এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

 
ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব ৭৪
 
‘দ্বি’ মানে ‘দুই’, ‘দ্বিত্ব’ অর্থ দুই বার প্রয়োগ। ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব মানে একই ব্যঞ্জনের দুই বার প্রয়োগ। ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব দুই প্রকারের হতে পারে। একপ্রকার হচ্ছে বানানে, অন্যপ্রকার হচ্ছে উচ্চারণে। অন্ন, আব্বা, উড্ডয়ন, উদ্দেশ্য প্রভৃতি শব্দে ‘ন্ন’, ‘ব্ব’, ‘ড্ড’, ‘দ্দ’ প্রভৃতি যুক্তবর্ণের বানানে একই বর্ণ দুই বার লেখা হয়েছে, তাই এগুলো হচ্ছে বানানগত দ্বিত্ব। বানানগত দ্বিত্বগুলো উচ্চারণগত বা ধ্বনিগত দ্বিত্বও। উচ্চারণগত বা ধ্বনিগত দ্বিত্ব হচ্ছে একই ধ্বনি পরপর দুই বার উচ্চারিত হওয়া। অনেকক্ষেত্রে দুইটি ব্যঞ্জন মিলে বানানগত দ্বিত্ব না-হয়েও উচ্চারণগত বা ধ্বনিগত দ্বিত্ব হতে পারে। বন্য, বাল্য, আদ্য, শস্য, প্রভৃতি শব্দের বানানে—
ন্য = ন্+য;
ল্য = ল্+য;
দ্য = দ্+য;
স্য = স্+য।
অর্থাৎ, উল্লেখ-করা শব্দগুলোর বানান লেখার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দুইটি বর্ণ যুক্ত হয়ে যুক্তরূপগুলো গঠন করেছে, তাই এসব যুক্তবর্ণ বানানগত দ্বিত্ব নয়। কিন্তু উক্ত শব্দগুলোর উচ্চারণে ‘ন্য’, ‘ল্য’, দ্য’, ‘স্য’ প্রভৃতি যুক্তবর্ণ যথাক্রমে /ন্‌নো/, /ল্‌লো/, /দ্‌দো/ আর /শ্‌শো/ হিসেবে উচ্চারিত হয়। অর্থাৎ, যুক্তবর্ণগুলোর উচ্চারণে একই ধ্বনি পরপর দুই বার উচ্চারিত হয়, তাই এগুলো উচ্চারণগত বা ধ্বনিগত দ্বিত্ব।
এবার একটু বানানের প্রসঙ্গে আসা যাক:
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মে বলা হয়েছে— ‘রেফের পর ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব হবে না।’
মনে রাখতে হবে, এই নিয়মের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব বলতে বানানগত দ্বিত্ব বোঝানো হয়েছে, উচ্চারণগত বা ধ্বনিগত দ্বিত্ব নয়। অর্থাৎ, রেফের পরে দুইটি অনুরূপ বর্ণ দিয়ে গঠিত যুক্তবর্ণ লেখা যাবে না, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দুটি বর্ণ দিয়ে গঠিত যুক্তবর্ণ লেখা যাবে। যেমন: রেফের পরে দুইটি অনুরূপ বর্ণ দিয়ে গঠিত জ্জ (জ্+জ), ব্ব (ব্+ব), ত্ত (ত্+ত), ম্ম (ম্+ম), য্য (য্+য) প্রভৃতি যুক্তবর্ণ দিয়ে অর্জ্জন, বর্ব্বুদ, কার্ত্তিক, ধর্ম্ম, কার্য্য, সূর্য্য, ধৈর্য্য প্রভৃতি বানান লেখা যাবে না। তবে দুইটি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ দিয়ে গঠিত জ্য (জ্+য), গ্য (গ্+য), ঘ্য (ঘ্+য) প্রভৃতি যুক্তবর্ণযুক্ত বর্জ্য, দৈর্ঘ্য, বর্গ্য প্রভৃতি বানান লিখতে কোনো বাধা নেই। (৫ই জুলাই, ২০২০)
ক্রমশ
 
তুলনা যখন উপমা

Language
error: Content is protected !!