Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
উদ্ভাবনশীলতায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারণ – Dr. Mohammed Amin

উদ্ভাবনশীলতায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারণ

ড. মোহাম্মদ আমীন

‘গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স-২০১৮’ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম উদ্ভাবনশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশ। উদ্ভাবন বিবেচনায় প্রথমে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চিন ও মালয়েশিয়া। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানে যথাক্রমে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মঙ্গোলিয়া। উদ্ভাবনশীলতা বিবেচনায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এমন কি নেপালের চেয়েও পিছিয়ে। কিন্তু কেন এমন অবস্থা?

প্রথম শ্রেণি থেকে একটা শিশুর মাথায় ও ঘাড়ে বইয়ের যে বোঝা তুলে দেওয়া হয় তা বহন করতে করতে মেধার পঞ্চাশ ভাগ শেষ হয়ে যায়। উচ্চ জিপিএ- সনদ লাভের জন্য শুধু নাম্বারের পেছনে ছুটে। ফলে তাদের সৃজনশীলতা মুখ থুবরে পড়ে থাকে নাম্বারের নিচে। মা বাবারাও চায় না তাদের ছেলে সৃজনশীল হোক, তারা চাই তাদের সন্তান নাম্বারশীল হোক।

বিষয় আর বিষয় এবং বই আর বই মুখস্থ করে শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ে ভাসা ভাসা অল্পস্বল্প কিছু হয়তো শিখতে পারে কিন্তু ভালোভাবে কিছুই শিখতে পারে না। সবকিছু শিখতে গিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে কিছুই শিখতে পারে না। তাদের এখন জলপান করতে গিয়ে নদীতে ডুবে বাতাসের জন্য হাহাকার করার অবস্থা। বিশ্বের কোথাও একজন শিক্ষার্থীর ঘাড়ে এত বিষয় চাপিয়ে দেওয়া হয় না। বিজ্ঞানপ্রধান বিশ্বে সব বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান জানার চেয়ে একটা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়াকে উদ্ভাবনশীলতার প্রথম সোপান মনে করা হয় এবং সেভাবে তাদের কম বিষয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞ করে তোলা হয়। এ বিষয়টা আমাদের দেশে চরমভাবে অবহেলিত।

সামরিক বাহিনীতে সরকারের ব্যয় বেশি বলে ওখানে ক্যারিয়ার গঠনকে মর্যাদাকর মনে করা হয়। ফলে এইচএসসি পাস করার পর মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটা অংশ সামরিক বাহিনীতে ঢুকে যায়। যে ছেলেগুলো সামরিক বাহিনীতে যায় তাদের মেধা একটি বিশেষ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রকৃত মেধাবীদের সিংহভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সৃজনশীল নয়, এরকম প্রশ্ন দিয়ে কাকাতুয়ার মতো মুখস্থবিদ্যার শক্তি যাচাই করা যায়, জিনায়সনেস জানা যায় না। দেড় লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিন হাজারকে যোগ্য নির্বাচন করা হয়, তাহলে বাকিরা কী অযোগ্য? স্বাভাবিকভাবে বাকি এক লাখ সাতচল্লিশ হাজারে মেধাবী ও জিনিয়াসের সংখ্যা নির্বাচনী পরীক্ষায় যোগ্য-বিবেচিত তিন হাজারের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু তারা অকার্যকর ভর্তি পরীক্ষার ফাঁদে পড়ে অযোগ্য হয়ে যায়। এদের অনেকে চলে যায় বিদেশে পড়তে এবং অনেকে আর ফিরেই আসে না। ফলে বাংলাদেশের উদ্ভাবনশীলতা বিদেশে গিয়ে লালিত হয় বা গলিত হয়।

বুয়েটের মতো প্রাযুক্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার অবস্থা আরো শোচনীয়। পূর্বের পরীক্ষাসমূহে জিপিএ ফাইভ না পেলে ভর্তির দরখাস্তই করা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় যারা ভালো নাম্বার পায় কিংবা ভালো নাম্বার পাওয়ার জন্য মেধাবী হিসেবে পরিচিত হয় অথবা যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদের মেধাবী বলার চেয়ে মুখস্থবি বলাই সংগত। জিনিয়াসরা সাধারণত বাংলাদেশের মতো মুখস্থবি নির্ভর প্রশ্নপত্রমণ্ডিত প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষায় টিকে না। তারা সৃজনশীল বলে সৃষ্টির নেশায় এতই বিভোর থাকে যে, কোন দেশের রাজধানী কোথায়, কোন নায়িকার চুলের রং গোলাপি কিংবা রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা উপন্যাসে কয়টি শব্দ আছে– এসব সাধারণ বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় পায় না। ফলে জিনিয়াস ও মেধাবীদের এক বিরাট অংশ নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ হতে ছিটকে পড়ে। অন্যদিকে যারা চিকিৎসক প্রকৌশলী কিংবা কৃষিবিদ হিসেবে পড়ার সুযোগ পান তাদের সবাই যে মেধাবী এমনটি বলা যায় না।

যে কারণেই হোক না কেন, প্রাযুক্তিক বিদ্যাধারীদের অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে বিষয়ভিত্তিক পেশায় না গিয়ে এমন সব পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে যেখানে তাদের প্রাযুক্তিক জ্ঞান এক বিন্দুও কাজে লাগানো যায় না। বলা হয় ক্ষমতার জন্য বা অতিরিক্তি আয়ের জন্য এমন করে থাকে। বুয়েট-ম্যাডিকেলের অনেক ছাত্রকে প্রশাসন, পুলিশ, কর, শুল্ক প্রভৃতি ক্যাডারে চাকুরি করতে দেখা যায়। পদার্থ-রসায়ন থেকে পাস করে পুলিশের ওসি হয়, হাতে লাঠি পায়; পদার্থবিদ হলে তো এটি আর পাবে না। ফলে উদ্ভাবনশীলতা হারিয়ে যায়।

রাজনীতিক অস্থিরতা এবং যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার তাদের কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়নকে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে অধিক আগ্রহী। এরূপ উন্নয়ন করতে গিয়ে নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয় দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন। কিন্তু একটি জাতিকে প্রকৃত অর্থে উদ্ভাবনশীল জাতিতে পরিণত করতে হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে যে, পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয় সে বোধ অনেকের থাকলেও দেখানোর সুযোগ হয় না।

আকস্মিক মেধা এবং স্বশিক্ষিত প্রতিভার স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। এদের স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পদ্ধতিও নেই। অথচ কোটার অভাব নেই। পৃথিবীর সব বড়ো বাড়ো বিজ্ঞানী ও সৃজনশীলগণ প্রাতিষ্ঠানিক সনদ ছাড়াই খ্যাতিমান হয়েছেন। সনদ প্রতিভাকে এত কঠিনভাবে ঢেকে রাখে যে, সনদের আড়ালে প্রতিভা ও মেধা ঢাকা পড়ে যায়। এজন্য আঅনেকের বিস্ময়কর আবিষ্কারও সহায়তার অভাবে হারিয়ে গেছে।

যেসব দেশ উদ্ভাবনশীলতায় এগিয়ে তাদের শিক্ষাব্যবস্থাপনা ও বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উদ্ভাবন ব্যয় বাড়িয়েছে বলেই উদ্ভাবনশীলতা বেড়েছে। এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যবস্থাপনাকে রাজনীতির উর্ধ্বে রেখে জ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে তা করা হয়নি। উদ্ভাবন ব্যয়ের পরিবর্তে প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিবছর প্রতিরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রাশাসনিক খাতে যে ব্যয় করা হয় তার অর্ধেক কমিয়ে উদ্ভাবনে খরচ করা গেলে বাংলাদেশ উদ্ভাবনশীলতায় সিঙ্গাপুরকে পিছিয়ে দিতে পারবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *