Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি – Page 82 – Dr. Mohammed Amin

এবি ছিদ্দিক-এর শুবাচ পোস্ট সমগ্র যযাতি সমগ্র শুদ্ধ বানান চর্চা শুবাচ ব্যাকরণ বিবিধি

আঁধার আধার ১৯
টম আর ছাফিয়া বেশ ভালো বন্ধু। তাদের বন্ধুতার মূল কারণ হচ্ছে, দুই জনই শুদ্ধ বাংলা বানান এবং ব্যাকরণচর্চায় মনোযোগী। টম শেখায়, ছাফিয়া শেখে। যে-কোনো দিন সুযোগ হলেই সন্ধ্যাবেলায় তাদের বাংলাচর্চা চলে। আজ সন্ধ্যায়ও তারা ব্যাকরণ পড়তে বসেছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে তাদের পড়ায় ছেদ পড়ে। নিঃশব্দ কক্ষে তারা দুই জন নিশ্চুপ বসে থাকে। হঠাৎ ছাফিয়ার বলে ওঠাতে সেই নীরবতা ভাঙে।
: টম, আলোহীন কক্ষে অলস সময় পার না-করে একটি দ্বিধা দূর করে দাও না।
— তুমি আবার কী নিয়ে দ্বিধায় পড়লে?
: আমি ‘আঁধার’ আর ‘আধার’ বানান নিয়ে খুবই মুশকিলে পড়ে যাই। ‘আলোহীন অবস্থা’ বা ‘অন্ধকার’ অর্থে কোনটি লিখব এবং ‘স্থান’ অর্থে কোনটি লিখব, তা কিছুতেই মনে রাখতে পারি না।
— তুমি তো এই বিষয়টি অতি সহজেই পারার কথা। সেদিনই তো বলেছিলাম, কোনো শব্দ তৎসম থেকে তদ্ভবতে রূপান্তরিত হওয়ার পর শব্দটির কোনো নাসিক্য বর্ণ লোপ পেলে তার পরিবর্তে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করতে হয়। তৎসম শব্দ ‘অন্ধকার’ থেকে তদ্ভব শব্দ ‘আঁধার’-এর উৎপত্তি। যেহেতু বর্তমান রূপে ‘অন্ধকার’-এর নাসিক্য বর্ণ দন্ত্য-‘ন’ লোপ পেয়েছে, সেহেতু ‘অন্ধকার’ অর্থে ‘আঁধার’ বানান চন্দ্রবিন্দু দিয়েই লিখবে।
: এত তৎসম-তদ্ভব কীভাবে যে মনে রাখি! শব্দ দুটি নিয়ে বিভ্রান্তি কাটানোর অন্য কোনো সহজ পদ্ধতি নেই?
— আরও সহজ চাই?
: আমি কি আর এত তৎসম-তদ্ভব চিনি? তাছাড়া ‘স্থান’ বানানেও তো দন্ত্য-‘ন’ আছে। সেটিতেও তো দন্ত্য-‘ন’-এর জন্য চন্দ্রবিন্দু হতে পারত।
— তাও বটে। তবে তোমার জন্য আরও সহজ নিমোনিক উল্লেখ করা যায়।
: তুমি কিন্তু খুবই খারাপ। শুরুতে সহজ পদ্ধতির কথা কখনোই বল না।
— আরে, তোমাকে প্রথমে ব্যাকরণগত ব্যাখ্যা শেখাতে চেয়েছি। কারণ, এতে তুমি ‘কাঁটা’, ‘বাঁকা’, ‘আঁকা’ ইত্যাদির মতো বানানগুলোও আয়ত্ত করতে পারবে।
: আমার কেবল ‘আঁধার’ আর ‘আধার’ নিয়ে দ্বিধা দূর করা চায়। তাই আগে এই দুটো মনে রাখার জন্য কোনো সহজ পদ্ধতি থাকলে বল।
— আচ্ছা, বলছি। তুমি ভূত চেন তো?
: হেই! কোথায় দুটি বানান মনে রাখার কৌশল বলতে বললাম, আর তুমি অন্ধকারে ভূতের কথা শুরু করছ। হুঁহ্! আমি কিন্তু এসবে মোটেও ডরাই না!
— তুমি রাগ কেন করছ? বানান দুটি নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই তো জিজ্ঞেস করলাম।
: কী! ‘আঁধার’ আর ‘আধার’-এর সঙ্গে ভূতের কী সম্পর্ক?
— আগে ভূত চেন কি না, সেটি তো বলবে।
: হ্যাঁ, চিনি। তো?
— ভূত কীভাবে কথা বলে, একটু করে বল তো।
: এবার কিন্তু সত্যি সত্যি রাগ উঠছে। আমি পেত্নী নাকি, যে কিনা ভূতের মতো কথা বলবে?
— আরে! তুমি না রোজ ঠাকুর মার ঝুলি দেখ?
: হ্যাঁ, দেখি। তাতে কী?
— সেখানে তো ভূতেরা কত সুন্দরভাবে কথা বলে।
: ভূতের কার্টুনে ভূতেরা কথা না-বলে গরু-ছাগলেরা কথা বলবে নাকি?
— আচ্ছা, শোন, আমি মজা করার জন্য তোমাকে ভূতের মতো করে বলতে বলছি না, বানান দুটি শেখাব বলে বলতে বলছি।
: আচ্ছা! এই বললাম তবে: ” হেঁহ্ হেঁহ্ হেঁ, আঁমি তোমাঁর ঘাঁড় মঁটকাঁব!”
— বাহ্! একদম একানড়ের মতো বলেছ!
: এসব বাদ দিয়ে আসল কথা বল।
— আসল কথা একদম সহজ। ভূতেরা চন্দ্রবিন্দু ছাড়া কথা বলতে পারে না। আর ভূতেরা মানুষকে ভয় দেখায় আলোহীন অবস্থায় তথা রাতের অন্ধকারে। যেহেতু ভূতেরা অন্ধকার ছাড়া ঠিকমতো চলতে পারে না এবং চন্দ্রবিন্দু ছাড়া কথা বলতে পারে না, সেহেতু ‘চন্দ্রবিন্দু’ ছাড়া ‘অন্ধকার’-এর ‘আঁধার’ বানানও শুদ্ধ হতে পারে না।
: তার মানে, ভূতেরা মানুষকে অন্ধকারে ভয় দেখায়, আর তারা চন্দ্রবিন্দু ছাড়া কথা বলতে পারে না বলে ‘অন্ধকার’ অর্থে ‘আঁধার’ বানানও চন্দ্রবিন্দু ছাড়া লিখতে পারব না, তাই তো?
— একদম!
: শুরুতেই এইভাবে শেখালে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?
— যাও, এবারে চেরাগটি জ্বালানোর ব্যবস্থা কর। না-হয় এই অভেদ্য আঁধারে এই নির্জন আধার ভূতের আসরে রূপ নিয়ে আমাদের ঘাড় মটকাতে দেরি হবে না!
জ্ঞাতব্য: ১. ‘আঁধার’ শব্দটি ‘অন্ধকার’, ‘আলোহীন অবস্থা’, ‘বিষণ্ণ’ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করা যায়।
২. ‘আধার’ শব্দটি ‘স্থান’, ‘পাত্র’, ‘আশ্রয়’, ‘মাছ বা পাখির খাদ্য’ ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করা যায়।
প্রয়োগ: পাখিটি বাচ্চাকে হারিয়ে আঁধার মনে আঁধার আধারে আধারের ভেতরে আধার খুঁজতে গিয়ে কেবল আধার মতো আদা পেল। (১৯শে মার্চ, ২০১৯)
ক্রমশ
এক শুদ্ধ দুইভাবে