Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
উলঙ্গ না হয়ে উপায় নেই যার – Dr. Mohammed Amin

উলঙ্গ না হয়ে উপায় নেই যার

ড. মোহাম্মদ আমীন

সাধারণ অর্থে যা দিয়ে মানুষ মুখ ঢাকে, ঢেকে রাখে– সেটিই মুখোশ, যাকে বলা যায় মুখাবরণ। এর আর একটি অর্থ কপটতা। কিন্তু মুখোশধারী শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থ : এমন জীব, যে নানা কৌশলে বিভিন্ন কারণে নিজের প্রকৃত রূপ ঢেকে রাখে; ঢেকে রাখার জন্য নানা আবরণ ব্যবহার করে। এটি অনেকটা বর্ণচোরা ও বহুরূপী শব্দের সমার্থক।
সাধারণত শব্দগুলো নিন্দার্থে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে এ শব্দগুলোর অর্থকে জীবনে প্রয়োগ করে মানুষ খ্যাত হয়, পূজিত হয়। মুখোশধারী ও বর্ণচোর বা বহুরূপী না হলে কোনো মানুষই সভ্য সমাজে কখনো স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতো না, হয়নি; হয়তো হবেও না। মুখ-ঢাকা যদি কপটতা হয়, তাহলে শরীর-ঢাকা মহাকপটতা, কিন্তু মনুষ্য সমাজে এই মহাকপটতা দীর্ঘ ব্যবহারের কারণে মহা-গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। মুখোশহীন চলাফেরা করার জন্য দার্শনিক ডায়োজেনেসকেও নিন্দিত হতে হয়েছে। পশুরা যদি পোশাক পরে কেমন হবে? অথচ এই পোশাক পরেই মানুষ তার আসল রূপ ঢেকে রাখে, রাখছে। শরীরে একটা ক্ষত হলেও মানুষ ওই স্থান অন্যকে দেখাতে লজ্জা পায়, ঢেকে রাখে। কিন্তু প্রয়োজনে খুলে রাখে মহাসমারোহে।
মন্দ জিনিস বা বিষয় মানুষ অন্যের কাছে গোপন রাখে। মানুষ এমন একটা জঘন্য ও উদ্ভট জীব, যে পোশাক দিয়ে নিজের শরীরের অনেক অংশকে মন্দ বা লজ্জাস্থান বানিয়ে দিয়েছে।লজ্জাস্থান কী? অনাদিকাল থেকে সাধারণের চোখের আড়ালে রাখার জন্য ঢেকে রাখতে রাখতে মানুষ নিজের শরীর যে অংশটাকে বিবেকহীনের মতো জঘন্য স্থানে পরিণত করেছে, সেটিই লজ্জাস্থান। কোন পশু নিজের শরীরের প্রতি এমন অবিচার করেনি।
পোশাক মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মুখোশ। যা সবাই পছন্দ করে। পশু আর মানুষের প্রধান তফাত– মানুষ পরে এবং পড়ে; পশু পরে না; পড়েও না। মানুষ মাত্রই পোশকাধারী তথা আবরণধারী; মুখোশধারী ও বহুরূপী, কিন্তু পশু সাধারণত মুখোশধারী ও বহুরূপী নয়। মানুষ আর পশুর দৃশ্যমান পার্খক্যের মধ্যে প্রথম ও প্রধান বিষয় পোশাক। মুখোশ ধারণ করেই মানুষ প্রথম পশু থেকে নিজের সুস্পষ্ঠ পার্থক্য ঘোষণা করে। তাই মুখোশধারী বা পোশাকধারী না হলে মানুষ, প্রকৃত অর্থে আর মানুষ থাকে না। মনুষ্য শিশু উলঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়, কিন্তু উলঙ্গ মানুষকে কি স্বাভাবিক মানুষ বলা হয়? হয় না; তাহলে উলঙ্গ জন্মগ্রহণকারী শিশু কীভাবে স্বাভাবিক শিশু হয়? নিশ্চয় উলঙ্গ মানুষের মতোই অস্বাভাবিক। আসলে প্রকৃতি সব মানুষকে অস্বাভিক করে পাঠায়; এজন্য মানুষকে বলে পতিত জীব। পশু কিন্তু পতিত জীব নয়। তাদের ধর্মগ্রন্থে এমন কোনো কথা লেখা নেই।
 
সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে মানুষ যত খ্যাত ও প্রভাবশালী হয়, তার পোশাক তথা মুখোশের বাড়াবাড়িটা তত প্রকট হয়ে উঠে। সম্রাট আর সাধারণ মানুষের পোশাকের দিকে নজর ‍দিলে বিষয়টা অনুধাবন করা যায়। মানুষের ব্যক্তিত্ব, প্রভাব, ধন আর মর্যাদা মুখোশেই ফুটে উঠে। এজন্য শেখ সাদীর মতো বিখ্যাত মানুষকেও অপদস্থ হতে হয়েছে, উপযুক্ত পোশাক না পরলে অনেক স্থানে ঢোকা যায় না; ঢাকা ক্লাবে ঢোকা যায় না। ন্যাংটো হয়ে থাকলে তো কথায় নেই। শেখ সাদি কমদামী পোশাক পরেছিলেন, যদি মুখোশহীন হয়ে যেতেন, তো কী হতো? আমি পৃথিবীতে অনেক বড়ো বড়ো নেতা, ধনী, খ্যাতিমান ব্যক্তি দেখেছি, কিন্তু মুখোশহীন মানে উলঙ্গ কাউকে দেখিনি। যদিও তারা অনেক জায়গায় অনেক কারণে উলঙ্গ হয়– ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। এমন কপটতা কেবল মানুষেই আছে।
 
মানুষ মাত্রই বহুরূপী বা বর্ণচোর। যে যত দক্ষ বহরূপী, সে তত খ্যাত, পুণ্যবান এবং পূজনীয়। অবতারদের দিকে তাকান, তাকান রাজনীতিবিদ আর ধর্মগুরুদের দিকে; তাকান আমার দিকে; দেখবেন- সবাই বর্ণচোর। যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের সদস্যের জন্য উদার-ধনী, সে ব্যক্তি অসহায় প্রতিবেশির জন্য দীনহীন-কৃপণ।
 
পশুরা সাধারণত বহুরূপী বা বর্ণচোর নয়; যদিও কিছু কিছু প্রাণী অপরিহার্য কারণে- শিকার বা আত্মরক্ষার খাতিরে রং বদলায়। মানুষ কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায়, তার রং বদলের ধরন এত মারাত্মক যে, মানুষও মানুষকে চিনতে পারে না। স্ত্রী রং বদলায় স্বামীর কাছে; স্বামী, স্ত্রীর কাছে; পিতা, পুত্রের কাছে এবং পুত্র, পিতার কাছে।
 
যে লোকটি বসের কাছে বিড়াল, সে লোকটি অধস্তনের কাছে অধঃস্তন সিংহ; যে নারী স্বামীর কাছে বাঘিনি, সে নারী প্রেমিকের কাছে রাধা। যে পুরুষ স্ত্রীর সামনে নপুংসক, সেই পুরুষ আহ্বান-সনদে লুচ্চা কুকুর। যে মানুষের কাছে নিজের শিশু সন্তানের মল স্বাভাবিক, সে একই মানুষের কাছে বৃদ্ধ মা-বাবা বা অন্যের মল ভয়ঙ্কর দূষণ, দুঃসহ ভীষণ।
 
এত বহুরূপী জীব আর নেই। মানুষ বহুরূপী আচরণে এমন অভ্যস্থ হয়ে গেছে যে, বহুরূপী না-হয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর। বহুরূপী না হলে ওই মানুষটা পাগল আখ্যায়িত হয়। তার স্থান মনুষ্য সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে। তাকে কেউ স্থান দেওয়া দূরে থাক, একটা জীবনসঙ্গীও পায় না সে। উলঙ্গকে, কে জীবনসঙ্গী দেয়? কে জীবনসঙ্গী হবে উলঙ্গের? উলঙ্গ কোনো নারী-পুরুষের সঙ্গে কেউ দাম্পত্য জীবন গড়তে চায় না। অথচ দাম্পত্য জীবন গড়ার আসল উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে উলঙ্গ না হয়ে কোনা উপায় নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *