কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)
ড. মোহাম্মদ আমীন
এস্তোনিয়া (Estonia)
ইস্তোনিয়া বা এস্তোনিয়া উত্তর-পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। সরকারি নাম এস্তোনিয়া প্রজাতন্ত্র। এর রাজধানীর নাম তাল্লিন। দেশটি বাল্টিক সাগরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। এটি বাল্টিক দেশগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম এবং সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত। লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া অপর দুইটি বাল্টিক রাষ্ট্র। এস্তোনিয়ার পশ্চিমে বাল্টিক সাগরের অপর প্রান্তে সুইডেন অবস্থিত। এর দক্ষিণে লাতভিয়া, পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরদিকে ফিনল্যান্ড উপসাগরের অপর তীরে ফিনল্যান্ড অবস্থিত।
আধুনিক এস্তোনিয়া নামটি ল্যাটিন রোমানিকরণ শব্দ ইস্টা (Aesti) শব্দ হতে উদ্ভুত। রোমান ইতিহাসবেত্তা ট্যাসিটাসের (Tacitus) জার্মানিকায় এমন বিবরণ পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা প্রোটো জার্মানিক অস্টাম (austam) এবং প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়ান শব্দ অস (aus-) হতে এস্তোনিয়া শব্দের উদ্ভব। যার অর্থ পূর্ব। প্রাচীন স্ক্যান্ডান্যাভিয়ান সাগায় এটি ইস্টল্যান্ড (Scandinavian sagas)নামে উল্লেখ আছে। এখনও দেশটিকে আইসল্যান্ডিক (Icelendic) নামে অভিহিত করা হয়। তবে প্রাচীন ল্যাটিন ও অন্যান প্রাচীন গ্রন্থসমূহে ভূখণ্ডটিকে ইস্টিয়া এন্ড হিস্টিয়া (Estia and Hestia) নামে চিহ্নিত করার নজিরও পাওয়া যায়।
এস্তোনিয়ার মোট আয়তন ৪৫,৩৩৯ বর্গকিলোমিটার বা ১৭,৫০৫ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগ ৪.৪৫%। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, এস্তোনিয়ার মোট জনসংখ্যা ১৩,১৩,২৭১ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্ব ২৮। আয়তন বিবেচনায় এস্তোনিয়া পৃথিবীর ১৩২-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ১৫৪-তম। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ১৮১-তম জনবহুল দেশ। সরকারিভাবে এস্তোনিয়ার অধিবাসীদের এস্তোনিয়ান বলা হয়। সরকারি ভাষা এস্তোনিয়ান, তবে ভোরো ও সেতু আঞ্চলিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। তাল্লিন রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, এস্তোনিয়ার জিডিপি ৩৭.৮৭৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ২৮,৭৮১ ইউএস ডলার। অন্যদিকে জিডিপি (নমিনাল) ২৮.৭৮১ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১৪,৪২৫ ইউএস ডলার। মাথাপিছু আয় বিবেচনায় এস্তোনিয়া ৪১-তম ধনী দেশ।
এস্তোনিয়া মূলত জলা ও প্রাচীন অরণ্যে পূণ্য একটি নিম্নভূমি। এর উপকূলীয় জলসীমায় বহু দ্বীপ আছে। এস্তেনিয়ার রাজধানী তাল্লিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাল্টিক সমুদ্রবন্দর এবং ওদশের বৃহত্তম শহর। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন বলপ্রয়োগ করে এস্তোনিয়া ও অন্যান্য বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো নিজের সীমানার অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এর আগে এটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। এস্তোনিয়া ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে আগস্ট পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করে। প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে ১৫ টি প্রজাতন্ত্র হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে : রাশিয়া, ইউক্রেন, জর্জিয়া, বেলরুশিয়া, উজবেকিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইযান, কাজাখাস্তান, কিরগিজস্তান, মলদোবা, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ১ মে এস্তোনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে এবং একই বছরের ২৯শে মার্চ থেকে দেশটি ন্যাটো জোটভুক্ত। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ নভেম্বর এস্তোনিয়ার পতাকা প্রথম গ্রহণ করা হয়। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে এটা কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত জাতীয় পতাকাটি ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বে পতাকাটা কিছুটা পরিবর্তন করে গ্রহণ করা হয়।
এস্তোনিয়ার দাপ্তরিক রাজধানী তাল্লিন, যদিও এ দেশে একাধিক স্বীকৃত রাজধানী রয়েছে। যা বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়। তার্তু এস্তোনিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী এবং পার্নু দেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। তাল্লিন শহরের মেয়ে নিবন্ধনকৃত প্রত্যেক নাগরিককে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করার সুযোগ দিয়েছে। যাতায়াত ভাড়া মওকুফ করার সুবিধা নিতে অনেক নাগরিক অধিক হারে নিবন্ধিত হতে শুরু করে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মেয়রের এ কৌশল সরকারকে লাভবানই করে পক্ষান্তরে। এখানে প্রত্যেক স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। পৃথিবীর ২০০ দেশের মধ্যে পরিচালিত হিসাব অনুযায়ী শিক্ষিতের হার বিবেচনায় এস্তোনিয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, এ দেশের মানুষের শিক্ষিতের হার ৯৯.৮%।
এস্তোনিয়া পৃথিবীর প্রথম দেশ, যেখানে অনলাইনের মাধ্যমে সাধারণ নির্বাবচনে রাজনীতিক নেতা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। এস্তোনিয়ার দুটি স্বাধীনতা দিবস আছে। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়ন হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগস্ট ৫১ বছর দখল করে রাখার পর আবার স্বাধীন হয়। প্রথম দিনটি স্বাধীনতা দিবস এবং দ্বিতীয় দিবসটাকে বলা হয় স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার দিবস (Restoration of Independence Day)। দেশের মোট আয়তনের ৫০% বন।
এস্তোনিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে কম ধর্মবাজ রাষ্ট্র। জনগণের মাত্র ১৪% নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসী বলে দাবি করে। বাকিদের কোনো প্রাতিষ্টানিক ধর্ম বা ঈশ্বরে কোনো বিশ্বাস নেই। দেশের আয়তন প্রতি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উল্কাগর্ত রয়েছে এস্তোনিয়ায়। দাবারুদের এখানে খুব সম্মান করা হয়। দাবারু গ্র্যন্ড মাস্টার পাউল কেরেস এস্তোনিয়ায় জন্মগ্রহণকরেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা যান। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ১ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে। যা এস্তোনিয়ার মোট জনসংখ্যার ১০%।
ভদকা উৎপাদনে এস্তোনিয়ার সুনাম বিশ্বজোড়া। দামও বেশ সস্তা। বিশ্বের সর্বাধিক লোকগীতি সংগ্রহের রেকর্ড এস্তোনিয়ার দখলে। এ পর্যন্ত তাদের সংগৃহীত লোকগীতির সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জনগণের ব্যবহারও অত্যন্ত অমায়িক। তবে এখানকার নাগরিক হওয়া কঠিন। কারণ এস্তোনিয়ায় দ্বৈত নাগরিকত্ব বৈধ নয়।
সাইপ্রাস (Cyprus) : ইতিহাস ও নামকরণ
চেক রিপাবলিক (Czech Republic) : ইতিহাস ও নামকরণ
ডেনমার্ক (Denmark) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও প্রধান