ইতালি: মহামারি (Epidemic) ও সর্বমারি(Pandemic)-এর লালনাগার

ড. মোহাম্মদ আমীন

অগ্রন্থিত তথ্যে বলা হয়,  মানুষের জানামতে, খ্রিষ্টপূর্ব ১০০৮ অব্দে রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান ইতালির রাজধানী রোমে কারণ-অজ্ঞাত এক রোগ আঘাত হানে। এ রোগে তৎকালীন রোমের দুইতৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০৮ অব্দে আঘাত হানা সর্বমারি (Pandemic) এ রোগ রোম থেকে দ্রুত পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক গবেষণায় জানা যায়, বর্তমান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুটিই ছিল ওই সর্বমারি রোগের কারণ। প্রায় সাত বছরব্যাপী ( খ্রিষ্টপূর্ব ১০০৮—খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০) বিদ্যমান এ রোগে ইতালির অর্ধেকের বেশি লোক মারা গিয়েছিল।

ইতিহাসে লিপিবদ্ধ তথ্যমতে, বিশ্বে প্রথম সর্বমারি(Pandemic) আঘাত হানে(৪৩০খ্রিষ্টপূর্ব—৪২৬ খ্রিষ্টপূর্ব) বর্তমান ইতালির রাজধানী রোম এবং গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে; প্রায় একই সময়ে। তখন উভয় এলাকা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। রেকর্ডকৃত তথ্যমতে, প্রথম সর্বমারির (Pandemic) নাম ছিল এথেন্স প্লেগ (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০—খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৬)। এই সর্বমারিতে ইতালির একচতুর্থাংশ লোক মারা যায়। যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। রোগটা কী ছিল তখন জানা যায়নি। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গণসমাধিতে প্রাপ্ত দাঁত পরীক্ষা করে বলেন: যে ব্যাকটেরিয়া বর্তমানে টইফয়েড নামে পরিচিত রোগের কারণ, ওই ব্যাকটেরিয়াই ছিল এথেন্স প্লেগ-এর কারণ।

লিপিবদ্ধ দ্বিতীয় মহামারির নাম অ্যান্টোনাইন প্লেগ(১৬৫ খ্রিষ্টাব্দ—১৮০ খ্রিষ্টাব্দ)। এটি ইতালি ও এথেন্স উপকূলে আগত সেনাদের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকা থেকে দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক বছরের মধ্যে ইতালির ৫ মিলিয়ন লোক মারা যায়। তৃতীয় সর্বমারিরে ঐতিহাসিক নাম সাইপ্রিয়ানপ্লেগ (২৫১ খ্রিষ্টাব্দ–২৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)। এ সর্বমারির আক্রমণে একদিনেই ইতালির রাজধানী রোমের ৫০০০ লোক মারা গিয়েছিল। চতুর্থ সর্বমারি জাস্টিনাইন প্লেগ (৫৪১ খ্রিষ্টাব্দ-৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ) নামে পরিচিত। এটি শুরু হয় মিসর থেকে। মিশরে কর্তব্য শেষ করে কিছু রোমান সৈন্য দেশে ফিরলে রোমে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনায় চুমোচুমির কারণে ফ্লু-প্রকৃতির এ রোগ সৈনিকদের মাধ্যমে অল্পদিনের মধ্যে কনস্টান্টিনোপল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তারপর পুরো ইউরোপ। বাইজান্টাইন-রক্ষিত তথ্যমতে,  জাস্টিনাইন প্লেগ সর্বমারিতে একদিনেই ইতালির রাজধানী রোমের ১০,০০০ লোক মারা যায়।এর প্রকোপে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পুরো ইউরোপের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। পঞ্চম সর্বমারি কালো মৃত্যু (১৩৩১–১৩৫৩ খ্রিষ্টাব্দ) নামে কুখ্যাত প্লেগ । এ রোগে এককভাবে শুধু ইতালির ৯.৬ মিলিয়ন লোক মারা যায়। পুরো ইউরোপে মারা যায় ৩০ মিলিয়ন এবং সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ মিলিয়ন।

১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে চিন থেকে ছড়িয়ে পড়া (তৃতীয় প্লেগ নামে পরিচিতি) মহামারিতে ভারতের ১০ মিলিয়ন লোক মারা যায়।এরপর বলা যায় স্প্যানিস ফ্লু-এর কথা। স্প্যানিশ ফ্লুতে (১৯১৮-১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) মারা যায় ১০০ মিলিয়ন। ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ মিলিয়ন।  সর্বশেষ ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চিন সৃষ্ট এবং ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ইতালিতে।

মহামারি ও সর্বমারির ইতিহাসে দেখা যায়, বিশ্বে একদম আদি থেকে ইতালি ছিল মহামারির বিস্তার ও ধ্বংসন-ভূমি।  যেখান থেকে শুরু  হোক না কেন, ইতালি গিয়ে বিশ্বের সব সর্বমারি মনের সুখে নিধন করেছে মানুষ। এ পর্যন্ত  ইতালির প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মানুষ সর্বমারি রোগে মারা গেছে। আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর আর কোনো দেশে এককভাবে এত বেশি সংখ্যক লোক সর্বমারি রোগে মারা যায়নি। বলা হয়, যদি পৃথিবীর সবদেশে ইতালির মতো এত লোক সর্বমারি রোগে মারা যেত, তাহলে বর্তমান পৃথিবীর জনসংখ্যা দুইশ কোটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত।

কলেরা(Cholera), ইনফ্লুয়েঞ্জা(Influenza), টাইফয়েড(Typhus), গুটিবসন্ত(Smallpox), হাম(Measles), যক্ষ্মা(Tuberculosis), কুষ্ঠ(Leprosy), ম্যালেরিয়া(Malaria) ইয়েলো ফিভার(Yellow Fever) প্রভৃতি ছিল অতীতের উপদ্রুত মহামারি ও সর্বমারি রোগের কারণ। বর্তমানে মানুষ এসব রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টিকারী  কোভিড-১৯ রোগের প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হবে।

 দেখুন: স্পরাডিক এনডেমিক এপিডেমিক ও প্যানডেমিক


All Link

বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল

ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা

বাংলা সাহিত্যবিষয়ক লিংক

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩

কীভাবে হলো দেশের নাম

ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

দৈনন্দিন বিজ্ঞান লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৩

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৪

কীভাবে হলো দেশের নাম

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/১

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/২

বাংলাদেশের তারিখ

ব্যাবহারিক বাংলা বানান সমগ্র : পাঞ্জেরী পবিলেকশন্স লি.

শুদ্ধ বানান চর্চা প্রমিত বাংলা বানান বিধি : বানান শেখার বই

কি না  বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি

Language
error: Content is protected !!