Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
একনজরে বার (বারো) ভূঁইয়া : বার (বারো) ভূঁইয়ার আমলে বাংলা – Dr. Mohammed Amin

একনজরে বার (বারো) ভূঁইয়া : বার (বারো) ভূঁইয়ার আমলে বাংলা

বারো বা বার ভূঁইয়ার আমলে বাংলা

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলার স্থানীয় প্রধান ও জমিদার, যাঁরা মুগল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মুগলবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সাধারণভাবে তাঁরা বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত। অনেকে মনে করেন, বারো ভূঁইয়া শব্দটি নির্ভুলভাবে বারোজন ভূঁইয়া বা প্রধানকে বোঝায় না; বহু সংখ্যক বুঝাতে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, যাঁরা মুগলদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন শুধু তাঁরাই বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত। মুগলদের বিরুদ্ধে লড়াইকারী জমিদারের সংখ্যা ছিল বারোর অধিক। যে বারো জনের নাম বলা হয়, তারা ছিলেন নেতৃস্থানীয়।

বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস
বাংলার বড়ো বড়ো কয়েকজন জমিদাররা সম্রাট আকবর তথা মুঘলদের অধীনতা মেনে নেননি। জমিদারগণ তাঁদের নিজ নিজ জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। এদের শক্তিশালী সৈন্য ও নৌ-বহর ছিল। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এঁরা একজোট হয়ে মুঘল সেনাপতির বিরুদ্ধে লড়েছেন।

বারো ভূঁইয়াদের সময়
বাংলার ইতিহাসে বার ভূঁইয়াদের আবির্ভাব ও দাপট ষোড়শ শতকের মধ্য হতে সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। এ সময়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে যাঁরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে তাঁরাই ‘বার ভূঁইয়া’। এছাড়াও বঙ্গদেশে আরও অনেক ছোটখাট জমিদার ছিলেন। তাঁরাও মুঘলদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ান। কিন্তু’ পরে এঁরা মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে নেন।

বার ভূঁইয়াদের মধ্যে উল্লেযোগ্য হলেন:
ঈসা খান, মূসা খান : ঢাকা জেলার অর্ধাংশ, প্রায় সমগ্র ময়মনসিংহ জেলা এবং পাবনা, বগুড়া ও রংপুর জেলার কিছু অংশ।
চাঁদ রায় ও কেদার রায় : শ্রীপুর (বিক্রমপুর, মুন্সীগঞ্জ)
বাহাদুর গাজী : ভাওয়াল
সোনা গাজী : সরাইল (ত্রিপুরার উত্তর সীমা)
ওসমান খান : বোকাইনগর (সিলেট)
বীর হামির : বিষ্ণুপুর (বাকুড়া)
লক্ষণ মাণিক্য : ভুলুয়া (নোয়াখালী)
পরমানন্দ রায় : চন্দ্রদ্বীপ (বরিশাল)
বিনোদ রায়, মধু রায় : চান্দপ্রতাপ (মানিকগঞ্জ)
মুকুন্দরাম, সত্রজিৎ : ভূষণা (ফরিদপুর)
রাজা কন্দর্পনারায়ণ, রামচন্দ্র : বরিশাল জেলার অংশ বিশেষ

বারো ভুঁইয়াদের নেতা
প্রথম দিকে বার ভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন ঈসা খান। হুসেন শাহী বংশের অবসান হলে ঈসা খানের পিতা সুলায়মান খান সোনারগাঁও অঞ্চলে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। খিজিরপুর দুর্গ ছিল তাঁর শক্তির প্রধান কেন্দ্র। সোনারগাঁও ও খিজিরপুরের নিকটবর্তী কাতরাবু তাঁর রাজধানী ছিল। দাউদ কররাণীর পতনের পর তিনি সোনারগাঁও এলাকায় রাজধানী স্থাপন করেন।

আকবরের বারো ভূইয়া দমন
বার ভূঁইয়াদের দমন করার জন্য সম্রাট আকবর ১৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে শাহবাজ খান, ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সাদিক খান, ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে উজির খান এবং ১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মানসিংহকে বাংলার সুবাদার করে পাঠান। তাঁরা ঈসা খাঁন ও অন্যান্য জমিদারের সাথে বহুবার যুদ্ধ করেন। কিন্তু বার ভূঁইয়াদের নেতা ঈসা খানকে সম্পূর্ণ পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। তিনি সম্রাট আকবরের আনুগত্য স্বীকারের বিনিময়ে নিজের আধিপত্য বজায় রাখেন। অন্যদিকে তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ‘মসনদ-ই-আলা’ উপাধি ধারণ করেছিলেন।

বারো ভূঁইয়াদের দ্বিতীয় নেতা
১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে ঈশা খানের মৃত্যু হলে বার ভূঁইয়াদের নেতা হন তাঁর পুত্র মূসা খান। ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে মানসিংহকে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় পাঠানো হয়। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে মূসা খান এক নৌ-যুদ্ধে মানসিংহের হাতে পরাজিত হন। তবে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করার আগে সম্রাট আকবরের অসুস্থতার খবর এলে তিনি সম্রাটের ডাকে মানসিংহ থেকে আগ্রায় ফিরে যান।

সম্রাট জাহাঙ্গীর ও বারো ভুঁইয়া
১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সেলিম ‘জাহাঙ্গীর’ নাম ধারণ করে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি মানসিংহকে আবার বাংলায় প্রেরণ করেন। ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে কুতুবুদ্দীন কোকাকে বাংলার সুবাদার নিয়োগ করা হয়। কুতুবুদ্দীন শের আফকুনের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর পরবর্তী সুবাদার জাহাঙ্গীর কুলীখান এক বছর পর মারা যান।

সুবাদার ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী
১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের সুবাদার নিযুক্ত হন সুবাদর ইসলাম খান (১৬০৮-১৬১৩ খ্রি:) শাসনভার গ্রহণ করেই বুঝতে পারেন যে, বার ভূঁইয়াদের নেতা মূসা খানকে দমন করতে পারলেই অন্যান্য জমিদারদেরকে বশীভূত করা সহজসাধ্য হবে। সেজন্য তিনি রাজমহল হতে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় আসার পথে ইসলাম খান বেশ কয়েক জন জমিদারের আনুগত্য লাভ করেন।

জাহাঙ্গীর নগর
মূসা খানের সাথে প্রথম সংঘর্ষ বাঁধে ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে করতোয়া নদীর পূর্বতীরে যাত্রাপুরে। এখানে মূসা খানের দুর্গ ছিল। যুদ্ধে মুসা খান ও অন্যান্য জমিদার পরাজিত হন। ইসলাম খান ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রবেশ করেন। এ সময় থেকে ঢাকা হয় বাংলার রাজধানী। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকার নাম রাখা হয় ‘জাহাঙ্গীর নগর’।

বারো ভুঁইয়াদের পতন
১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খানের সঙ্গে জমিদারদের যুদ্ধ শুরু হয়। মূসা খানের কদম রসুল দুর্গসহ অন্যান্য দুর্গ মুঘলদের অধিকারে আসে। মূসা খান জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে সোনারগাঁও চলে যান। মুঘল সৈন্যরা সোনারগাঁও অধিকার করে নেন। জমিদারগণ আত্মসমর্পণ করেন। কোন উপায় না দেখে মূসা খানও শেষ পর্যন্ত মুঘলদের নিকট আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। ইসলাম খান, মূসা খানকে অন্যান্য জমিদারদের মতো তাঁর জমিদারিতে মুঘলদের অধীনস্থ’ জায়গিরের দায়িত্ব দেন। এরপর মূসা খান সম্রাটের অনুগত জায়গিরদার হিসেবে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। মূসা খানের আত্মসমর্পণে অন্যান্য জামিদারগণ নিরাশ হয়ে মুঘল সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করেন। এভাবে বাংলার বারো ভূঁইয়াদের শাসনের অবসান ঘটে।


বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয় সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর : সকল গভর্নর

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর জেনারেল : সকল গভর্নর জেনারেল/১

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বাংলার গভর্নর জেনারেল : সকল গভর্নর জেনারেল/২

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

শুদ্ধ বানান চর্চা/১

শুদ্ধ বানান চর্চা/২

শুদ্ধ বানান চর্চা /৩

শুদ্ধ বানান চর্চা /৪