সপ্তচত্বারিংশ পর্ব (৪৭)
ঘুমের ঘোরে অস্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি আল্পনার গলা, “আপা ও আপা, উঠো, ব্রেকফাস্ট রেডি। আর কতক্ষণ ঘুমাবে।”
ভোর হয়েছে। অরোরার সঙ্গে ভেসে আসছে পাখির কিচিরমিচির। ঢাকার এদিকে গাছপালা কয়েকটা এখনো অক্ষত আছে। তাই কয়েকটা পাখি এখনো দেখা যায়, গান করে। আল্পনার কথা পাখির কুজনে বিরল আল্পনা এঁকে দিল মগজে। ঘুম ভেঙে গেল।
অবাক হয়ে দেখি— রচনা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে। হয়তো সারা রাত সেবা করেছে। নতুবা এভাবে জড়িয়ে জ্বর তাড়িয়েছে। তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে মায়ের মতো শান্ত বেদনায়। শিয়রে জলপট্টির কাপড়। উঠতে চেয়েও ওঠলাম না। আমি উঠলে তাকে সরিয়ে উঠতে হবে, উঠব না। হয়তো পুরো রাতই সে জেগে ছিল আমার জন্য। ঘুমাক মন ভরে।
এত ঋণ শোধ করি কীভাবে?
আমি নিঃস্ব-আবেগে মুষড়ে পড়ি। ভালোবাসা মানুষকে হারিয়ে দেয় আবার এ ভালোবাসায় মানুষকে ফিরিয়ে দেয় পূর্ণ অবতারে। চেহারার দিকে তাকালাম।
অ্যান্টার্কটিকার বরফের মতো নিষ্পাপ একটা অবয়ব— যার আমি ছাড়া আর কেউ নেই দেখার, আবদারগুলো শোনার। চোখ ভরে গেল জলে।
আল্পনার সামনেই ঘুমন্ত রচনার অধরে অধর ছুঁয়ে দিলাম পিতৃমমতায় কন্যা-মধুর বিধুর-বঁধুর প্রেমে। মন আমার অসীম কৃতজ্ঞতায় সসীম হয়ে গেল। আমি কী করেছি তার জন্য— তা যতই হোক, আজ তার এই মমতার কাছে আমার সব অবদান অতি তুচ্ছ হয়ে গেল। মনে হলো— আমি তাকে দিয়েছি এক টন লৌহ, সে দিয়েছে এক টন হীরা। কে সেরা?
আল্পনা বলল, ভাইয়া, আপুকে ডাকুন।
এখন না।
রচনার মুখে শিশুর মুগ্ধতা। যা আমাকে উদ্ভাসিত করে দিয়েছে বিনশ্বর সৌকর্যে। আসলে সুখ এমন একটা জিনিস, যা নিজের না-থাকলেও অন্যকে দেওয়া যায়—হাসিতে,কথায়, মমতায়, মাথায় হাত বুলিয়ে।যে অভিনেতা দর্শকদের হাসাতে হাসাতে দম আটকে দেয়, যে শিল্পী সুরে সুরে শ্রোতাদের মোহিত করে দেয়, তাদের ব্যক্তিগত শত অশান্তিও কখনো অন্যকে আনন্দ প্রদানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম, রচনা আমার সব ভালোবাসাকে কৃতজ্ঞতার শুভ্র চাদরে ভরে তার বুকের অনেক গভীরে লুকিয়ে রেখেছে। যা থেকে প্রয়োজনে আমাকে উজাড়ে উজাড় করে দিচ্ছে। এখন সে ঐশ্বর্যের হদিস পেতে হলে তার বুক ছিঁড়ে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমার পক্ষে এমন করা কি সম্ভব?
আরও একঘণ্টা পর রচনার ঘুম ভাঙল।
সে নিজেকে আমার বুকের উপর শুয়ে থাকতে দেখে আনমনা হয়ে গেল— লজ্জায় নয়, সজ্জায় এবং অরুণ গর্বের দারুণ স্নিগ্ধতায়। অবোধ্য অনুভূতির গর্বোন্নত প্রশান্তিতে বলল, স্যার, আমি কি সারা রাত এখানে এভাবে শুয়ে ছিলাম?
ছিলে।
আল্পনা বলল, আমরা চলে যাওয়ার সময় তোমাকে ডাকতে চেয়েছিলাম।
ডাকনি কেন?
ঘুমিয়েছিলে তাই।
ভালো করেছ না-ডেকে। ডাকলে এমন স্বপ্নহীন ঘুম দিতে পারতাম না।
আমি বললাম, মেয়ে তুমি কি সত্যি সারারাত আমার সঙ্গে ছিলে?
রচনা আমাকে একটা ছোটো ধাক্কা দিয়ে বলল, ছিলামই তো! তাই ঘুমটা গভীর ছিল। স্বপ্নটাও ঘুমিয়ে পড়েছিল আমার সঙ্গে। তাতে কী হয়েছে?
আমাকে বলনি কেন?
আল্পনা বলল, ঘুমের মানুষ কথা বলতে পারে না।
তুমি বলে দিতে।
বললে কী হতো? রচনা বলল।
আমি জেগে জেগে তোমার ঘুম দেখতাম। প্রিয়জনের ঘুম দর্শনের স্বাদ কখনো পেয়েছ? আমি পাইনি, দেখেছি মায়ের মুখে। আমরা ঘুমালে মা চেয়ে চেয়ে দেখত আমাদের, দেখত— নিশ্বাস কীভাবে নামে-ওঠে, কীভাবে নড়া-চড়া করে ঘুমন্ত সন্তানের শরীর, কীভাবে ধুকধুক করে কলজে। কিছুক্ষণ পর চুমো দিয়ে ঢেকে দিত আদরে।
আগামীকাল থেকে ডেকে দেব, কল্পনা বলল।
নিনি কোথায়?
আল্পনা বলল, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমি বললাম, পালিয়েছে মনে হয়। দেখো কিছু নিয়ে গেছে কি না।
কিছু নেয়নি, আল্পনা বলল, “তার একটা মাটির ব্যাংক ছিল। ওটি ভেঙে শুধু পয়সাগুলো নিয়ে গেছে।”
রচনা ওঠে বাথরুমে ঢুকল। সে উঠতেই মায়ের কথা ভীষণভাবে মনে পড়ে গেল। অনেকদিন কথা হয় না তার সঙ্গে। অসুখ হলেই কেবল মায়ের কথা মনে পড়ে। কী কুলাঙ্গার সন্তান আমি!
রিসিভার তুলে নিয়ে মাকে রিং করলাম, মা কেমন আছ?
অ-পুত, যেইল্যা রাইক্কুস এইল্যা আছি। তুঁই-ই তো ভালা জানছ, আঁরে হইল্যা রাইখ্যুছ। (বাবা, যেরকম রেখেছ সেরকম আছি। তুমিই তো জানো কেমন রেখেছ আমাকে।)
টেলিফোনে মায়ের কথায় কোনো মায়া পেলাম না। প্রতিটা কথায় খোঁচা— নিশ্চয় কোনো বিষয় নিয়ে ভীষণ কষ্টে আছে।
আদুরে গলায় বললাম, কী হয়েছে মা?
অ-পুত, তুই নাকি বস্তির ওকগা মাইয়োপোয়া বিয়া গরি ঢাহা শ-অরত ইতিল্লই থাগস? একখানা হইলে অপুত কী হতি অইতো? আঁই তো অ-পুত না-নগইরত্তাম। (বাবা, তুই না কি বস্তির একটা মেয়েকে বিয়ে করে ঢাকা শহরে তাকে নিয়ে থাকিস? একটু বললে কী ক্ষতি হতো? আমি তো না করতাম না।)
কানটা ঝাঁঝাঁ করে উঠল। অপমানে হাত-পা ছোটাছুটি করার জন্য অস্থির হয়ে উঠছে। এটি রাগের লক্ষণ। মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করা ঠিক হবে না। পরে সব বুঝিয়ে বলা যাবে।
বললাম, মা এখন রাখি। তোমার সঙ্গে পরে কথা বলব। তুমি ভুল বুঝে আমার ওপর রেগে আছ, আমিও রেগে যেতে পারি।
মা বলল, বিয়াআইত্তা পোয়ার ডইল্যা হথা হদ্দে কিল্লাই? তোর দুয়া আলি, ওকগা আলা। বেয়াকগুন তোর লগে থাগে। হালা মাইয়োপোয়া ওকগা বিয়া গইজ্জুছদে কিয়ল্লাই, দুনিয়াত আর মাইয়ো পোয়া ন-পছদে? (বিবাহিত ছেলের মতো কথা বলছ কেন? তোমার দুটি শালি, একটা শালা। সবাই তোমার সঙ্গে থাকে। কালো একটা মেয়ে কী জন্য বিয়ে করেছ? দুনিয়াতে আর মেয়ে পাওনি?)
মা, তুমি এসব বিশ্বাস কর?
আঁই তো বিশ্বাস গইত্তাম নঅ-চাই। অপুত, ছবি তো মিছা হথা ন-হয়। ছবিত দেকখিদি, তোর বউয়ুর লই তোর আলা-আলি। অপুত তোরে বেয়াকগুনে জড়াই দইরজ্জে। এক লাই ছবি দেহাইয়ে। দেহিয়ের অপুত জিব্বাত হ-অর দি আঁই। (আমি তো বিশ্বাস করতে চাই না। বাবা, ছবি তো মিথ্যা কথা বলে না। ছবিতে দেখেছি তোমার বউয়ের সঙ্গে তোমার শালা-শালি। তোমাকে সবাই জড়িয়ে ধরেছে। এক ঝুড়ি ছবি দেখিয়েছে। দেখে বাবা জিহ্বায় কামড় দিয়েছি আমি। )
মা কাঁদছে। কেঁদে কেঁদে বলছে, অপুত, বেয়াকগুনের মুখত এগিন উনি উনি হইজ্জা ফাডি গিঅই। তারপর, অপুত তোর বীরপতীক দাদুর লই হথা হইয়েরে আসল ঘটনা জানিত পাজ্জি। তারপর হইজ্জান ঠান্ডা অইয়ে। (বাবা, সবার মুখে এসব কথা শুনে শুনে কলজে ফেটে গেছে। এরপর তোমার বীরপ্রতীক দাদুর সঙ্গে কথা বলে আসল কথা জানতে পারলাম। তারপর কলজেটা ঠান্ডা হলো।)
মা?
অপুত, তোরে পেডথ ল-অন আরলাই সার্থক অইয়ে। ( তোমাকে জন্মদান আমার সার্থক হয়েছে।)
মা।
কিন্তু অপুত আড়াইল্যা-পাড়াইল্যার মুখ কী গরি বন্ধ গইজ্জুম। তোর বাপ থাইলে একখানা সাহস পাইতাম। মাইনষে সবসময় হারাপ্পান দেহে। (কিন্তু, বাবা পাড়া-প্রতিবেশীর মুখ কী করে বন্ধ করব। তোর বাপ থাকলে একটু সাহস পেতাম। মানুষ সর্বদা খারাপটা দেখে।)
মায়ের কথায় মনটা ভালো হয়ে গেল। বললাম, মা তুমি ভালো জানলে পৃথিবীর আর কারও খারাপে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি কী করতে পারব এবং কী করব না-করব তা তোমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।
কথা শেষে করে বাথরুমে ঢুকলাম। তারপর প্রাতঃরাশ করে সোজা অফিস। অফিসে জরুরি মিটিং, প্রধানমন্ত্রীও থাকবেন। সরকার প্রধান উপস্থিত থাকলে ঠিক সময়ে মিটিং শেষ হয়। মিটিং সাড়ে দশটায় শেষ হয় গেল। ছুটি নিয়ে এগারোটার মধ্যে বাসায় চলে এলাম।
যাত্রাবাড়ি বস্তিতে প্রোগ্রাম।
সামনে ইদ। রচনা তার পুরাতন প্রতিবেশীদের কিছু কাপড় এবং খাদ্যসামগ্রী দেবে। অনেক আগের পরিকল্পনা। কয়েক বছরের সঞ্চয় শূন্য করে কাজটি করছে। তার উদারতা আর মমত্ববোধে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। স্থানীয় প্রশাসনকেও বলে দেওয়া হয়েছে। একটি এনজিও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব নিয়েছে।
সবাই রেডি হয়েই ছিল। বাসায় ঢুকে খাওয়া-দাওয়া সেরে বের হয়ে পড়লাম। নিনি তখনো ফেরেনি। জানি না মেয়েটা কোথায়, একটু একটু খারাপ লাগছে।
নিনি কোথায় যেতে পারে বলো তো?
সে যেখানেই যাক, বেঁচে থাকলে ফিরে আসবে, রচনার সোজা কথায় দৃঢ় আস্থা।
বস্তিতে গিয়ে দেখি আগের বস্তির কোনো চিহ্ন নেই। ওখানে নির্মাণ কাজ চলছে।
রচনা বলল, স্যার, চারদিকে একের পর এক বড়ো বড়ো ভবন হচ্ছে, কিন্তু রাস্তায় শুয়ে থাকা গৃহহীনের সংখ্যা তারপরও কমছে না, দিন দিন বাড়ছে আর বাড়ছে। এরা কোথায় যাচ্ছে?
সারা ঢাকা শহরে যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে, আমি বললাম।
এভাবে ছড়িয়ে পড়লে পুরো ঢাকাই বস্তি হয়ে যাবে।
পুরো ঢাকাই এখন একটি ভয়ংকর বস্তি। কেবল তলার তফাত।
আশেপাশে কয়েকটি বস্তি তখনও উচ্ছেদের অপেক্ষায়। তাদের মাঝে কাপড় এবং খাদ্রসামগ্রী বিতরণ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। বাসায় ঢুকতে গিয়ে দেখি নিনি— সে দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে।
কোথায় ছিলে সারাদিন?
আপনার জন্য মদন বাবার তাবিজ আনতে গেছিলাম।
তাবিজ দিয়ে কী হবে?
আপনার জ্বর আর বালা-মুসিবত দূর হবে। ভাইয়া, এই নিন তাবিজ।
কত টাকা নিয়েছে?
একশ আশি টাকা।
টাকা কোথায় পেয়েছ?
স্কুলে যাওয়ার সময় আপু যে টাকা দিত তা থেকে বাঁচিয়ে মাটির ব্যাংকে জমা করেছিলাম। ব্যাংক ভেঙে নিয়েছি। পাঁচশ ত্রিশ টাকা হইছে।
যদি হারিয়ে যেতে?
রচনা বলল, এদের সব হারিয়ে গেছে, আর কিছু হারানোর ভয় নেই। এখন কেবল যাকে আশ্রয় হিসেবে পেয়েছে তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়।ঠিক আমার মতো নিনির অবস্থা। আপনার কিছু হলে আমাদের কী হবে?
মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলাম। কী ভেবেছিলাম মেয়েটাকে নিয়ে। নিচু হয়ে একটা চুমো দিলাম নিনির গালে। এর চেয়ে বেশি আর কী দেব? আমি তো আর তার মতো এত মহানুভব মনের অধিকারী না!
মেয়ে?
স্যার, রচনা জবাব দিল কান্না-নমিত গলায়।
তোমার কাছে একশ টাকা আছে, তুমি আশি টাকা দান করলে। আমার কাছে আট হাজার টাকা আছে আমি এক হাজার টাকা দান করলাম— কে বড়ো দাতা?
আমি, রচনার উত্তর।
Total Page Visits: 5905 - Today Page Visits: 1
I was very happy to seek out this web-site.I wished to thanks to your time for this wonderful learn!! I positively enjoying every little little bit of it and I have you bookmarked to take a look at new stuff you weblog post.
There is noticeably a bundle to know about this. I assume you made certain nice points in features also.
My wife and i got very glad that Raymond managed to conclude his research through the precious recommendations he acquired from your very own web site. It is now and again perplexing just to find yourself making a gift of things which usually other people may have been making money from. We do understand we have the blog owner to give thanks to for this. The entire explanations you made, the straightforward site menu, the friendships you will make it easier to engender – it’s got most overwhelming, and it is letting our son in addition to our family believe that that concept is fun, and that is incredibly essential. Thanks for everything!
Wow! This could be one particular of the most beneficial blogs We have ever arrive across on this subject. Basically Excellent. I am also an expert in this topic therefore I can understand your hard work.
I am not rattling good with English but I find this very easy to translate.
Some truly interesting information, well written and generally user genial.
My husband and i were really joyful that Chris could complete his homework out of the precious recommendations he gained out of the web site. It is now and again perplexing just to happen to be offering ideas that many the others have been trying to sell. And we all figure out we’ve got the writer to give thanks to for that. The type of explanations you made, the easy site navigation, the friendships you can make it possible to promote – it’s mostly terrific, and it is leading our son in addition to our family reckon that that subject matter is enjoyable, and that is rather indispensable. Thank you for all!
Throughout this great scheme of things you’ll receive a B- with regard to hard work. Where you actually lost everybody ended up being on the details. You know, they say, the devil is in the details… And it couldn’t be more accurate in this article. Having said that, allow me inform you what exactly did work. The writing is extremely engaging which is probably the reason why I am making the effort in order to comment. I do not make it a regular habit of doing that. Second, whilst I can see a leaps in reasoning you come up with, I am definitely not convinced of just how you appear to connect your details which inturn help to make the final result. For the moment I will, no doubt subscribe to your position but hope in the future you link the facts better.
I’ve recently started a blog, the info you provide on this website has helped me greatly. Thanks for all of your time & work. “The achievements of an organization are the results of the combined effort of each individual.” by Vince Lombardi.
What’s Taking place i’m new to this, I stumbled upon this I have discovered It absolutely useful and it has helped me out loads. I hope to give a contribution & aid other users like its helped me. Good job.
Very interesting topic, appreciate it for posting.
Today, I went to the beach with my kids. I found a sea shell and gave it to my 4 year old daughter and said “You can hear the ocean if you put this to your ear.” She put the shell to her ear and screamed. There was a hermit crab inside and it pinched her ear. She never wants to go back! LoL I know this is entirely off topic but I had to tell someone!
As a Newbie, I am continuously exploring online for articles that can benefit me. Thank you
I like what you guys are up too. Such smart work and reporting! Keep up the superb works guys I have incorporated you guys to my blogroll. I think it will improve the value of my site 🙂