Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি – Page 58 – Dr. Mohammed Amin

এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

আশা বনাম প্রত্যাশা ৪৪
 
‘আশা’ আর ‘প্রত্যাশা’ বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত দুটি শব্দ। অভিধান অনুসারে আশা শব্দটি ‘কাঙ্ক্ষিত কোনোকিছু পাওয়ার বাসনা’, ‘প্রত্যাশা’; ‘আশ্বাস’, ‘ভরসা’ প্রভৃতি অর্থে এবং ‘প্রত্যাশা’ শব্দটি ‘আশা’, ‘কামনা’; ‘প্রাপ্তির সম্ভাবনা’; ‘প্রতীক্ষা’ প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে ‘বাসনা’ বা ‘কামনা’ অর্থে ‘আশা’ আর ‘প্রত্যাশা’ সমার্থক। অভিধান অনুসারে উল্লেখ-করা অর্থে শব্দ দুটি সমার্থক হলেও ওই অর্থে এদের ব্যাবহারিক প্রয়োগে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই ভিন্নতা নিরূপণ করতে না-পারলে শব্দ দুটির যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। আর তাই, বিভ্রান্তি এড়াতে শব্দ দুটির ব্যাবহারিক পার্থক্য স্পষ্ট করা উচিত।
‘আশা’ আর ‘প্রত্যাশা’ শব্দ দুটির ব্যাবহারিক পার্থক্য উপলব্ধির জন্যে প্রথমে ‘প্রত্যাশা’ শব্দটির গঠনগত বিশ্লেষণ করা দরকার। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, ‘আশা’-র সঙ্গে ‘প্রতি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে স্বরসন্ধির নিয়মে (প্রতি + আশা; ই + আ = যা) ‘প্রত্যাশা’ শব্দটি গঠন করে। এখানে ‘প্রতি’ উপসর্গটি ‘অনুরূপ’ বা ‘বিনিময়ে’ বা ‘পরিবর্তে’ অর্থ বহন করে। অর্থাৎ, কোনোকিছুর বা কোনো কাজের বিনিময়ে যে ফলাফল কামনা করা হয়, তাই (তা-ই) হচ্ছে প্রত্যাশা। কোনোকিছুর পরিবর্তে প্রত্যাশা করা হয় বলে একসময় ‘প্রত্যাশা’ শব্দটি ‘প্রতিআশা’-রূপেও প্রচলিত ছিল। কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করতে হলে প্রত্যাশী ব্যক্তিকে ওই ব্যক্তির জন্য কিছু করতে হয়, যার বিনিময়ে সে প্রত্যাশা করতে পারে। যার জন্যে কিছুই করা হয়নি, তার কাছ থেকে কোনোকিছু আশা করা যায়, ‘প্রত্যাশা’ নয়। নিম্নে উল্লেখ-করা প্রয়োগ কটি ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারলে বিষয়টি স্পষ্টতর হয়ে যাবে—
মহেশখালী আইল্যান্ড হাই স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী চলমান এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করছেন, ‘আশা’ নয়। কারণ, শিক্ষকমণ্ডলী তাদের (শিক্ষার্থীদের) পাঠদান করেছেন, পাঠ্যসূচির বিষয়বস্তু পড়িয়ে এই পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুত করেছেন। এখন তাঁরা, তাঁদের পরিশ্রমের বিনিময় হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে ভালো ফলফল কামনা করছেন। তাই, শিক্ষকমণ্ডলীর বাসনাকে ‘আশা’ না-বলে ‘প্রত্যাশা’ বলতে হবে।
 
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচ তামিমকে ভালো ব্যাটিঙের নানান কৌশল শেখাচ্ছেন। তাই, তিনি তামিমের কাছে ভালো ইনিংস প্রত্যাশা করতে পারেন, ‘আশা’ নয়।
 
হেলাল হাফিজ গত দশ বছর ধরে দলের জন্যে স্বার্থহীনভাবে কাজ করছেন। তাই, আসন্ন কমিটি নির্বাচনে তাঁর সভাপতির পদ প্রত্যাশা করা উচিত, ‘আশা’ নয়।
 
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সফলতার জন্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেক পরিশ্রম করছেন। তাই তাঁরা অনুষ্ঠানের সাফল্য প্রত্যাশা করবেন, ‘আশা’ নয়।
 
সকল মা-বাবা শত কষ্ট স্বীকার করে নিজের সন্তানকে সফলদের কাতারে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই, শেষ বয়সে সন্তানের কাছ থেকে উত্তম আচরণ পাওয়া তাঁদের প্রত্যাশা, ‘আশা’ নয়।
 
হেনরিক ইবসেনের দুর্দিনে তাঁর বন্ধু তাঁকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাই, নিজের দুর্দিনের ওই বন্ধু, ইবসেনের কাছ থেকে সাহায্য প্রত্যাশা করবেন, ‘আশা’ নয়।
 
এবার ‘প্রত্যাশা’-র পাশাপাশি ‘আশা’ নিয়ে কিছু বলছি। ‘আশা’-র সঙ্গে বিনিময়ের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ যে-কারোর কাছে যে-কোনো কিছু আশা করতে পারে, কিন্তু প্রত্যাশা করতে পারে না। তার কাছেই প্রত্যাশা করা যায়, যার জন্যে ইতোমধ্যে কোনোকিছু করা হয়েছে। তাই, কারও কাছে কোনোকিছু প্রত্যাশা করা হলে সে প্রত্যাশা পূরণের জন্যে প্রত্যাশিত ব্যক্তির তাড়না থাকে, অনেক সময় দায়বদ্ধতাও থাকে; কিন্তু ‘আশা’-র ক্ষেত্রে তা থাকে না।
 
এক দিনের জন্যেও স্রষ্টার আরাধনা না-করা ব্যক্তিরও বিপদের সময় তাঁর (স্রষ্টার) সাহায্য লাভের যে বাসনা জন্মে, তাই (তা-ই) হচ্ছে আশা।
ন্যায় বিচার প্রাপ্তির যে বাসনা নিয়ে দরিদ্ররা আদালতে যায়, সে বাসনাই হচ্ছে ‘আশা’ (বাস্তবিক হাল বিবেচনায়)। সাধারণ ভক্ত হিসেবে স্মিথের কাছ থেকে আমরা কেবল ভালো ব্যাটিং আশা করতে পারি, তবে তাঁর ক্রিকেট বোর্ডের প্রত্যাশা করবার অধিকার রয়েছে। শুবাচে জিজ্ঞাসাসূচক যযাতি দেওয়ার পর যথাযথ উত্তর আশা করাটাই সংগত, প্রত্যাশা করাটা নয়। একজন দিন মজুরে প্রতিদিন কাজের আশায় বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু সারা দিন কারোর কাজ যথাযথভাবে করবার পর ভালো মজুরি প্রত্যাশা করেন।
 
কোনো বন্ধু পরীক্ষার হলে তার অন্য একজন বন্ধুর কাছ থেকে দেখে দেখে লেখার আশা করতে পারে, ‘প্রত্যাশা’ নয়। অবশ্য পূর্ববর্তী পরীক্ষায় নিজে দেখিয়ে থাকলে পরবর্তী পরীক্ষায় দেখার প্রত্যাশাও করা যায়।
 
আশা পূরণ না-হলে ব্যক্তির বিষাদ অনুভব করবার অধিকার থাকে, কিন্তু অভিমান করা অধিকার থাকে না। অপর দিকে প্রত্যাশা পূরণ না-হলে প্রত্যাশী ও প্রত্যাশিত ব্যক্তির মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হতে পারে, অভিমানী হয়ে একে-অপরকে ছেড়ে যেতে পারে।
তাহলে আপনার পরিচিত জনের কাছ থেকে কোনোকিছু আশা করবেন, না কি প্রত্যাশা? এই দায়ভার আপনার ওপরই ছেড়ে দিলাম। (১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০)
ক্রমশ
পুরাণের চরিত্র এবং শব্দ