Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি – Page 59 – Dr. Mohammed Amin

এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

পুরাণের চরিত্র এবং শব্দ ৪৩
 
কোনো শব্দের অর্থই স্থির নয়; নামের অর্থ তো নয়ই। পৃথিবীতে এমন শব্দের পরিমাণ বোধহয় চার অঙ্কও ছুঁবে না, যে শব্দের উৎপত্তিলগ্নের অর্থ এবং বর্তমান অর্থ অবিকল রয়ে গিয়েছে। তাছাড়া একেবারে আদি মূল পাওয়া যায়, এমন শব্দের সাংখ্যিক পরিমাণও খুবই অল্প। বস্তুত, সম্প্রতি ‘উদ্ভাবন’ (Coinage) শব্দ-গঠন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট শব্দগুলো ছাড়া অন্য কোনো শব্দের আদি উৎস পাওয়া এবং ওই আদি উৎসের অর্থের সঙ্গে বর্তমান প্রায়োগিক অর্থের হুবহু মিল পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে ‘ল্যাবরেটরি’ শব্দটির কথা উল্লেখ করা যায়। বর্তমানে ‘বিজ্ঞানাগার’ অর্থে ব্যবহৃত শব্দটি কয়েকশত বছর পূর্বে কী অর্থে ব্যবহৃত হতো, তা জানলে হয়তো কিছুটা অবাক হবেন। কেননা, সেসময়কার লোক ‘শৌচাগার’ অর্থে ‘ল্যাবরেটরি’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। ‘অসামান্য রূপ’ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত ‘অপরূপ’ শব্দটির আদি ( ? ) অর্থ ছিল ‘কুৎসিত’। ‘নিন্দা’ অর্থে ব্যবহৃত ‘সমালোচনা’ শব্দটি ছিল স্নেহ ও অনুরাগমাখা আলোচনার বাহক। বয়স নির্বিশেষে প্রিয় খাবার সন্দেশের আদি ( ? ) অর্থ ছিল ‘সংবাদ’।
 
এরূপ অসংখ্য শব্দ রয়েছে, ভাষীরা যেগুলোর অর্থ নিজেদের প্রয়োজনে বদলে নিয়েছে। আসলে ভাষা নিরন্তর পরিবর্তনশীল। সময়ের পরিক্রমায়, ভাষীর প্রয়োজনে ভাষা নিজেকে বদলায়, নিত্যনতুন রূপে সজ্জিত করে, পুরোনো রসদে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। আর, কোনো ভাষার পরিবর্তন মানেই ওই ভাষার শব্দভান্ডারের পরিবর্তন। ভাষার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই ভাষার অনেক শব্দের অর্থেও আমূল পরিবর্তন আসে। ভাষী নিজের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করে, পুরোনো শব্দের অর্থে নতুন মাত্রা দান করে ওই শব্দকে নবরূপে তুলে ধরে। নতুন পরিচয় পেয়ে নির্দিষ্ট শব্দ নির্দিষ্ট ভাষীদের কথায় ও লেখায় দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে বিচরণ করে। তবে সকল শব্দের ভালে এরূপ সৌভাগ্য জুটে না। যেসকল শব্দের ভাল এরূপ ভালো নয়, সেগুলোর ঠাঁই অনেক সময় অভিধানেও হয় না। যুগের আবর্তনে ওই ভাষার কথকেরাই ওই একঘেয়ে শব্দটিকে ভুলে যান। আর, কোনো ভাষার কাথিকেরা আপন ভাষার কোনো শব্দের ব্যবহার বাদ দেওয়া ওই শব্দের মৃত্যুসনদ লিখে দেওয়ার শামিল। অতএব, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পুরোনো শব্দের অর্থে বিচিত্রতা এনে ওই শব্দটি আপনার লেখায় ব্যবহার করতে পারাটা কেবল লেখকের লেখার মান বাড়ায় না, পাশাপাশি ভাষার শব্দভান্ডারে ওই শব্দের আসনও পোক্ত করে।
এবার নামের প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলা ভাষায় এমন অনেক নাম রয়েছে, যেগুলো শব্দ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এসব নামের সিংহভাগ এসেছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনির চরিত্র থেকে। মানুষ শুরুতে নির্দিষ্ট পৌরাণিক চরিত্রের বিশেষ কোনো গুণকে লক্ষ্য বানিয়ে নিজের ভাব প্রকাশের প্রয়োজনে উপমা হিসেবে ব্যবহার করে। পরে সে উপমা মানুষের মাধ্যমে চর্চার ফলে, জনপ্রিয়তা প্রাপ্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থের শব্দ হিসেবে অভিধানে জায়গা পেয়ে যায়। তখন কোনো নির্দিষ্ট ভাষী ওই শব্দটি বললে বা লিখলে ওই ভাষার অন্য কথকেরা অর্থ অনুধাবন করতে গিয়ে পৌরাণিক ব্যক্তি-চরিত্রের মধ্যে থমকে না-থেকে চরিত্রটির নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের দিকে ধাবিত হন এবং প্রাসঙ্গিক অর্থ বুঝে নেন। বাংলা শব্দভান্ডারে এরূপ শব্দের সাংখ্যিক পরিমাণ নেহাত কম নয়। ‘কৃষ্ণ’, ‘বিভীষণ’, ‘কুম্ভকর্ণ’, ‘শকুনি’, ‘মিরজাফর’-এর মতো আরও অসংখ্য পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক নাম উল্লেখ করা যাবে, যাঁদের নির্দিষ্ট একটি কর্ম বা গুণ মানুষের মাধ্যমে চর্চিত হতে হতে ওই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গুণ নির্দেশ করতে নামগুলো শব্দের মর্যাদা পেয়ে গিয়েছে। এখন কেউ ‘কৃষ্ণবর্ণের পাথর’ বলবে বা লিখলে শ্রোতা বা পাঠক মহাভারতের কৃষ্ণের কথা মনে করেন না; বরং একটি নির্দিষ্ট বর্ণের কথা বোঝেন। ‘ছাফিয়ার আপুনি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায়’ বলা হলে শ্রোতা আপুনিকে কুম্ভকর্ণ বানিয়ে দেন না, কেবল বেশ ঘুমকাতুরে হিসেবে কল্পনা করেন। কাউকে ‘মিরজাফর’ বলে সম্বোধন করা হলে শ্রোতা ওই ব্যক্তিকে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেন কিংবা গালি হিসেবে বুঝে নেন, নবাব সিরাজুদ্দৌলার সেনাপতি হিসেবে নয়। ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ বলা হলে রামায়ণের চরিত্র বিভীষণের কথা মনে পড়ে বটে, কিন্তু অর্থ নিরূপণের জন্যে ব্যক্তি-বিভীষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না-থেকে তাঁর নির্দিষ্ট চারিত্রিক গুণের উদ্দেশে অগ্রসর হতে হয়। ‘শকুনি মামা’-র কথা বলা হলে যতটা না মহাভারতের দুর্যোধনের মামা ব্যক্তি-শকুনির কথা মাথায় আসে, তারচেয়েও বেশি মাথায় আসে কূটবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির চিত্র।
 
অর্থাৎ, নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যকে লক্ষ্য বানিয়ে বাংলাভাষী এসব নাম নিজেদের লেখায় ও কথায় ব্যবহার করতে করতে দ্ব্যর্থহীন শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সম্প্রতি শুবাচের সম্মাননীয় সভাপতি, ড. মোহাম্মদ আমীন পৌরাণিক চরিত্র ‘যযাতি’-র একটি নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের (সম্পাদিত কর্মের) সঙ্গে সংগতি রেখে ইংরেজি ‘পোস্ট/স্ট্যাটাস’ অর্থে তাঁর (যযাতির) নামটি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। ‘যযাতি’ চরিত্রটির পর্যালোচনা করলে তাঁর (ড. মোহাম্মদ আমীনের) প্রয়োগকে প্রত্যাখ্যান করবার কোনো অবকাশ থাকে না। তাছাড়া পোস্ট/স্ট্যাটাস অর্থে ‘যযাতি’ নামটি শব্দ হিসেবে ব্যবহার করলে কোনোরূপ দ্ব্যর্থও থাকে না, যেখানে কিনা ‘পোস্ট’ বলতে ‘পদ’, ‘গোলের দুই পাশের বার’, ‘সামাজিক মাধ্যমে সাঁটানো লেখা’, ‘ডাক’ প্রভৃতি এবং ‘স্ট্যাটাস’ বলতে ‘পদমর্যাদা’, ‘সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা লেখা’ প্রভৃতি বোঝায়। এই দ্ব্যর্থ পরিহার করতে এবং নিজভাষার শব্দভান্ডারকে ঋদ্ধ করতে একটি পৌরাণিক চরিত্রের নামকে বাংলা ভাষার শব্দভান্ডারে আপন মহিমায় খোলতাই ছড়াতে দিতে আপত্তি কীসে? (৩০শে জানুয়ারি, ২০২০)
 
ক্রমশ
দান কখন অনুদান