কবি আল মাহমুদ

কবি আল মাহমুদ : শ্রদ্ধা ও স্মরণে

ড. মোহাম্মদ আমীন

কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মাহমুদের পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। সাহিত্যের প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাঁর সরব পদচারণা থাকলেও তিনি কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত। আল মাহমুদ ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর। তাঁর দাদা আব্দুল ওহাব মোল্লা হবিগঞ্জ জেলায় জমিদার ছিলেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের পর আল মাহমুদ গল্প লেখায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম ছোটোগল্প গ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক পদে উন্নীত হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন।

কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে তাঁর প্রাথমিক জীবনের দুটি বিদ্যাপীঠ। এই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। ১৯৫০-এর দশকে যে কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তাদের মধ্যে আল মাহমুদ অন্যতম। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে প্রারম্ভে তার সাহিত্যচর্চার প্রসারকাল। এসময় তিনি নিজ অদ্বিতীয়তায় অবিচল থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিক, ভিন্ন চেতনায় সমৃদ্ধ করেছেন।

সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আল মাহমুদ ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। এসময় তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি পরিত্যাগ করলে আল মাহমুদ সেখানে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী পত্রিকা হিসেবে পরিচিত দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ বছর বয়স থেকে তাঁর কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ ও কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির কারণে উভয় বাংলার পাঠকদের কাছে আল মাহমুদ নামটি সুপরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ তাঁকে কবি হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। এরপর প্রকাশিত কালের কলস (১৯৬৬), সোনালি কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থগুলো আল মাহমুদকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম সোনালি কাবিন। ১৯৯০-এর দশক থেকে তাঁর কবিতায় বিশ্বস্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস উৎকীর্ণ হতে থাকে; এজন্য তিনি প্রগতিশীলদের সমালোচনার মুখোমুখি হন।

প্রকাশিত গ্রন্থ : লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া, অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না, Al Mahmud In English, দিনযাপন, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, একটি পাখি লেজ ঝোলা, পাখির কাছে ফুলের কাছে, আল মাহমুদের গল্প, গল্পসমগ্র, প্রেমের গল্প, যেভাবে বেড়ে উঠি, কিশোর সমগ্র,, কবির আত্নবিশ্বাস, কবিতাসমগ্র-১, কবিতাসমগ্র-২, পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত,, গন্ধ বণিক, ময়ূরীর মুখ, না কোন শূন্যতা মানি না, নদীর ভেতরের নদী, পাখির কাছে , ফুলের কাছে, প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা, প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা, প্রেমের কবিতা সমগ্র, উপমহাদেশ, বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ, উপন্যাস সমগ্র-১, উপন্যাস সমগ্র-২, উপন্যাস সমগ্র-৩,, তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে, ছায়ায় ঢাকা, মায়ার পাহাড় (রূপকথা)., ত্রিশেরা, উড়াল কাব্য প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

পুরস্কার : বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮), জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২), কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬), কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৬), নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪),, লালন পুরস্কার (২০১১)

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। কবির প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সাহিত্যে তাঁর অবদান।


Knowledge Link

শুবাচ

শুবাচ/২

শুদ্ধ বানান চর্চা/১

শুদ্ধ বানান চর্চা/২

শুদ্ধ বানান চর্চা /৩

শুদ্ধ বানান চর্চা /৪

বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল

কীভাবে হলো দেশের নাম

সাধারণ জ্ঞান লিংক

বাংলা ভাষার মজার লিংক

Language
error: Content is protected !!