সম্প্রীতি চাই ৬
শুদ্ধ বানান চর্চা(শুবাচ) আমার কাছে কেবল শুদ্ধভাবে বানান চর্চার একটি গ্রুপ নয়, বরং আমার নিকট শুবাচ হচ্ছে একটি পরিবার। কেননা আমি শুবাচ থেকে কেবল শুদ্ধভাবে বাংলা বানান ও বাংলা ব্যাকরণের শিক্ষা পাই না, পাই অন্যের সঙ্গে যথাযথ আচরণের শিক্ষাও; সেটি বয়সে ছোটোদের সঙ্গে হোক কিংবা বড়োদের সঙ্গে। যে-কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কতটা নম্রতার সঙ্গে আচরণ করা যায় সেটি ‘শুবাচ’ পরিবারের একজন সদস্য না হলে বোধহয় জানা ও শেখার সুযোগ হতো না। যদি শুবাচে কেউ লেখায় বা আচরণে কোনো ভুল করেন তবে অন্যরা কী চমৎকারভাবেই না ভুলটি শুধরে নেওয়ার সুযোগ করে দেন।
ফেসবুকে প্রায় গ্রুপ বা পেইজে কারও ভুল ধরিয়ে দিলে যিনি ভুল ধরিয়ে দেন, তাঁকেই অপদস্ত হতে দেখা যায়। আমার দেখা শুবাচই একমাত্র গ্রুপ যেখানে কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ইদানীং কিছু পোস্ট, পোস্টের মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য পড়ে আমি খুব বেশি মর্মাহত হয়েছি। গত হয়ে যাওয়া কিছু পোস্টের মন্তব্যে দেখলাম— মূল বিষয় নিয়ে যতটা-না মন্তব্য করা হয়েছে, তারচেয়ে বেশি পরিমাণ মন্তব্য করা হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রমণের জন্য। আক্রমণের ভাষাও অতি ঝাঁজালো। যেগুলোর কারণে আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় শুবাচ তার পূর্বের সম্প্রীতি হারিয়ে ফেলেছে! কেউ ভুল বা অনুচিত পোস্ট কিংবা মন্তব্য করতেই পারেন। কারণ তাঁর নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই রয়েছে এবং আমরাও সেই স্বাধীনতা দিতে বাধ্য।
কারও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে ভলতেয়ারের একটি চমৎকার উক্তি রয়েছে। ভলতেয়ার বলেছিলেন, “আমি আপনার মতে বিশ্বাসী না হতে পারি, কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য ফাঁসিকাষ্ঠে যেতেও রাজি আছি।” অর্থাৎ, শুবাচে যে-কেউই তাঁর মতামত প্রকাশের অধিকার রাখেন, সেই মতামত যৌক্তিক হোক কিংবা অযৌক্তিক। যৌক্তিক মতামত হলে তা যে সকলে স্বাগত জানাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যতসব বিপত্তি অযৌক্তিক মতামত নিয়ে।
কারও অযৌক্তিক বিবৃতি বা মন্তব্য অন্যের অপছন্দ হওয়াটা মোটেও বিচিত্র ব্যাপার নয়। কিন্তু সেই অযৌক্তিক বিবৃতি বা মন্তব্যের জবাব চাঁছাছোলা ভাষায় দিতে হবে, এমন তো কোনো বাধ্যকতা নেই। শ্রদ্ধেয় আমীন স্যারের বিবৃতিতে কয়েকটি চমৎকার বাক্য পড়েছিলাম। স্যার বলেছিলেন, “কোনো ভদ্রলোক অপ্রিয় কথা সোজাসুজি বলতে চান না। কিন্তু অপ্রিয় কথাটি যখন না বললেই নয়, তখন ব্যক্তিত্ব বা মানসম্মান কিছুটা হলেও রক্ষার জন্য একটু ঘুরিয়ে শোভনীয়ভাবে বলেন।” অর্থাৎ, কারও বিবৃতি বা মন্তব্য মনে না ধরলে বা অযৌক্তিক মনে হলে বিষয়টি বিবৃতিদাতা বা মন্তব্যকারীকে এমনভাবে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তিনি মনঃক্ষুণ্ন না হন এবং তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে শুধরে নিতে পারেন। যদি আমরা সর্বদা এমনটি করতে পারি, তাহলে হয়তো আবারও সেই শুবাচ ফিরে পাব, যে শুবাচে কেবল বানানের শিক্ষা পাওয়া যেত না, পাওয়া যেত যথাযথ উত্তম আচরণেরও শিক্ষা। ( ৯ই এপ্রিল, ২০১৮)
ক্রমশ
বামা