মাইকেলি ধাতু ৮৮
ব্যাকরণের আলোচনায় বাংলা ধাতুগণের নির্দিষ্ট শ্রেণিভাগ রয়েছে। কর্, মার, মিটা, উঠ্, লিখ্, মুচড়া, চাহ্, খা, শু, হ প্রভৃতি সেসব ধাতুগণের কয়েকটি। এসব ধাতুর সঙ্গে কাল ও পুরুষ অনুসারে বিভক্তি (প্রত্যয়) যুক্ত করে বাক্যে ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলা ভাষায় এই নির্দিষ্ট ধাতুশ্রেণির বাইরে আরও একপ্রকার ধাতু রয়েছে, যা ‘মাইকেলি ধাতু’ নামে পরিচিত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এধরনের ধাতুর ব্যবহার প্রচলন করেন বলে তাঁর নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। মাইকেলি ধাতু প্রকৃতপক্ষে কোনো ধাতু নয়, মূলত এগুলো কতিপয় বিশেষ্য ও বিশেষণ। মাইকেল মধুসূদন দত্ত সেসব বিশেষ্য-বিশেষণের সঙ্গে ধাতুর অনুকরণে কাল ও পুরুষ অনুসারে বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে এধরনের শব্দ ‘মাইকেলি ধাতু’ তকমা পেয়ে গিয়েছে। পবিত্র থেকে পবিত্রি (পবিত্র করি), লক্ষ থেকে লক্ষি (লক্ষ করি/করে), উত্তর থেকে উত্তরিলা (উত্তর দিল/দিলো), ইচ্ছা থেকে ইচ্ছি (ইচ্ছে /করি/করে/হচ্ছে) প্রভৃতি এই শ্রেণিভাগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিম্নে মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” থেকে দুইটি পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করা হলো, যেখানে শব্দের এরূপ প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে—
১. ‘… উত্তরিলা কাতরে রাবণি;—
“হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! …” ‘
২. ‘… উত্তরিলা রথী
রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে; …’ (১৭ই ডিসেম্বর)
ক্রমশ
কমা’-র একটি সূক্ষ্ম প্রয়োগবিধি