ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর জেনারেল : সকল গভর্নর জেনারেল/২
ড. মোহাম্মদ আমীন
৮. স্যার জর্জ বার্লো (১৮০৫—১৮০৭))
বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা জর্জ বার্লো (Sir George Hilaro Barlow, 1st Baronet) ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই অক্টোবর থেকে ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত বাংলার ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে জানুয়ারি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই ডিসেম্বর মারা যান।
৯. লর্ড মিন্টো (১৮০৭—১৮১৩)
লর্ড মিন্টো (Gilbert Elliot-Murray-Kynynmound, 1st Earl of Minto) নামে সমধিক পরিচিত স্কটিশ কুটনীতিক ও রাজনীতিবিদ ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জে জুলাই থেকে ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত বাংলার গভর্নর জেনারেল ছিলেন। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে নন্দকুমারের বিচারের দায়ে কলকাতার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে তিনি নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু প্রস্তাবটি অগ্রাহ্য হয়। বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নর জেনারেল হিসেবে তিনি শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে পিন্ডারিদের নেতা আমীর খানকে বেরার-এ হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত রাখেন। পাঞ্জাবের শাসক রণজিৎ সিংয়ের সঙ্গে ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে অমৃতসর চুক্তি সম্পাদন ছিল লর্ড মিন্টোর একটি বড়ো বিজয়। লর্ড মিন্টো পশ্চিম দিকে ফরাসি দ্বীপ বুরঁবো ও মরিশাস দখল করেন এবং ওলন্দাজদের দখলকৃত অ্যামবয়না এবং ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে জাভা দ্বীপ দখল করেন। মন্টো ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে জুন মারা যান। ওয়েস্টমিনিস্টার এবেতে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
১০. ফ্রান্সিস রডন–হেস্টিংস (১৮১৩—১৮২৩)
অ্যাংলো-আইরিশ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ও সামরিক অফিসার ফ্রান্সিন রডন- হেস্টিংস (Francis Edward Rawdon-Hastings, 1st Marquess of Hastings) ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা অক্টোবর থেকে ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলার গভর্নর জেনারেল ছিলেন।
তিনি প্রতিপক্ষ শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণে কোনো প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন না করে নব নব এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তারপরও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তাঁর বিরুদ্ধে দূর্নীতি, অত্যাচার এবং অননুমোদিত যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ আনেন। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে দেশে ডেকে পার্লামেন্টে তাঁর বিচার করা হয়, তবে তিনি শেষ পর্যন্ত নিষ্কৃতিলাভ করেন। ইংল্যান্ডে তিনি একজন যুদ্ধংদেহী মনোভাবাপন্ন শাসক হিসেবে চিত্রিত হন। অভিযোগ ওঠে যে ধ্বংসাত্মক ব্যয়বহুল যুদ্ধে কোম্পানির জড়িয়ে পড়ার জন্য তিনিই দায়ী।
শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ও বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
সমগ্র শাসনামল জুড়ে হেস্টিংস ছিলেন শিক্ষা-সংস্কৃতির একজন উদার পৃষ্ঠপোষক। চার্লস উইলকিন্স কৃত ভগবদ গীতার অনুবাদের জন্য তিনি বিশেষ গৌরব বোধ করতেন। তিনি ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। তাঁর উৎসাহে ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রডন-হেস্টিংস ১৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই ডিসেম্বর আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে নভেম্বর মারা যান।
১১. জন অ্যাডাম (১৮২৩)
ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসক জন অ্যাডাম (John Adam) ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি থেকে ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অগস্ট পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়ার কোম্পানির নিয়োগে বাংলার ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা মে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৪ই জুন মারা যান।
১২. উইলিয়াম আমহার্স্ট (১৮২৩—১৮২৮)
ব্রিটিশ কুটনীতিদি ও ঔপনিবেশিক প্রশাসক উইলিয়াম আমহার্স্ট (William Pitt Amherst, 1st Earl Amherst) ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অগস্ট থেকে ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ পর্যন্ত বাংলার গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি যোগদানের পরপরই বার্মার রাজা আরাকান ও আসাম জয় করে বাংলার পূর্বাংশের দাবি করে বসেন এবং চট্টগ্রামের নিকটে শাহপরি দ্বীপ থেকে ইংরেজ সৈন্যবাহিনীকে বিতাড়িত করেন। ফলে আমহার্স্ট যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হন। বার্মার রাজা পরাজিত হয়ে শান্তির জন্য আবেদন করেন। ফলে ইয়ানডাবু চুক্তি (১৮২৬) দ্বারা শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে আসাম, আরাকান ও টেনাসেরিম ইংরেজদের নিকট প্রত্যার্পণ করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহিরা ব্যারাকপুরে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। হিন্দু সিপাহিরা জাতকে কলুষিত হবে বলে সমুদ্র পারাপারে আপত্তি জানায়। তাদের নির্মমভাবে দমন করা হয় এবং রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে ভরতপুরের জাট রাজা মারা গেলে জনৈক দুর্জন ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন। আমহার্স্ট সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করে ভরতপুর দুর্গ দখল করে পরলোকগত রাজার এক পুত্রকে অধীনতামূলক মিত্রতা গ্রহণ করার শর্তে সিংহাসনে বসান। আমহার্স্টের সময় ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জানুয়ারি ইংল্যান্ডের সমারসেট এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ কেন্ট এলাকায় মারা যান।
১৩. উইলিয়াম বাটারওয়ার্থ বেইলি (১৮২৮)
উইলিয়াম বাটারওয়ার্থ বেইলি এর পুরো (William Butterworth Bayley)। বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেইলি ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ থেকে ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত বাংলার ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালক ও চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দের জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে সুসেক্স-এ মারা যান।
১৪. লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক (১৮২৮—১৮৩৩)
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক (Lord William Henry Cavendish-Bentinck) ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জুলাই থেকে ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার গভর্নর জেনারেল ছিলেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলার বা প্রেসিডেন্সি অব ফোর্ড উইলিয়াম এর গভর্নর জেনারেল পদবি পরিবর্তন করে ভারতের গভর্নর জেনারেল করা হয়। বেন্টিংক ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে জানুয়ারি ১৬ বছর বয়সে রাজকীয় বাহিনীর কোল্ডসিট্রম গার্ড রেজিমেন্টে যোগদান করেন। ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি বেন্টিংক কর্ণেল পদে পদন্নোতি পান। ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মাদ্রাজের গভর্নর ছিলেন। ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে ১ জানুয়ারি তাকে মেজর জেনারেল পদে পদন্নোতি দেওয়া হয়। উপদ্বীপের যুদ্ধে যোগদানের পর, বেন্টিংককে সিসিলি দ্বীপের ব্রিটিশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলায় তাঁর শাসনামল ছিল মোটামুটি শান্ত। বাংলার গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি ইন্ডিয়ার গভর্নর জেনারেল হিসেব দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয় সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর : সকল গভর্নর
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর জেনারেল : সকল গভর্নর জেনারেল/১