অ আর অন্: এক উপসর্গের দুই রূপ এবং প্রয়োগবিধি ৯৫
অ আর অন্— উভয়ই উপসর্গ। ‘অন্’ উপসর্গটি ‘অ’-র একটি রূপভেদমাত্র। মূল শব্দ হচ্ছে ‘ন’। সমাসের ক্ষেত্রে ‘না’ বা ‘অভাব’ অর্থে এই ‘ন’ যুক্ত হলে সমাসবদ্ধ পদে সেটির স্থলে ‘অ’ কিংবা ‘অন্’ উপসর্গ যুক্ত করতে হয়। ব্যাসবাক্যের ‘ন’ কখন ‘অ’, এবং কখন ‘অন্’ হবে, তা একেবারেই সহজ— দুইটি নিয়ম মনে রাখলেই ঝামেলা চুকে যাবে। নিয়ম দুটি হচ্ছে—
১. প্রাতিপদিক বা শব্দের প্রথম বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হলে নতুন শব্দটিতে ‘ন’-এর পরিবর্তে ‘অ’ উপসর্গ যুক্ত করতে হবে। যেমন: ন+খ্যাত = অ+খ্যাত = অখ্যাত;
ন+গণিত = অ+গণিত = অগণিত;
ন+ঘোষিত = অ+ঘোষিত = অঘোষিত;
ন+জীব = অ+জীব = অজীব প্রভৃতি।
২. প্রাতিপদিক বা শব্দের প্রথম বর্ণ স্বরবর্ণ হলে নতুন শব্দটিতে ‘ন’-এর পরিবর্তে ‘অন্’ উপসর্গ যুক্ত করতে হবে। যেমন: ন+আহার = অন্+আহার = অনাহার;
ন+আয়াস = অন্+আয়াস = অনায়াস;
ন+আময় = অন্+আময় = অনাময়;
ন+অতি = অন্+অতি = অনতি;
ন+আবশ্যক = অন্+আবশ্যক = অনাবশ্যক;
ন+আচার = অন্+আচার = অনাচার প্রভৃতি।
সবক্ষেত্রে ‘অ’ লিখতে না-পারার কারণ: ‘ন’-এর পরিবর্তে সবক্ষেত্রে ‘অ’ লিখতে না-পারার মূল কারণ হচ্ছে ‘সন্ধি’। সংস্কৃতে সমাসবদ্ধ শব্দের ক্ষেত্রে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সন্ধি সম্পন্ন করা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, ‘অ’ উপসর্গটি আদিতে স্বরবর্ণযুক্ত শব্দের শুরুতে যুক্ত হলে সন্ধির প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজনমতো সন্ধি সম্পন্ন করলে নিয়মের বাইরে গিয়ে কেবল মূল শব্দের আদ্যস্বরের পরিবর্তন ঘটে একটি অপ্রাসঙ্গিক শব্দ গঠন করে কিংবা মূল শব্দের কোনো পরিবর্তনই হয় না, অথচ যুক্ত-হওয়া উপসর্গটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। যেমন: ন+অনুমিত = অ+অনুমিত = আনুমিত (অ + অ = আ)— কোনো প্রাসঙ্গিক অর্থ পাওয়া যায় না।
ন+আচার = অ+আচার = আচার (অ + আ = আ)— মূল শব্দের কোনো পরিবর্তনই হয়নি বিধায় অর্থেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ন+এক = অ+এক = ঐক— কোনো প্রাসঙ্গিক অর্থ পাওয়া যায় না।
এরূপ অসংগতি এড়াতেই আদিতে স্বরবর্ণযুক্ত শব্দের পূর্বে ‘অ’ উপসর্গের ‘অন্’ রূপটি যুক্ত হয়। (২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১)
ক্রমশ
অবান্তর বনাম অপ্রাসঙ্গিক