কসোভো (Kosovo) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)

ড. মোহাম্মদ আমীন

কসোভো (Kosovo)

কসোভো ইউরোপের বলকান অঞ্চলের একটি রাষ্ট্র, যা পূর্বে সার্বিয়ার একটি প্রদেশ ছিলো। প্রদেশটি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে জাতিসংঘ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রদেশটির উপর সার্বিয়ার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে। কার্যত এটির উপর সার্বীয় শাসনের প্রয়োগ নগণ্য। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এটি স্বাধীনতা ঘোষণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশ কসোভোকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কসভোর সীমান্তে মন্টেনিগ্রো, আলবেনিয়া ও ম্যাসিডোনিয়া অবস্থিত। অধিবাসীর   বেশিরভাগই জাতিগতভাবে আলবেনীয়। তবে সার্বীয়, তুর্কি, বসনীয়, জিপসি এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে। কসোভো ছিল  ছিল প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার সার্বিয়া প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মে সার্বিয়া যুগোশ্লাভিয়া হতে স্বাধীনতা পায়। যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, মেসেডোনিয়া, মন্টেনেগ্রো, স্লোভেনিয়া এবং সার্বিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীকালে সার্বিয়ার কসোভো প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় কসোভো প্রজাতন্ত্র।

সার্বিয়ান শব্দ কসোভো মূলত কসোভো পলজি ভাষা হতে আগত একটি শব্দ। এ ভাষায় কস (kos) শব্দের অর্থ কালো পাখি এবং ওভো (ovo) শব্দটি সার্বিয়ান ভাষা সম্বন্ধসূচক বিশেষণ প্রকাশের জন্য সাধারণত প্রত্যয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এর আক্ষরিক অর্থ কৃষ্ণ পাখির জমি বা (Field of Blackbird) বা কালো পালিক মাঠ। হাঙ্গেরিয়ান রিগোমেযো (Rigomezo) ভাষায় এর অর্থ গায়ক পাখির মাঠ (field of the thrush)।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি কসোভোর পতাকা গৃহীত হয়। সাইপ্রাস ইউরোপ মহাদেশের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এর জাতীয় পাতাকার পুরোটাই দেশটির মানচিত্র অঙ্কিত। মানচিত্রের নিচে পাতাসহ দুটি অলিভশাখা। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত এটি পৃথিবীর একমাত্র পতাকা ছিল, যেখানে দেশের মানচিত্রের প্রতীক রয়েছে। এমন প্রকৃতির জাতীয় পতাকা আর ছিল না। তবে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে  ইউরোপ মহাদেশের আর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কসোভো যে পতাকাটি গ্রহণ করে, তাতেও দেশের মানচিত্র খচিত। পতাকাটির মানচিত্রের ওপর রয়েছে পাঁচ-বিন্দুর ছয়টি তারকা।

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি কসোভো স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশের মর্যাদা লাভ করে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই রিপাবলিক অব কসোভো প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুন (United Nations Security Council resolution 1244) এর অধীনে জাতিসংঘের মাধ্যমে শাসিত হতে থাকে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে  স্টিয়ারিং গ্রুপের তত্ত্বাবধানের সমাপ্তি ঘটে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এপ্রিল ব্রাসেলস চুক্তি সম্পাদিত হয়।

কসোভোর মোট আয়তন ১০,৯০৮ বর্গকিলোমিটার বা ৪,২২১ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগ ১.০%। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, জনসংখ্যা ১৮,৫৯,২০৩ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৫৯। আলবেনিয়ান ও সার্বিনিয়ান দেশটির দাপ্তরিক ভাষা এবং বসনিয়ান, তুর্কি, গুয়ারানি ও রোমানি স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা। সরকারিভাবে কসোভোর অধিবাসীদের কোসোভার ও কসোভান বলা হয়। প্রিস্তিনা কসোভোর রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, কসোভোর মোট জিডিপি (পিপিপি) ১৭.৭৮০ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৯,৫৭০ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৭.৮১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪,৪২০ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ইউরো।

জিঙ্ক, সীসা, কপার, সিলভার, স্বর্ণ, বাদমি কয়লা, বক্সাইট, লিগনাইট এবং নিকেল প্রভৃতি কসোভোর প্রাকৃতিক সম্পদ। অনুমান করা হয়, কসোভোতে ১৪,০০০ বিলিয়ন টন লিগনাইট রয়েছে। এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশের জিডিপি প্রধানত কৃষিনির্ভর। ঐতিাহাসিকভাবে কসোভো মদ্য উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত। প্রতিবছর এখানে মিলিয়ন মিলিয়ন টন লাল মদ ও সাদা মদ উৎপাদিত হয়। যা জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়।

স্থলবেষ্ঠিত কসোভো ইউরোপের সংখ্যাঘরিষ্ট মুসলিম ও দরিদ্র রাষ্ট। জনসংখ্যার ৫০% দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বেকারত্বের হার ১৫% এর অধিক। দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণ কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতা নয়। বরং প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার্য সম্পদে পরিণত করার প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও যোগ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। দেশের ৯০% অধিবাসী নৃতাত্ত্বিক আলবেনিয়ান। অধিকাংশ মুসলিম। বাকি ১০% অর্থডোক্স খ্রিস্টান সার্ব।

এখানে প্রচুর মার্সিডিস গাড়ি রয়েছে এবং ভাড়া খুব কম। ২-৩ ইউরো দিয়ে মার্সিডিসে চড়ে বহুদূর যাওয়া যায়। পার্কে প্রায় লোক আন্ডারওয়্যার ও মাথায় সংবাদপত্রের তৈরি টুপি পড়ে দিব্যি ঘুড়ে বেড়ায়। রাজধানী শহরের অনেক বিল্ডিং এত নোংরা যে, ঢাকার পুরানো ভবনগুলোর কথা স্মরণ করিয় দেয়। এখানে যখন যেখানে ইচ্ছা ধূমপান করা যায়। সিগারেটের দামও অবিশ্বাস্য রকম সস্তা।


আইসল্যান্ড (Iceland) : ইতিহাস ও নামকরণ

আয়ারল্যান্ড (Irelan) : ইতিহাস ও নামকরণ

ইতালি (Italy) : ইতিহাস ও নামকরণ

কাজাখস্তান (Kazakhstan) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

 

Language
error: Content is protected !!