ড. মোহাম্মদ আমীন
ইরিত্রিয়া (Eritrea)
ইরিত্রিয়ার আফ্রিকা মহাদেশের দেশ। এর পশ্চিমে সুদান, দক্ষিণে ইথিওপিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে জিবুতি। এর সরকারি নাম স্টেট অব ইরিত্রিয়া।
মধ্যযুগে ইরিত্রিয়া (Eritrea) অঞ্চল মেড্রি বাহরি (Medri Bahri) নামে পরিচিত ছিল। মেড্রি-বাহরি শব্দের অর্থ সমুদ্রের দেশ বা sea-land)। লোহিত সাগরের (Red Sea) প্রচীন গ্রিক নাম ইরাইত্রা থালাসা (Erythra Thalassa)) হতে ইরিত্রিয়া নামের উদ্ভব। অনেকের মতে ইরিত্রিয়া শব্দের অর্থ লাল বা লোহিত। লোহিত সাগর থেকে দেশটি ইরিত্রিয়া নাম গ্রহণ করে। ইরিত্রিয়া একটি জনপ্রিয় নাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেকগুলো রাস্তার নাম ‘ইরিত্রিয়া’-এর সম্মানে রাখা হয়েছে।
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ইতালিয়ান উপনিবেশ ‘ইতালিয়ান ইরিত্রিয়া’ প্রকাশে নামটি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ভূখ-টিকে ‘ইতালিয়ান পূর্ব-আফ্রিকার ইরিত্রিয়া গভার্নরেট’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইরিত্রিয়া ভূখ-টি ইথিওপিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ইরিত্রিয়ান লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা হয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের রেফারেন্ডামের মধ্য দিয়ে ইরিত্রিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের সংবিধানে দেশটির নাম রাখা হয় স্টেট অব ইরিত্রিয়া (State of Eritrea )।
ইরিত্রিয়ার মোট আয়তন ১,১৭,৬০০ বর্গকিলোমিটার বা ৪৫,৪০৫ বর্গমাইল। জলীয় ভাগের পরিমাণ ০.১৪%। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে মোট জনসংখ্যা ৬৩,৮০,৮০৩ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ৫১.৮। আয়তন বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ১০১-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় ১০৭-তম। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ইরিত্রিয়া পৃথিবীর ১৫৪-তম জনবহুল দেশ। ইরিত্রিয়ার জনগণের ৫০% খ্রিস্টান, ৪৮% মুসলিম এবং ২% স্থানীয় প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী।
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, ইরিত্রিয়ার জিডিপি (পিপিপি) ৭.৮১৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,১৯৫ ইউএস ডলার। অন্যদিকে ইরিত্রিয়ার জিডিপি (নমিনাল) ৩.৮৫৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৫৯০ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম নাকপা। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর আসমারা। ইতালির সঙ্গে স্বাতন্ত্র্যমূলক সম্পর্কের জন্য আসমারাকে ‘আফ্রিকার ইতালি’ (Italy’s African City) বা নতুন রোম (New Rome) বলা হয়।
ইরিত্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো সরকারি ভাষা নেই। তিগরিনাইয়া (Tigrinya) বহুল প্রচলিত ভাষা। তবে আরবি ও ইংরেজিও প্রচলিত। ইরিত্রিয়ার অধিবাসীদের বলা হয় ইরিত্রিয়ান। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৪০% যোদ্ধা ছিল মহিলা। এ যুদ্ধে ৩,৫০০ প্রশিক্ষিত কিউবান সৈনিক অংশগ্রহণ করেছিল। লোহিতা সাগার প্রতিবছর আধা ইঞ্চি করে ইরিত্রিয়াকে গ্রাস করছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ইরিত্রিয়া লোহিতসাগরে পরিণত হবে।
ইরিত্রিয়ার ঐতিহাসিক শহর আকসুম দক্ষিণ ইরিত্রিয়ায় অবস্থিত। কথিত হয় এটি সলোমন বাদশার (King Solomon) ছেলে ও সেবার রাণী (Queen of Sheba প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অভিমত আকসুম পৃথিবীর প্রাচীনতম মনুষ্য বসবাসের অন্যতম স্থান। তাই এটাকে পৃথিবীর শৈশবস্থানও বলা হয়। ইরিত্রিয়া পৃথিবীর কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে কেবল একটি মাত্র রাজনীতিক দল আছে। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার পুরো তটরেখা সংরক্ষিত। ইরিত্রিয়ার দালাক (Dahlak) দ্বীপপুঞ্জ মুক্তা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। তবে এ দ্বীপের প্রায় পুরোটাই বসতিহীন। দানাকিল, ইরিত্রিয়ার সবচেয়ে নিচুস্থান। এটি পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণস্থান হিসাবেও পরিচিত।
ইরিত্রিয়া ষোড়শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং পরবর্তী ৩শ বছর তা অব্যাহত থাকে। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি ইরিত্রিয়া ইতালির দখলে আসে এবং উপনিবেশ হয়ে যায়। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে এটি ইথিওপিয়া ও সোমালিয়ার সঙ্গে ইতালিয়ান ইস্ট আফ্রিকার একটি প্রদেশ হিসাবে আবির্ভূত হয়। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সৈন্য ইতালিয়ানদের তাড়িয়ে দেয় এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাতিসংঘের ম্যান্ডেটে তা শাসন করে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর ইরিত্রিয়ার বর্তমান পতাকাটি গৃহীত হয়। এর পূর্বে ব্যবহৃত পতাকাটি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে গৃহীত হয়েছিল।
ইরিত্রিয়ায় ১৪,০০০ প্রজাতির মাছ আাছে। তন্মধ্যে ১৭% মাছ ইরিত্রিয়া ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। এখানে ২৫০ প্রকার প্রবাল আছে। তন্মধ্যে ২০% এখানে ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার পর থেকে ইসাইয়াস আফওয়েরকি (Isaias Afwerki) ইরিত্রিয়ার প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট।
ইরিত্রিয়ায় আমন্ত্রণ ছাড়া বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া শোভনীয় মনে করা হয় না। আফার গোষ্ঠীর নারীরা সাধারণত অন্য কোনো পুরুষকে হত্যা করেনি এমন কোনো পুরুষের সঙ্গে প্রেম করে না। বীরত্ব এবং শত্রু দমনে পটুতাকে তাদের গোষ্ঠীতে খুব গৌরবের বিবেচনা করা হয়। শত্রুকে হত্যা করতে পারা প্রচলিত রীতি অনুসারে অত্যন্ত মর্যাদাকর বিবেচিত করা হয়। ইরিত্রিয়া খুব গরিব রাষ্ট্র। অধিকাংশ অধিবাসী দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।
ইকুয়েটরিয়াল গিনি (Equatorial Guinea) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র : কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।