Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি – Page 12 – Dr. Mohammed Amin

এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

সাবধানতার সঙ্গে: একটি পদবন্ধের যথার্থতা ৯০
বহুল ব্যবহৃত ‘সাবধানতার সঙ্গে’ পদবন্ধের ব্যবহার অশুদ্ধ বলে রায় দিয়ে একদল এই রূপটি বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে বলছেন। পদবন্ধটির ব্যবহার কি আসলেই অসংগত? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে একেবারে শব্দটির মূলে ফিরে যেতে হবে।
‘সাবধান’ থেকে ‘সাবধানতা’-র সৃষ্টি। ‘সাবধান’ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে ‘স’ আর ‘অবধান’ পাওয়া যায়। ‘অবধান’ রূপটিকে আরো ছোটো করে দেখতে চাইলে ‘অব’, ‘√ধা’ আর ‘অন’ পাওয়া যায়। ‘√ধা’ হচ্ছে তা, যা কোনোকিছু ধারণ করে। এই ‘ধা’ ধাতুর শুরুতে ‘নিশ্চয়ার্থক’ অর্থে ‘অব’ উপসর্গ এবং শেষে ‘ভাবে’ অর্থে ‘অন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘অবধান’ (অব+√ধা+অন) শব্দের উৎপত্তি। তাহলে, ‘অনবধান’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দাঁড়ায়— কর্তা কোনোকিছু নিশ্চিতভাবে ধারণ করতে যেভাবে ভাবে বা চিন্তা করে। কোনো বিষয় নিশ্চিতভাবে ধারণ করতে একাগ্রতা বা বিশেষ মনোযোগ দিয়ে ভাবতে (মনোনিবেশ করতে) হয় বলে ‘অবধান’ শব্দের একগুচ্ছ অর্থ হচ্ছে ‘মনোযোগ’, ‘বিশেষ মনোনিবেশ’, ‘একাগ্রতা’ প্রভৃতি। এই ‘অবধান’ শব্দটির শুরুতে ‘সহ’ বা ‘সমেত’ কিংবা ‘বর্তমান’ অর্থে ‘স’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘সাবধান’ (স+অবধান; অ + অ = আ) শব্দটি গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ, যাতে অবধান বর্তমান, মনোযোগ বিদ্যমান, একাগ্রতা উপস্থিত, তাই (তা-ই) হচ্ছে সাবধান। মানুষ তর্কের সময় অত্যন্ত মনোযোগী থাকে বলে ‘সাবধান’ শব্দের একটি অর্থ হয়ে গিয়েছে ‘সতর্ক’। ‘হুঁশিয়ার’ শব্দটিও ‘সাবধান’ শব্দের সমার্থক। ‘সাবধান’ শব্দটি সাধারণত বিশেষণ পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শব্দটিকে দুভাবে বিশেষ্যে পরিবর্তন করা যায়:— হয়তো শুরুতে যুক্ত হওয়া বিশেষণনির্দেশক ‘স’ উপসর্গ নিয়ে ফেলে পুনরায় ‘অবধান’ বানিয়ে ফেলা, নয়তো শেষে বিশেষ্যনির্দেশক ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত করে নতুন রূপে ‘সাবধানতা’ বানিয়ে নেওয়া। ‘তা’ প্রত্যয় হচ্ছে ‘ধারক’ বা ‘আধার’। ‘সাবধানতা’ হচ্ছে সাবধানের ধারক বা আধার। অর্থাৎ, যা সাবধান ধারণ করে বা যাতে সাবধান বর্তমান থাকে, তাই (তা-ই) হচ্ছে সাবধানতা। তাহলে ‘সাবধানতার সঙ্গে’ পদবন্ধের অর্থ দাঁড়ায়— ‘মনোযোগ বর্তমান বা সঙ্গে রেখে’ ‘একাগ্রতার উপস্থিতিতে বা একাগ্রতার সঙ্গে’, ‘বিশেষ মনোনিবেশ বিদ্যমান রেখে’ প্রভৃতি; যা কোনোভাবেই বাহুল্য দোষে দুষ্ট নয়। ‘সাবধানতার সঙ্গে কাজ করা’ মানে ‘মনোযোগ বিদ্যমান রেখে কাজ করা’। ‘সাবধানতার সঙ্গে পা ফেলা’ মানে ‘মনোযোগের বর্তমানে বা উপস্থিতিতে রেখে পা ফেলা’।
আবার, ‘সাবধান’ হচ্ছে বিশেষণ, যা বিশেষ্য বা সর্বনামকে বিশেষিত করে। শব্দটির সঙ্গে ‘এ’ প্রত্যয় যুক্ত করলে ক্রিয়াবিশেষণ ‘সাবধানে’ পাওয়া যায়, যা ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে। কোনো বিশেষণের বিশেষ্য রূপটির পরে অব্যয় বা অনুসর্গ জুড়ে দিলে পদবন্ধটি ক্রিয়াবিশেষণরূপে কাজ করে বলে ‘সাবধানে’ শব্দটি অনেকাংশে ‘সাবধানতার সঙ্গে’ পদবন্ধের সমার্থক। কিন্তু ‘ ‘সাবধানতা’-র সঙ্গে’ অর্থে ‘সাবধানে’ আর ‘সাবধানতার সঙ্গে’ সমার্থক নয়। যেমন: ‘সাবধানতার সঙ্গে সতর্কতার তুলনা করা যেতে পারে।’— বাক্যটিতে ‘সাবধানতার সঙ্গে’ পদ দুটির পরিবর্তে ‘সাবধানে’ লেখা যাবে না।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়— ‘সাবধান’ অর্থ ‘মনোযোগের বা অবধানের সঙ্গে’ নয়, অর্থ হচ্ছে ‘মনোযোগ বা অবধান-সহ’ কিংবা ‘যাতে মনোযোগ বা অবধান আছে’। এই অর্থ দুটির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্যটি স্পষ্ট করতে একটি উদাহরণ দিচ্ছি—
একটি দশ হাজার টাকার চেক। চেকটিতে শুভ্র নাথের স্বাক্ষর রয়েছে। তাই, চেকটি হচ্ছে ‘শুভ্রের স্বাক্ষর-সহ বা স্বাক্ষর সমেত’ চেক; ‘শুভ্রের স্বাক্ষরের সঙ্গে’ চেক নয়। ব্যাংকে স্বাক্ষর-সহ চেকটি সঙ্গে নিয়ে গেলে দশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। (১০ই জানুয়ারি, ২০২১)
ক্রমশ
নিশ্চয়ার্থক ই: একটি নিয়মের বিশ্লেষণ