আয়ারল্যান্ড (Irelan) : ইতিহাস ও নামকরণ

আয়ারল্যান্ড (Irelan)

 আয়ারল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। আধুনিক সার্বভৌম রাষ্ট্রটি আয়ারল্যান্ড দ্বীপের পাঁচ-ষষ্ঠাংশ নিয়ে গঠিত।  আয়ারল্যান্ড ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা দাবি করে এবং ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য হতে ঘোষণা করে। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর অ্যাঙ্গলো-আইরিশ চুক্তি সম্পাদিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে  রিপবালিক অ্যাক্ট জারি করা হয়। আয়ারল্যান্ডের ম্যাপ দেখতে কোয়ালা ভল্লুকের মতো।

প্রোটো- সেলটিক ভাষায় আয়ার (Eire)  শব্দের অর্থ উর্বর স্থান (the fertile place)। আবার অনেকের মতে, সেলটিক উর্বরতা দেবীর নাম ছিলেন আয়ারা বা ইরু (Eriu)। এ দেবীর নাম হতে আয়ারল্যান্ড নামের উদ্ভব। যার অর্থ ইরু বা আয়ার এর ভূমি। যার ব্যখ্যাময় অর্থ হচ্ছে : উর্বরতার দেবী ইরু বা আয়ারের স্থান।

অনেকে বলেন, আয়রন হতে আয়ারল্যান্ড নামের উদ্ভব। তারা বলেন, আয়ারল্যান্ড অর্থ ল্যান্ড অব আয়রন বা আয়রন ল্যন্ড। তবে এটি নিছক প্রবাদ। বস্তুত উর্বরতা হচ্চে আয়ারল্যান্ড নামের মুল উৎস।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের আয়ারল্যান্ডের পতাকা প্রথম গৃহীত হয়। ইতালি ও আয়ারল্যান্ডের ম্যাপ চিহ্নিত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। উভয় দেশের পতাকার অনেকটা মিল রয়েছে।

আয়ারল্যান্ডের আয়তন ৭০,২৭৩ বর্গকিলোমিটার বা  ২৭,১৩৩ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ২.০০%। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে মোট জনসংখ্যা ৪৬,০৯,৬০০ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৫.৩। আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীদের আইরিশ বলা হয়। ডাবলিন দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। আইরিশ ও ইংরেজি দেশটি দাপ্তরিক ভাষা। দেশটির জনগণের ৮৪.৫% শ্বেত আইরিশ।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, আয়ারল্যান্ডের জিডিপি (পিপিপি) ২৫০.২৮৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৫৩,৮৪১ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ২২৭.৪৯৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪৮,৯৩৯ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ইউরো। মাথাপিছু আয় বিবেচনায় আয়ারল্যান্ড পৃথিবীর ১৪-তম ধনী দেশ।

আইরল্যান্ডের পুরুষের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, মহিলাদের ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। ৯০% আইরিশ রোমান ক্যাথলিক, তবে ৩০% কখনও গির্জায় যায় না। ৫৭% আইরিশ চশমা বা কন্টাক্ট গ্লাস পরে। অস্ট্রেলিয়ার ৫০% এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪% অধিবাসী নিজেদের আইরিশ বংশোদ্ভুদ দাবি করে। আয়ারল্যান্ডের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৮০ মিলিয়ন আইরিশ বংশোদ্ভদ লোক বাস করে। আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের একমাত্র দেশ, যেখানে মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যাবশ্যক না হলে এখনও গর্ভপাত করা নিষিদ্ধ।

অ্যাংলো-আইরিশ পদার্থবিদ জন টেন্ডল (John Tyndall) প্রথম গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করেন। আইরিশ ম্যান জেমস হুবান (James Hoban) হোয়াইট হাউজের নক্সাকার। বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ তৈরি করেছিলেন একজন আইরিশ। আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী  উইলয়াম এডওয়ার্ড উইলসন প্রথম যথার্থভাবে সূর্যের তাপমাত্রা নির্ণয় করে প্রমাণ করেন যে, সূর্যের তাপমাত্রা ৬০৫৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

৭০ % বিবাহিত আইরিশ নারী স্বামী-স্ত্রী ছাড়া বিদেশে ছুটি কাটাতে গিয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ৯০% আইরিশ পুরুষ ঠিক একই কাজটি করে। তাদের দাম্পত্য জীবনের গড় বয়স ১৩ বছর। তবে স্বামীস্ত্রী পরস্পরকে তালাক দেয় না। বরং তালাকের মতো জটিল আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে নতুন সঙ্গী বা সঙ্গিীন খুঁজে নিয়ে আনন্দে জীবন কাটায়। ৫০০০ কপি গানের সিডি এবং ৩০০০ কপি বই বিক্রি হলে ওই সিডি ও বই বেস্ট সেলার এর তালিকায় ওঠে যায়।

আইরিশরা গড়ে প্রতিবছর ১৩১.১ লিটার বিয়ার পান করে। চেক রিপাবলিক এর পর বিয়ার পানে এরা বিশ্বে দ্বিতীয়। আয়ারল্যান্ড সাপমুক্ত দেশ। এখানে কোনো সাপ নেই। মোবাইল ফোনের সংখ্যা জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ডাবলিনে অবস্থিত রোটুন্ডা হাসপতাল ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে  প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি অবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান পৃথিবীর প্রাচীনতম মাতৃত্ব হাসপাতাল। আইরিশ ক্যাপ্টেন জেমস বয়কট (Captain James Boycott) এর নাম হতে বয়কট শব্দটির উৎপত্তি।

আয়ারল্যান্ডের ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ একই নামে পরিচিত। বাকি এক ষষ্ঠাংশের নাম উত্তর আয়ারল্যান্ড। এটি এখনও যুক্তরাজ্যের অংশ। গালিভার্স ট্রাভেলস এর লেখক জনাথন সুইফট (Jonathan Swift),  ড্রাকুলার লেখক ব্রাম স্টকার (Bram Stoker) এবং ইউলিসেস (Ulysses) এর লেখক জেমস জয়সি (James Joyce) ছিরেন আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী।

জার্মানি (Germany) : ইতিহাস ও নামকরণ

গ্রিস (Greece) : ইতিহাস ও নামকরণ

হাঙ্গেরি (Hungary) : ইতিহাস ও নামকরণ

আইসল্যান্ড (Iceland) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

 

 

Language
error: Content is protected !!