আসামের বাংলা ভাষা আন্দোলন
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে বাংলায় কথা বলার কারণে অসমিয়রা আসামের বাঙ্গালিদের উপর আক্রমণ করে বসে। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আসামের গোয়াল পাড়া জেলায় ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলন শুরু হয়। অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় দু লক্ষাধিক বাঙ্গালি উত্তরবঙ্গ ও অন্যান্য স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। অসমিয়া ভাষাকে মাতৃভাষারূপে গ্রহণ করার শর্তে তাদের আসামে পুনর্বাসন করা হয়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ও ২২ শে এপ্রিল আসামের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভায় অসমিয়া ভাষাকে আসামের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের দাবি উঠে। সংখ্যাঘরিষ্ঠতার কারণে এ প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং কার্যকর করার জন্য মন্ত্রিসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তে বাঙ্গালিরা ক্ষুব্ধ হয়। প্রদেশ জুড়ে সৃষ্টি হয় প্রবল উত্তেজনা। অসমিরা আবার ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলন শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২ ও ৩ মে আকর্ষণীয় উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘নিখিল আসাম বাঙ্গালা ভাষা সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিন অসমিয়রা বাঙ্গালিদের উপর হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে।
সরকারি হিসাব মতে চল্লিশের অধিক লোক নিহত হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ১০ সহস্রাধিক বাড়ি। ৫০ হাজার লোককে বসতবাটি হতে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জুলাই আসামের রাজ্যভাষাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা বিধান পরিষদে আসামের রাজ্যভাষাকে অসমিয়া করার পক্ষ বক্তব্য দেন এবং ১৪ অক্টোবর তীব্র বিতর্কের পর কেবল কাছাড়ের জন্য বাংলা ভাষার ব্যবহার স্বীকার করে নিয়ে মহকুমা পরিষদের উপর বাংলা ভাষার ভাগ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করার পরও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। ২৪ অক্টোবর গৃহীত হয় আসাম সরকারি রাজ্যভাষা বিল। বাংলা ভাষার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। বাংলা ভাষার প্রাদেশিক মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে ১৯ মে হতে সমগ্র কাছাড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে রাাজ্য সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেন। আন্দোলনকারীরা বাংলা ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় জনসাধারণের উপর কোনোরূপ সতর্কীকরণ ছাড়া পুলিশ গুলি ছুড়লে সর্বমোট ১১ জন ভাষাসৈনিক শহিদ হন।