অপরাধী কিন্তু নিরপরাধ ৮৩
‘নিঃ’ উপসর্গটি দুই উপায়ে হতে পারে। একটি হচ্ছে র্-জাত, অন্যটি স্-জাত। ‘নিঃ’-এর র্-জাত রূপ হচ্ছে ‘নির্’। এই ‘নির্’ উপসর্গটির অন্যতম প্রয়োগ হচ্ছে— কোনো শব্দের পূর্বে বসে মূল শব্দটি যে অর্থ ধারণ করে, তার অভাব বা অনুপস্থিতি নির্দেশ করা। যেমন—
আকার নেই (অনুপস্থিত) যার > নিরাকার;
আশ্রয়ের অভাব > নিরাশ্রয়;
আশা নেই যেখানে > নিরাশা;
অহংকার নেই যার > নিরহংকার প্রভৃতি।
এখানে লক্ষ করবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে— অভাব বা অনুপস্থিত নির্দেশ করার ক্ষেত্রে ‘নির্’ উপসর্গটি কেবল বিশেষ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, এবং যুক্ত হওয়ার পর বিশেষ্যকে বিশেষণে বদলে দেয়। অর্থাৎ, বিশেষ্যকে বিশেষণে রূপ দেওয়াই ‘নির্’ উপসর্গ যুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য। এ-কারণে কোনো বিশেষণের সঙ্গে উল্লেখ-করা অর্থে ‘নির্’ উপসর্গ যুক্ত করে কোনো শব্দ গঠন করা হলে, তা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে যায়। এরূপ বহুলতায় দুষ্ট দু-একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হলো—
১. নিরপরাধী: ‘অপরাধ’ হচ্ছে বিশেষ্য পদ। এই ‘অপরাধ’-এর সঙ্গে ‘ইন্’ প্রত্যয় যুক্ত করে গঠন করা ‘অপরাধী’ একটি বিশেষণ পদ। তাই, এটির শুরুতে পুনরায় বিশেষণ নির্দেশক ‘নির্’ উপসর্গ যুক্ত করলে বাহুল্য হয়ে যায়। এই বহুলতা এড়াতে ‘নির্’ উপসর্গ ‘অপরাধী’-র পূর্বে যুক্ত না-করে ‘অপরাধ’-এর শুরুতে যুক্ত করে ‘নিরপরাধ’ লিখতে হবে।
২. নিরহংকারী: ‘অহংকার’ হচ্ছে বিশেষ্য পদ। এই ‘অহংকার’-এর সঙ্গে ‘ইন্’ প্রত্যয় যুক্ত করে গঠন করা ‘অহংকারী’ একটি বিশেষণ পদ। তাই, এটির শুরুতে পুনরায় বিশেষণ নির্দেশক ‘নির্’ উপসর্গ যুক্ত করলে বাহুল্য হয়ে যায়। ড. মোহাম্মদ আমীনের ভাষায় বললে— ব্যাপারটা অনেকটা টাই বাঁধা গলায় আরেকটি টাই পরিয়ে দেওয়ার মতো হাস্যকর। এই বহুলতা এড়াতে ‘নির্’ উপসর্গটি ‘অহংকারী’-র পূর্বে যুক্ত না-করে ‘অহংকার’-এর শুরুতে যুক্ত করে ‘নিরহংকার’ লিখতে হবে।
প্রয়োগ:
ক. অসংগত: ড. মোহাম্মদ আমীন একজন নিরহংকারী ব্যক্তি।
সংগত: ড. মোহাম্মদ আমীন একজন নিরহংকার ব্যক্তি।
খ. অসংগত: নিরপরাধী লোকটিকে সাজা দেওয়া ঠিক হয়নি।
সংগত: নিরপরাধ লোকটিকে সাজা দেওয়া ঠিক হয়নি। (২৪শে নভেম্বর, ২০২০)
ক্রমশ
আপনি সবই জানতে ৮১