ড. মোহাম্মদ আমীন
উপলক্ষ্য = উপ + লক্ষ্য; লক্ষ্য এর উপ বা সহকারী যে; আশ্রয়, অবলম্বন, প্রয়োজন, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, ব্যাপদেশ, ছল, ছুতা, occasion বা আয়োজন অর্থে প্রচলিত। বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিকতম অভিধানে ‘উপলক্ষ’ শব্দের কোনো অস্তিত্ব নেই; বরং স্বাধীন ভুক্তি হিসেবে ‘উপলক্ষ্য’ শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ শব্দের মতো লক্ষ, লক্ষ্য, উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য শব্দের বানান ও প্রয়োগ নিয়েও বিভ্রাট দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে ‘চক্ষু বা মনশ্চক্ষুর’ দ্বারা কোনও কোনও বস্তু বা বিষয়কে নিজের মধ্যে নেওয়া বা লওয়ার কাজটি দিশাগ্রস্ত থাকে যাতে, তাকে লক্ষ বলা হয়। এ লক্ষ যাতে থাকে সেটিই হচ্ছে লক্ষ্য।
কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর মতে, বাংলায় দর্শন করাকে কিছুটা পরিবর্তন করে যে যুক্তিতে ‘ দেখা’ করা করে নেওয়া হয়েছে, একই যুক্তিতে লক্ষ করাকে ‘লখ’ বা ‘লখি’ করে নেওয়া হয়েছে। এই ‘খ’ প্রকৃতপক্ষে ‘ক্ষ’-এর একটি রূপ। দর্শন দিশগ্রস্ত হয়ে গেলে তাকে ‘ দেক্ষা’ বলাই যুক্তিসঙ্গত। সে সুবাদে চক্ষু বা মনশ্চক্ষু মারফত নিয়ে আসা হল ‘লক্ষ’; এবং সে লক্ষ করা বস্তু বা বিষয়টি বাস্তবে যেখানে রয়েছে, সেটি লক্ষ্য। সংগতকারণে উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য ভিন্ন অর্থ ধারণ করে। উপলক্ষ হচ্ছে লক্ষ এর সহকারী অন্যদিকে উপলক্ষ্য হচ্ছে লক্ষ্য এর সহকারী। লক্ষ্য থাকলেই উপলক্ষ্যথাকতে পারে কিন্তু লক্ষ থাকলে উপলক্ষের সম্ভবান খুবই ক্ষীণ। সে কারণে উপলক্ষ শব্দটির প্রয়োগ প্রায়শ ত্রুটিপূর্ণ হয়। বাংলাভাষীগণ শব্দটি যেভাবে প্রয়োগ করেন, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে শব্দটি আসলে ‘উপলক্ষ্য’কেই বোঝায়; ভুল বানানের কারণে সেগুলো ‘য’ফলাহীন হয়ে রয়েছে।
বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধান [পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ফাল্গুন ১৪১৪/ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এর চতুর্থ পুনর্মুদ্রণ মাঘ ১৪১৯/ফেব্রুয়ারি ২০১৩] গ্রন্থে ‘উপলক্ষ্য’ আছে কিন্তু ‘উপলক্ষ’ নেই। আবার ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের সংস্করণে বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘উপলক্ষ’ উল্লেখ আছে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ গ্রন্থে আছে ‘উপলক্ষ্য’ এবং সেখানে ‘উপলক্ষ’ শব্দটি নেই। যেহেতু বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক সংস্করণে ‘উপলক্ষ্য’ বানানকে একমাত্র বানান নির্ধারণ করা হয়েছে সেহেতু ‘উপলক্ষ্য’ বানানই শুদ্ধ ও প্রমিত।