ড. মোহাম্মদ আমীন ও আবীর চৌধুরী মীম
করোনাভাইরাস (coronavirus) হলো বিভিন্ন প্রকৃতির একদল ভাইরাস, যা বিভিন্ন প্রাণীর দেহে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। করোনা, সার্স ও মার্স করোনাভাইরাসের উন্মোচিত তিনটি রূপ। তবে সাধারণভাবে এটি করোনাভাইরাস নামে পরিচিত। চেহারা, আকার-আকৃতি এবং আচরণ বিবেচনায় চিকিৎসাজগতে করোনাভাইরাস রহস্যময় ভাইরাস নামে পরিচিত। নামটিও তার অদ্ভুত; যেমন পবিত্র তেমন সুন্দর। এবার দেখা যাক করোনা শব্দের অর্থ।
ল্যাটিন করোনা (corona ) এবং গ্রিক কোরনে বা করোনা (korone) শব্দের অর্থ— সূর্য হতে ছড়ানো রশ্মি, যাকে বলা হয় জ্যোতির্বলয়। গ্রিক পুরাণমতে, করোনা হচ্ছে—দেবদেবীর মাথায় পরিহিত মুক্তাখচিত রাজকীয় বা ঐশ্বরিক তাজ, যা থেকে ছড়িয়ে পড়ত জ্যোতির্বলয়ের মতো রশ্মি। হীরকখণ্ড হতেও এমন আলো বের হয়। অর্থাৎ, ল্যাটিন ও গ্রিক করোনা বা কোরনে শব্দ থেকে করোনাভাইরাস নামের উদ্ভব। এবার দেখা যাক, কেন একটি প্রাণসংহারী ভাইরাসের কপালে এমন সুন্দর ও আকর্ষণীয় নাম জুটল।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যপ্রাচে ব্রঙ্কাইটিস আক্রান্ত দুটি মুরগি এবং একই বছর সর্দিকাশিতে আক্রান্ত দুজন মানুষের কফে প্রথম এই ভাইরাস পাওয়া যায়। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায়— মুরগি ও মানুষের মাঝে পাওয়া ভাইরাসটির আকৃতি অভিন্ন। মনে হচ্ছিল ভাইরাসটি হীরার দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভাইরাসটি যেন একটা জ্যোতির্বলয়, শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আলোর মতো গোলাকার রশ্মি। যা দেখতে রোমান দেবতাগণের হীরকখচিত তাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া আলোর মতো। তাই বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির নাম দেন করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করার পর মারাত্মক আকার ধারণ করলে তাকে বলা হয় সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) বা সার্স ভাইরাস। অনেকে মনে করতে পারেন, করোনা ভাইরাস লেখা হচ্ছে না কেন?
প্রশ্ন আসতে পারে—কেন লেখা হচ্ছে ‘করোনাভাইরাস’; কেন লেখা হচ্ছে না— ‘করোনা ভাইরাস’। ‘করোনা ভাইরাস’ কথার মানে হতে পারে— করোনা রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস, বা করোনা নামের একটি রোগ যা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা কোনো রোগ নয় এবং কোনো রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসও নয়। করোনা অর্থ জ্যোতির্বলয় বা ঐশ্বরিক তাজ। ‘করোনা’ রোগের নাম নয় বলে করোনার কোনো ভাইরাস থাকতে পারে না। তাই ‘করোনাভাইরাস’ নিজেই নির্দিষ্ট একটি ভাইরাস চিহ্নিতকারী নাম হয়ে আছে।
গোরু ও শূকরের মধ্যে করোনাভাইরাস অনুপ্রবেশ করলে পাকস্থলীকে আক্রান্ত করে। ফলে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এই ভাইরাস পাখিদের ফুসফুসকে আক্রান্ত করে, ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যেও করোনাভাইরাস ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। প্রথমে স্বাভাবিক সর্দিকাশির মতো লক্ষণ দেখা যায়। মনে হয়, সামান্য সর্দিকাশি, যাকে কেউ সাধারণত
তেমন একটা পাত্তা দেয় না। কেননা, এরূপ সর্দিকাশি যেমন সহজে হয় আবার তেমন সহজে চলে যায়। কিন্তু কোরোনাভাইরাস বা সার্স ভাইরাসের আক্রমণে সৃষ্ট সর্দিকাশি আর যায় না। ধীরে ধীরে হঠাৎ একদিন পুরো ফুসফুসকে অকেজো করে দেয়। তাই আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসা করা না গেলে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে— এটি হচ্ছে সার্স ভাইরাস আক্রান্ত রোগির ভয়নাক দিক। এ ভাইরাইসের আর একটি ভয়ানক দিক হচ্ছে— এখনো কোনো প্রতিষেধক টিকা বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর বেইজিংসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ৫০০, কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চাইতে বেশি। তাদের ধারণা প্রায় ২০০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। উহান শহর ছেড়ে যারা অন্য কোথাও যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও থাইল্যান্ডে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।সার্স ভাইরাসে ২০০২ থেকে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে চীনে ও হংকংয়ে প্রায় সাড়ে ৬০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। ইতোমধ্যে নেপালেও ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে বাংলাদেশে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে কি না এখনও জানা যায়নি। আমাদের সরকার এখন মেয়র নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। অধিকন্তু, বাংলাদেশের মানুষের কাছে সর্দিকাশি এত সামান্য বিষয় যে, এটাকে রোগ বলেই মনে করে না। সার্স ভাইরাসের আক্রমণে মারা গেলেও দোষ গিয়ে পড়বে নিউমোনিয়ার ঘাড়ে।
উপসর্গ
১. বারবার উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর।
২. জ্বরের পর দীর্ঘ কাশি
৩. শিশুদের শ্বাসকষ্ট প্রবণতা
৪. প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারণত মাথাব্যথা এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।
৫. অত্যন্ত ছোঁয়াচে।
সংক্রমণ হতে মুক্ত থাকার কৌশল
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সার্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। এই রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দিকাশি হতেও এ রোগ ছড়াতে পারে। এই রহস্যময় ভাইরাস যাতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে না-পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক।এই রোগের কোনো প্রতিষেধক টীকা আবিষ্কৃত হয়নি। এই সময় করোনাভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত গুরুতর ও মারাত্মক। সংক্রামিত হলে একবারেই নিরাময় নাই ।তবে কিছু সতর্কতা গ্রহণ করলে করোনাভাইরাস বা সার্স থেকে মুক্ত থাকা যায়। এই রোগ অত্যন্ত কোরোনাভাইরাস বা সার্স ভাইরাসের আক্রমণ হতে মুক্ত থাকার কয়েকটি উপায় নিচে দেওয়া হলো:
ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন। যথাসম্ভব গণপরিবহণ এড়িয়ে চলুন। প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন। যেখানেই যান না, ঘরে ঢুকে সবার আগে ভালো করে হাতমুখ ধুয়ে নিন। কোনো কিছু রান্না করার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার আগে হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ডিম ও মাংস রান্নার সময় ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিন। ময়লা কাপড় দ্রুত পরিষ্কার করে নিন। গন্ডদেশ বা গলা আর্দ্র রাখতে, গলা শুকিয়ে যেতে দেবেন না । তৃষ্ণা পেলে অনতিবিলম্বে অল্প করে হলেও পানি পান করবেন। যাতে আপনার গলায় মেমব্রেন বা ঝিল্লি শুকিয়ে না যায় । গন্ডদেশের ঝিল্লি শুকিয়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ভাইরাস আপনার শরীরে আক্রমণ করতে পারে । ঘরবাড়ি ও তার চারিদিক, মহল্লা ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। অনিবার্য না-হলে ঘরের দরজা-জানাল খোলা রাখবেন না। সর্বশেষ এখানে বর্ণিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার জন্য সবাইকে সচেতন করুন।
গীতি ও সংগীত : নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীতের পার্থক্য
প্রায়শ ভুল হয় এমন কিছু শব্দের বানান/২
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন