Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি – Page 70 – Dr. Mohammed Amin

এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

 
ক্ষমার জন্য কমা ৩২
 
‘শুভ ম্যাম এসেছেন?’
গ্রুপের মধ্যে এই বার্তাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার বন্ধুমহল নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
“এই নামের কোনো ম্যামকে তো জানি না!” প্রথম জন বিস্ময়ের সঙ্গে মন্তব্য করল। দ্বিতীয় জন বলল, “হয়তো আমাদের ইন্সটিটিউটে ‘শুভ’ নামের কোনো নতুন ম্যাম যোগ দিয়েছেন।” “অন্তত এই ম্যাম হলেও একটু বড়ো গলায় পাঠদান করবেন তো?” অন্য একজন প্রশ্ন রাখল। চতুর্থ জনের সেসব নিয়ে চিন্তা নেই, চিন্তা হচ্ছে ম্যাম দেখতে কেমন হবেন, তা নিয়ে। শ্রেণির সবচেয়ে সরলমনা বন্ধুও বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন জুড়ে দিয়ে লিখল, “ম্যামের নাম ‘শুভ’ হয় কীভাবে!” রসিক বন্ধু তার রসবোধ দেখিয়ে সকলের মধ্যে ঘোষণা দিল, “আমাদের সি. আর. ‘শুভ’-এর সঙ্গে ‚শুভ ম্যাম’-কে বেশ মানাবে মনে হচ্ছে!”
 
কিছুক্ষণ পর শুরুর প্রশ্নটি যে করেছে, সে গ্রুপে তার বার্তার জবাবে সকলের প্রতিক্রিয়া দেখে হতবাক হয়ে গেল।
“এসব কী হচ্ছে? আমি আমাদের সি. আর. ‘শুভ’-কে সিমান্টিক্সের ম্যাম এসেছেন কি না, তা জিজ্ঞেস করেছিমাত্র। আর, তোরা কিনা এই তুচ্ছ বিষয়টি নিয়ে মহাকাব্য বানাচ্ছিস। দিস ইজ নট ফেয়ার,” শুরুর প্রশ্নকারী বন্ধু বলল।
 
অন্য বন্ধুদেরই বা কী দোষ? প্রশ্নকর্তা সম্বোধন পদের পরে কমা ( , ) ব্যবহার না-করলে এরূপ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবেই। বন্ধুর বার্তায় কমা ব্যবহার না-করার কারণে অর্থের এরূপ বিপর্যয় দেখে এই বিরামচিহ্নটি নিয়ে আরও এক বার লেখা জরুরি বলে মনে হলো, তাই এই লেখাটি সম্পন্ন করার কাজে লেগে গেলাম।
 
বাক্যের অর্থ পাঠকের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরতে বিরামচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিরামচিহ্ন কেবল অর্থের বিভ্রান্তি দূর করে না, পাশাপাশি পাঠককে দম ফেলার ফুরসতও দেয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিরামচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার লেখকের বক্তব্যকে সহজপাঠ্য ও সাবলীল করে তোলে। তাই, নিজের অনুভূতিকে অন্যের কাছে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে বিরামচিহ্নের যথাযথ ব্যবহার জানাটা দরকারি বইকি। কিন্তু সকল বিরামচিহ্নের ব্যবহার একসঙ্গে আয়ত্ত করা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। তাই, এসবের অধ্যয়ন ধাপে ধাপে হওয়া উচিত। আর, এই দিকটি বিবেচনায় রেখে আমি আমার পরবর্তী আলোচনা কেবল ‘কমার ব্যবহার’ এবং ‘যথাযথ স্থানে কমা ব্যবহার না-করার কারণে অর্থের পরিবর্তন’-এ সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছি।
 
কমার ( , ) ব্যবহার: ইংরেজি ‘comma’-এর আত্তীকৃত বাংলা রূপ হচ্ছে ‘কমা’, যাকে ‘পাদচ্ছেদ’-ও বলা হয়। সাধারণত এই বিরামচিহ্নটি কোনো বাক্যের মধ্যে স্বল্প বিরতির (‘এক’ বলতে যে সময় লাগে) প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। বাক্যের অর্থ স্পষ্টতর করার জন্য নিচে আলোচ্য ক্ষেত্রে কমা ব্যবহার করতে হবে।
 
১. সম্বোধন পদের পরে কিংবা আগে অবশ্যই কমা ব্যবহার করতে হবে। তা না-হলে অর্থের যে কীরূপ বিপর্যয় ঘটতে পারে, তা আলোচনার শুরুতেই দেখানো হয়েছে। আর কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে—
ক. ‘বান্ধবী খাওয়ার পর কথা হবে।’— বাক্যটিতে ‘বান্ধবী’-র পরে কমা ব্যবহার না-করায় বাক্যটির অর্থ দাঁড়িয়েছে— বাক্যটি যিনি লিখেছেন, তিনি কাউকে বলছেন যে, তিনি ‘বান্ধবী’-নামক কোনো খাবার খাওয়া পর আবারও কথাবার্তা চালাবেন!
অপর দিকে ‘বান্ধবী’-র পরে একটি কমা ব্যবহার করা হলে বাক্যটির অর্থ কী হবে, সেটি কে না-জানে!
খ. ‘শুভ জন্মদিন ভাই।’ কমার যথাযথ প্রয়োগ না-ঘটার কারণে এই বাক্যটির অর্থও মারাত্মকভাবে বদলে গিয়েছে। আর, এই কারণে উল্লেখ-করা বাক্যটির মাধ্যমে ‘কোনো ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে’, এমনটি না-বুঝিয়ে ‘জন্মদিন’ শব্দটি ভাইয়ের বিশেষণ হিসেবে কাজ করছে কিংবা নাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, এখানে ‘জন্মদিন’ হচ্ছে একপ্রকার ভাই বা একজন ভাইয়ের নাম; যেমনটি আমরা বলি— বড়ো ভাই, ছোটো ভাই, নেতা ভাই, সাহসী ভাই; তৌফিক ভাই, সাইফুল ভাই, বুরহান ভাই প্রভৃতি। এজন্য ভাই, স্যার, বন্ধু, ভাবি; এদের যে-কাউকে জন্মদিনের শুভকামনা জানাতে চাইলে অবশ্যই কমার যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। অবশ্য কারও নাম ‘জন্মদিন’ হলে ভিন্ন কথা। তখন শিহাব ভাই, শুভ ভাই, শুভ্র ভাই প্রভৃতি সম্বোধনের অনুকরণে জনাব জন্মদিনকে ‘জন্মদিন ভাই’ ডাকতে কোনো বারণ নেই।
উল্লেখ্য, সম্বোধন পদ বাক্যের শুরুতে ব্যবহৃত হলে পদটির পরে এবং শেষে ব্যবহৃত হলে পদটির আগে কমা ব্যবহার করতে হবে। যেমন:
ক. বান্ধবী, খাওয়ার পর কথা হবে।
খ. শুভ জন্মদিন, ভাই।
গ. স্যার, কেমন আছেন?
ঘ. আপনাকে ধন্যবাদ, মান্যবর।
প্রসঙ্গত, বাক্যে অনেক ক্ষেত্রে সম্বোধন পদ হিসেবে ক্রিয়াবিশেষ্যও ব্যবহৃত হয়। সেক্ষেত্রে ওই ক্রিয়াবিশেষ্যের পরে কমা বসাতে হবে।
যেমন:
i. চল, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখি।
ii. পড়, পাণিনি হচ্ছেন প্রথম বর্ণনামূলক বৈয়াকরণ।
 
২.সম্মতি জ্ঞাপন করে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ লিখলে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর পরে কমা ব্যবহার করতে হবে। তা না-হলে অর্থ বদলে যাবে। যেমন:
ক. ‘হ্যাঁ, বলুন।’— এই বাক্যটিতে পূর্বে কেউ কিছু বলবার অনুমতি চেয়েছেন এবং যাঁর কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে, তিনি সম্মতি দিয়ে বলতে বলেছেন, এমনটি বোঝানো হয়েছে।
বাক্যটি কমা ব্যবহার না-করে ‘হ্যাঁ বলুন’ লিখলে অর্থ সম্পূর্ণ বদলে যাবে। তখন বাক্যটির মাধ্যমে কাউকে ‘হ্যাঁ’ বলতে বলা হয়েছে, এমনটি বোঝানো হবে; যেমনটি আমরা বলি— কবুল বলুন, কৃচ্ছ্র বলুন, হাজী বলুন, শ্রীমান বলুন প্রভৃতি।
 
৩. পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ব্যতীত বাকি পদগুলোর পরে কমা ব্যবহার করতে হবে। যেমন:
ক. আন্না কারেনিনা, যুদ্ধ ও শান্তি, পুনরুত্থান, কনফেশনস, ক্রয়োটজার সোনাটা, শয়তান প্রভৃতি হচ্ছে তলস্তয়ের বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস।
খ. মাছ, মাংস, সবজি, ডিম প্রভৃতি খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
উল্লেখ্য, যদি একই ধরনের পদের সংখ্যা নির্দিষ্ট হয়, তাহলে শেষেরটির পূর্বে কমা ব্যবহার না-করে ‘ও’ কিংবা ‘আর’ লিখতে হবে। যেমন:
i. পদার্থ কঠিন, তরল, বায়বীয় ও প্লাজমা অবস্থায় থাকতে পারে।
ii. বাংলাদেশ ছয়টি ঋতু বিরাজমান:— গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
 
৪. সাপেক্ষাধীন সর্বনাম বা অব্যয়যুক্ত (যিনি-তিনি, যা-তা, যখন-তখন, যেসব-সেসব প্রভৃতি) জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রথম খণ্ডবাক্যের পরে কমা বসে। যেমন:
ক. যিনি পরিশ্রম করেন, তিনি সফল হন।
খ. যা খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি, তা আমার দেশের মাটি।
 
৫. কোনোকিছুর সংজ্ঞার্থ লেখার ক্ষেত্রে ‘তাকে ক বলে’, ‘তাই (তা-ই) হচ্ছে ক’, ‘সেটিই হচ্ছে ক’ প্রভৃতি লেখার সময় ‘তাকে’, ‘তাই’ (তা-ই), ‘সেটি/সেটিই’ প্রভৃতির পূর্বে কমা ব্যবহার করতে হবে। যেমন:
ক. যার ওজন আছে এবং স্থান দখল করে, তাকে পদার্থ বলে।
 
৬. প্রত্যক্ষ উক্তির ক্ষেত্রে শুরুর খণ্ডবাক্যের পরে; অর্থাৎ, উদ্ধৃতিচিহ্নের পূর্বের খণ্ডবাক্যের পরে কমা বসে।
যেমন:
ক. ছাফিয়া বলল, “আমি ব্যাকরণ পড়ব।”
খ. শিক্ষক বললেন, “তুমি কি ‘লা মিজারেবল’ উপন্যাসটি পড়েছ?”
উল্লেখ্য, এরকম ক্ষেত্রে বক্তব্য আগে উল্লেখ করে বক্তাকে শেষে উল্লেখ করা হলে এবং বক্তব্যটি বিবৃতিমূলক বাক্য হলে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে কমা বসে। যেমন:
i. “আমি গল্পটি পড়েছি,” ইশমাম জবাব দিল।
 
৭.বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসে। যেমন:
ক. ৩, হাটহাজারি রোড, চট্টগ্রাম।
 
৮. মাসের তারিখের পরে ‘বার’ বা ‘সাল’ উল্লেখ থাকলে মাসের তারিখের পরে কমা বসে। বারের পরে সাল উল্লেখ থাকলে বারের পরেও কমা বসে। যেমন:
ক. ১৯শে মার্চ, ২০১৯ ছিল ছোটো বন্ধু ক-তম জন্মদিন।
খ. ৩রা অক্টোবর, বৃহস্পতিবার থেকে দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হবে।
গ. আগামী ১লা আশ্বিন, বৃহস্পতিবার, ১৪২৬ সনে ইশমামের বড়ো বোনের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।
 
৯. কোনো কিছু/কারও সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি খণ্ডবাক্যের পূর্বে কমা বসাতে হয়। যেমন:
ক. ড. মোহাম্মদ আমীন, একজন বৈয়াকরণ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, শতাধিক বইয়ের লেখক, শুবাচের প্রতিষ্ঠাতা, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার সৈয়দ মোহাম্মদ পাড়া নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. রিকি পন্টিং, ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি মালিক, বিশ্বকাপে একটানা সর্বাধিক ম্যাচ জয়ী অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে।
 
১০. বাক্যের শুরুতে ব্যবহৃত অব্যয়ের পরে কমা ব্যবহার করা যায়। বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করতে এবং বাক্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও কমা ব্যবহার করা যায়। যেমন:
ক. সে গতকাল আসেনি। অতএব, তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
খ. আমি ওসব গুজবের কান দিই না৷ আর, আমাকে ওসব শোনাতেও এসো না।
গ. সে আসেনি। কারণ, সে অসুস্থ ছিল।
 
১১. কোনো বাক্যের শেষে প্রশ্নসূচক পদ বা পদবন্ধ (phrase) জুড়ে দেওয়া হলে ওই পদ বা পদবন্ধের পূর্বে কমা বসাতে হয়। যেমন:
ক. আপনি তো যেতে পারবেন, নাকি?
খ. সেই (সে-ই) তো কাজটি করেছিল, তাই না?
 
১২. বড়ো রাশিতে হাজার, লক্ষ, কোটি প্রভৃতিকে স্পষ্টভাবে বোঝাতে কমা ব্যবহার করা যায়। যেমন: ১২,২৩,২৭,৫৩০। (১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯)
 
[ জ্ঞাতব্য: আধুনিক বাংলায় পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণের আগে বা পরে কমা না-দিলেও চলে। যেমন: বাংলাদেশে গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত ও বসন্ত ঋতু বিরাজমান। ]
ক্রমশ
ফোঁটা বনাম ফোটা