্যে শব্দটি আরবি হওয়া সত্ত্বেও অনারব শব্দ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। এখন অনেকে জানেন না যে, ‘আদাব’ আরবি।
সূত্র: বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবিলিকেশন্স লি.।