Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি – Page 57 – Dr. Mohammed Amin

এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

প্রমুখ ৪৫
 
বাংলাভাষীরা নিত্যদিনের লেখায় হামেশা ব্যবহার করেন, এমন একটি শব্দ হচ্ছে ‘প্রমুখ’। অনেকে বলে থাকেন— “কেবল জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিতগণের উদাহরণের ক্ষেত্রে ‘প্রমুখ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন: শামসুর রাহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ… ” অর্থাৎ, তাঁদের নিয়মানুসারে, কয়েকজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাঁদের মতো আরও অনেক জন রয়েছেন, এমনটি বোঝাতে ‘প্রমুখ’ শব্দটি কেবল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের নামের শেষে ব্যবহার করা যাবে, যা মোটেও সংগত নয়। কেননা, বাংলা ভাষায় ‘প্রমুখ’ শব্দটি দুইভাবে ব্যবহৃত হতে পারে:— ১. বিশেষণ হিসেবে; ২. অব্যয় হিসেবে। মূলত এই ক্ষেত্র দুটির প্রায়োগিক পার্থক্য যথাযথভাবে বিবেচনা করতে না-পারায় তাঁরা এমনটি বলে থাকেন। তাঁদের এই ভ্রান্তি দূর করবার জন্যে ‘প্রমুখ’ শব্দটির আলোচনা শুরু থেকে করা উচিত এবং আমি তাই (তা-ই) করছি—
‘মুখ’ শব্দটির সঙ্গে ‘প্র’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘প্রমুখ’ শব্দটি গঠন করে। সৃষ্ট নতুন শব্দটি বাংলা ভাষায় বিশেষণ কিংবা অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। চাইলে বাক্যের মধ্যে ‘প্রমুখ’ শব্দটি বিশেষ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেটি এই শব্দটির প্রয়োগ শিখতে কোনো কাজ দেবে না বিধায় আলোচনা সেদিকে নিয়ে মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসছি।
যেটি বলছিলাম, ‘মুখ’-এর সঙ্গে ‘প্র’ উপসর্গযোগে গঠিত ‘প্রমুখ’ শব্দটি মূলত বিশেষণ ও অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ‘প্রমুখ’ শব্দটি যখন বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দটির পূর্বে যুক্ত হওয়া ‘প্র’ উপসর্গটি ‘প্রকৃষ্ট’ অর্থের দ্যোতনা ঘটায় এবং নতুন শব্দটিকে ‘প্রধান’ বা ‘শ্রেষ্ঠ’ অর্থের বাহকে রূপান্তরিত করে। অর্থাৎ, বাক্যের মধ্যে প্রমুখ শব্দটি ‘প্রধান’ বা ‘শ্রেষ্ঠ’ অর্থে বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, শুরুতে উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ-করা নিয়মটি অব্যয় হিসেবে ‘প্রমুখ’-এর ক্ষেত্রে না-খাটলেও বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘প্রমুখ’-এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট খাটে। তার মানে, বিশেষণ হিসেবে ‘প্রমুখ’ শব্দটি সাধারণত সম্মানিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয়। যেমন:
ক. ‘আন্না কারেনিনা’ হচ্ছে প্রমুখ লেখক তলস্তয়ের লেখা একটি বিশ্ব নন্দিত উপন্যাস।
খ. আলোচনাসভায় নানান সংস্থার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
এই গেল বিশেষণ হিসেবে ‘প্রমুখ’ শব্দের প্রয়োগ। এবার অব্যয় হিসেবে আলোচ্য শব্দটির প্রয়োগের প্রসঙ্গে আসা যাক।
‘প্রমুখ’ শব্দটি যখন বাক্যের মধ্যে অব্যয়রূপে ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দটির পূর্বে যুক্ত হওয়া ‘প্র’ উপসর্গটি ‘প্রভৃতি’ অর্থ বহন করে এবং সম্পূর্ণ শব্দটি ‘প্রভৃতি মুখ (ব্যক্তি/মানুষ)’ অর্থ ধারণ করে। অর্থাৎ, ‘কয়েকজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করার পর তাদের মতো আরও কিছু ব্যক্তির নাম আছে, যেগুলো ঊহ্য রাখা হয়েছে’, এমনটি বোঝাতে শেষ নামটির পরে অব্যয় হিসেবে ‘প্রমুখ’ শব্দটি ব্যবহার করতে হয়; তা উল্লেখ-করা ব্যক্তিবর্গ সম্ভ্রান্ত হোক, কিংবা সাধারণ। যেমন:
ক. … পুশকিন, গোগল, তুর্গিনেভ, দস্তয়েভস্কি, গোর্কি প্রমুখ হচ্ছেন সে আলোর পথের যাত্রী, যাঁদের শীর্ষ সারথি ছিলেন লিও তলস্তয়।
খ. সভায় মাহাবুব মোর্শেদ, সাইফুল্লাহ, রেজাউল হক প্রমুখ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
গ. সিদ্দিকা আফরোজ পলি, ঐশিক আশরাফ, শোভন চৌধুরী, রিদওয়ানুল্লাহ প্রমুখ শুবাচি শুবাচের যযাতিগুলোর শুদ্ধতায় সহযোগিতা করেন।
মজার বিষয় হচ্ছে, একই বাক্যের মধ্যে ‘প্রমুখ’ শব্দটি বিশেষণ ও অব্যয়রূপে পাশাপাশি (যমকরূপে) অবস্থান করতে পারে। যেমন: তলস্তয়, শেকসপিয়র, গ্যাটে, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ প্রমুখ লেখকের বই না-পড়ে নিজেকে পাঠক দাবি করা একটু বাড়াবাড়িই বটে। (১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০)
ক্রমশ
আশা বনানম প্রত্যাশা