Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
উপমা – Dr. Mohammed Amin

উপমা

অভিজিৎ অভি

একটা কিছুর সঙ্গে আরেকটার মিল বা সাদৃশ্য বর্ণনা করা বা দুটি বস্তুর তুলনা করাই উপমা। যেমন ‘মেয়েটি দেখতে আকাশের পরির মত সুন্দর’। এখানে একজনের সাথে আকাশের পরির তুলনা করা হয়েছে। সাহিত্যে উপমা বহুলভাবে চর্চা করা হয়। সাধারণ

অভিজিৎ অভি

ভাষায়, সংবাদ রচনায়, বিজ্ঞপ্তিতে, বৈজ্ঞানিক বা গবেষণামূলক নিবন্ধে উপমার ব্যবহার কম হয়ে থাকে। অলংকারশাস্ত্রে উপমা অর্থালংকার হিসেবে আলোচিত হয়। সুসাহিত্যিকরা বুদ্ধিদীপ্ত আকর্ষণীয় উপমা ব্যবহার করে পাঠকের হৃদয়ে দাগ কেটে দেন। যে সাহিত্যিক উপমা নির্মাণে যত দক্ষতার পরিচয় দেন, তার সাহিত্যও তেমন সুখপাঠ্য হয়।

বাংলা ভাষায় উপমার চারটি অঙ্গ রয়েছে। এগুলো হল উপমান, উপমেয়, সাধারণ ধর্ম এবং সাদৃশ্যবাচক শব্দ। যে জিনিসের সঙ্গে তুলনা করা হয় সেটি উপমান। আমাদের উদাহরণে ‘আকাশের পরি’ হচ্ছে উপমান। যার সঙ্গে তুলনা করা হয় সেটি হল উপমেয়। উদাহরণে ‘মেয়েটি’ হচ্ছে উপমেয়। উপমান ও উপমেয় এর মধ্যে যে সাদৃশ্য তাই হল সাধারণ ধর্ম। এখানে সাধারণ ধর্ম ‘সৌন্দর্য’। আর উপমান ও উপমেয় মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি অব্যয়পদ ব্যবহার করতে হয় যাকে সাদৃশ্যবাচক শব্দ বা তুলনাবাচক শব্দ বলে। এখানে সাদৃশ্যবাচক শব্দ হল ‘মত’। সবসময় উপমার সবগুলো অঙ্গ নাও থাকতে পারে। যদি উপমার সবগুলো অঙ্গ বিদ্যমান থাকে তবে তাকে পূর্ণোপমা বলা হয়। যেমন

শুভ খণ্ডমেঘ

মাতৃদুগ্ধপরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত

সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মত

নীলাম্বরে শুয়ে”

– যেতে নাহি দিব, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এখানে উপমান ‘বাছুর (সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎস)’, উপমেয় ‘শুভ্র খণ্ড মেঘ’, সাধারণ ধর্ম ‘শুয়ে থাকা’ আর সাদৃশ্যবাচক শব্দ ‘মত’। যদি এই চারটি অঙ্গের একটি বা একাধিক অঙ্গ অনুপস্থিত বা উহ্য থাকে তবে তাকে লুপ্তোপমা বলা হয়। কয়েকটি নমুনা দেখা যাক:

১। “পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”

-হে মহাজীবন, সুকান্ত ভট্টাচার্য

এখানে উপমান ঝলসানো রুটি, উপমেয় পূর্ণিমার চাঁদ, সাদৃশ্যবাচক শব্দ যেন আর সাধারণ ধর্ম অনুপস্থিত। পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে রুটির কোথায় মিল আছে কবি তা উল্লেখ করেননি। এমন আরেকটি নমুনা “গাখানি তার শাঙন মাসের যেন তমাল তরু”- নকশী কাঁথার মাঠ, জসীমউদদীন

২। “কি কুক্ষণে দেখেছিলি, তুইরে অভাগী,

কাল পঞ্চবটীবনে কালকূটে ভরা

এ ভুজগে?

-মেঘনাদবধ কাব্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত

এখানে উপমান হল ভুজগ বা সাপ, উপমেয় রাম ও লক্ষ্মণ উহ্য। সাধারণ ধর্ম কালকূটে ভরা। সাদৃশ্যবাচক পদ অনুপস্থিত। অনুরূপ আরেকটি উদাহরণ:

“পত্রপুটে রয়েছে যেন ঢাকা

অনাঘ্রাত পূজার ফুল দুটি। ”

-নিদ্রিতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এখানে উপমান পূজার ফুল, উপমেয় রাজকন্যার কুচযুগল উহ্য। সাধারণ ধর্ম অনাঘ্রাত এবং সাদৃশ্যবাচক শব্দ অনুপস্থিত।

৩। “তড়িৎ বরণী হরিণ নয়নী

দেখিনু আঙিনা মাঝে”

-চণ্ডীদাস

খানে উপমেয় ছাড়া বাকি সব অঙ্গই অদৃশ্য। উপমান, সাধারণ ধর্ম, সাদৃশ্যবাচক শব্দ কিছুই না থাকা সত্ত্বেও এটি একটি সার্থক উপমা হিসেবে স্বীকৃত।

উপমা কেবল পদ্যে থাকবে এমন কোন কথা নেই। তা গদ্যেও থাকে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্প থেকে আমার একটি প্রিয় উপমা উদ্ধৃত করছি:

“মুখের প্রতি চাহিবামাত্র টের পাইলাম, বয়স যাই হোক, খাটিয়া খাটিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার শরীরে আর কিছু নাই। ঠিক যেন ফুলদানীতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মত। হাত দিয়া এতটুকু স্পর্শ করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে।”

আপনারাই বলুন তো এই উপমার কোন অঙ্গ কী?

সূত্র: উপমা, অভিজিৎ অভি, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)


All Link

বাংলা সাহিত্যবিষয়ক লিংক

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩

কীভাবে হলো দেশের নাম

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

দৈনন্দিন বিজ্ঞান লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৩

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৪

কীভাবে হলো দেশের নাম

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/১

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/২

বাংলাদেশের তারিখ