ইকড়ি মিকড়ি : অসাধারণ অর্থপূর্ণ একটি ছড়া

ইকড়ি মিকড়ি : অসাধারণ অর্থপূর্ণ একটি ছড়া
“ইকড়ি মিকড়ি
চাম-চিকড়ি,
চামের কাঁটা মজুমদার।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ধেয়ে এল দামোদর

দামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি।
দাওয়ায় বসে চাল কাঁড়ি।
চাল কাঁড়তে হল বেলা,
ভাত খাওগে দুপুরবেলা।
ভাতে পড়ল মাছি,
কোদাল দিয়ে চাঁছি।
কোদাল হল ভোঁতা
খা কামারের মাথা ”
অনেক আগে ছড়াটি মুখস্থ করেছিলাম কিন্তু অর্থ জানতাম না। শিক্ষক বলতেন, ‘অর্থহীন, শিশুদের মজার জন্য রচিত।’ কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ পড়ে জানলাম, ছড়াটি অর্থহীন নয়। ছড়াকার অসাধারণ দক্ষতায় চিরন্তন বাংলার সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। প্রাচীন বাংলার মতো এখনও সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা অভিন্ন রয়ে গেছে। একটুও পরিবর্তন হয়নি। একটি ছোট্ট ছড়ায় ছড়াকার কিভাবে চিরন্তন বাংলাকে কালজয়ী ভাষায় তুলে ধরেছেন দেখুন :
ইকড়ি : গতিশীলভাবে কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ সংসার পরিপালনের জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করি]।
মিকড়ি : সীমায়িত কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ তারপরও হয় না, তাই আরও কিছু উপার্জনের চেষ্টা করি]।
চাম : (আমাদের) চড়ে বেড়ানোর বা রুজি-রোজগারের এলাকায়।
চিকড়ি : (ঘুরে ঘুরে) কর্মফল চয়ন করে আনি [রোজগার বা ফসল নিয়ে আসি]।
চামের কাঁটা মজুমদার : রাজকর্মচারী মজুমদার (আমাদের) সে (কর্ম) এলাকার পথের কাঁটা।
ধেয়ে এল দামোদর : তার ওপর ধেয়ে আসে ফড়ে-পাইকার দামোদর।
Dr.AMIN
ড. মোহাম্মদ আমীন

দামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি : ধেয়ে আসে তাদের (হাঁ করে গিলে খাওয়া) ভাণ্ড (হাঁড়ি) ও কুণ্ড (কুঁড়ি)।

দাওয়ায় বসে : (তার থেকে বেঁচে-বাঁচিয়ে) ঘরের দাওয়ায় বা দরজার সামনে বসে।
চাল কাঁড়ি : (ধান থেকে) চাল কুণ্ডন করে বের করি।
চাল কাঁড়তে হল বেলা : (এত সব করে) চাল কুণ্ডন করতে বেলা হয়ে যায়।
ভাত খাওগে দুপুরবেলা : (অতএব প্রথম প্রহরে আর খাওয়া নয়, একেবারে) দ্বিপ্রহরে খেয়ো।
ভাতে পড়ল মাছি : (কিন্তু খাবে কী করে! সে) অন্নে পড়েছে ছিঁচকে চোর (মাছি)।
কোদাল দিয়ে চাঁছি : থানা-পুলিশ (কোদাল) করে তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করি (চাঁছি)।
কোদাল হল ভোঁতা : (কিন্তু) থানা-পুলিশ (কোদাল) কাজ করে না (ভোঁতা)।
খা কামারের মাথা : (অতএব) থানা-পুলিশ সৃষ্টিকারী(কামারের) পাণ্ডাদের (মাথা) খাও।
সূত্র : বাংলা ভাষার মজা, পাঞ্জেরী, প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ।
ক্লিক করুন :
Language
error: Content is protected !!