কীভাবে হলো দেশের নাম ( উত্তর আমেরিকা)
ড. মোহাম্মদ আমীন
কানাডা (Canada)
কানাডা ১০টি প্রদেশ ও ৩টি টেরিটরি নিয়ে গঠিত দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণে অবস্থিত ৯৯,৮৪,৬৭০ বর্গকিলোমিটার বা ৩৮,৫৪,০৮৫ বর্গমাইলের

একটি উদারপন্থী রাষ্ট্র। মোট আয়তনের মধ্যে জলভাগের পরিমাণ ৮.৯২% বা ৮,৯১,১৬৩ বর্গকিলোমিটার। মোট আয়তন বিবেচনায় কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং শুধু স্থলভাগের আয়তন বিবেচনায় পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ সীমান্ত পৃথিবীর দীর্ঘতম স্থল-সীমান্ত। রকি পবর্ত কানাডার বিখ্যাত পর্বত। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল কানাডা যুক্তরাজ্য হতে প্রকৃত অর্থে পুরোপুরি স্বাধীনতা লাভ করে। কানাডার সরকারি ভাষা ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ। এ ছাড়া আরও অনেকগুলো ভাষা প্রচলিত আছে। যা আঞ্চলিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃত।
ইরকুইয়ান (kanata) শব্দ কানাটা (শধহধঃধ) শব্দের অর্থ গ্রাম বা উপনিবেশ। ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক কুইবেক সিটি অঞ্চলের আদিবাসী বাসিন্দাদের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ স্টাডাকোনা (Stadacona) গ্রামকে নির্দেশ করার জন্য ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রী জ্যাকুয়েস কার্টিয়ের (Jacques Cartier) কানাটা (kanata) শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি লরেনটিয়ান কানাডাকে (Laurentian Kanada), ডোনাকোনার( Stadacona) রাজধানী স্টাডকোনা (ঝঃধফধপড়হধ) হিসাবে ভুল করেছিলেন। ডোনাকোনা ছিলেন সেন্ট লরেন্স নদীর তীরে বসবাসরত উপজাতীয়দের সর্দার। যাই হোক, পরবর্তীকালে কার্টিয়ের কোনো নির্দিষ্ট গ্রামকে নয়, বরং পুরো ডোনাকোনা অঞ্চলকে বুঝানোর জন্য কানাডা শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন পুস্তক ও মানচিত্রে পুরো অঞ্চলটিকে নির্দেশ করার জন্য কানাডা শব্দটি লেখা হতে শুরু করে।
সতর শতকের শেষদিকে এবং আঠারো শতকের প্রথম দিকে সেন্ট লরেন্স নদীর তীরে গড়ে ওঠা নিউ ফ্রান্সের একটি অংশকে কানাডা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে এখানে দুটি ব্রিটিশ কলোনি গড়ে ওঠে। একটি আপার কানাডা এবং অন্যটি লোয়ার কানাডা। দুটোকে একত্রে নাম দেওয়া হয়


দ্যা কানাডাস । ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রদেশ কানাডায় যুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অঞ্চল দুটোর নাম এমনই থেকে যায়। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে কনফেডারেশন হওয়ার পর নতুন দেশটির নাম কানাডা হিসাবে গ্রহণ করা হয় এবং দেশের টাইটেল হিসাবে ডমিনিয়ন শব্দটা গ্রহণ করা হয়।
কানাডা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে একটা চমৎকর কিংবদন্তি আছে। স্পেনিস বা পর্তুগিজ আকা (aca) বা আকা নাডা (ca nada) শব্দের অর্থ ‘এখানে কিছু নেই’। কানাডায় ওঠে স্পেনিশ ও পতুর্গিজ অভিযাত্রীরা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে স্বর্ণ বা রূপা। কিন্তু কিছুই না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে জাহাজের লোকদের বলতে থকে : আকা নাডা, মানে এখানে কিছুই নাই।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, কানাডার জনসংখ্যা ৩,৫৮,৫১,৭৭৪ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যা ৩.৪১ জন। আয়তন বিবেচনায় এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় ২২৮-তম জনবহুল দেশ। অর্থাৎ কানাডার চেয়ে বেশি আয়তনের দেশ আছে মাত্র ১টি কিন্তু বেশি ঘনত্বের দেশ আছে ২২৭। আবার মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় কানাডা পৃথিবীর ৩৭-তম দেশ। কানাডার জিডিপি ১.৬২৮ ট্রিলিয়ন (১৫-তম) এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৪৫,৪৮৯ (২০-তম)। অন্যদিকে জিডিপি (নমিনাল) ১.৫৭৩ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার (১১-তম) এবং মাথাপিছু আয় ৪৩,৯৩৫



ইউএস ডলার (১৫-তম)। মুদ্রার নাম কানাডিয়ান ডলার এবং রাজধানী অটোয়া। বৃহত্তম শহর টরেন্টো। কানাডার নাগরিকদের কানাডিয়ান বলা হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদম শুমারি অনুযায়ী ৬৭.৩% কানাডিয়ান খ্রিস্টান, ২৩.৯% উদার অর্থাৎ কোনো ধর্মের অনুসারী নন। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৩.২% মুসলিম, ১.৫% হিন্দু। কানাডার অধিকাংশ লোক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হলেও সুন্দর জীবনের জন্য ধর্মপালন নিরর্থক মনে করেন। কানাডা সরকার বহুত্ব্ধর্মে বিশ্বাসী। তাই সেখানে কোনো সরকারি ভাষা নেই। কানাডার মোট লোকসংখ্যা টোকিওর মেট্রপলিটন এলাকার লোকের চেয়ে কম।
কানাডার জাতীয় পতাকাকে ম্যাপল লিপ (Maple Leaf ) বলা হয়। এ জাতীয় পতাকায় লাল ভূমির মাঝে রয়েছে সাদা বর্গক্ষেত্র। যার মাঝখানে একটি লাল রঙের ১১-বিন্দুর চমৎকার ম্যাপল পাতা রয়েছে। এটি পৃথিবীর প্রথম জাতীয় পতাকা, আইন দ্বারা যাকে জাতীয় পতাকা হিসাবে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত করা হয়। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই ব্রিটিশ নর্থ আমেরিকান চুক্তির পাস হওয়ার কানাডা দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। অথচ ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কানাডার কোনো জাতীয় পতাকা ছিল না। অন্যদিকে এর জাতীয় সংগীত ওহ কানাডা (O Canada ) ১৯৮০খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সংগীত হিসাবে সরকারিভাবে নির্বাচন করা হয়। এখনও কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান ব্রিটেনের রাণী। কানাডা, মেক্সিকো, ভারত, রাশিয়া, ইসরাইলের ব্যাংক নোটে ব্রেইল চিহ্ন রয়েছে। কানাডার নীতিবাক্য (motto) যেমন চমৎকার, তেমনি ব্যতিক্রমী। এটি হচ্ছে সাগর হতে সাগরে From sea to sea.)। আমেরিকা দ্ইুবার কানাডা আক্রমণ করেছিল। একবার ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে আর একবার ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে।
কানাডা একাই ৬টি সময়- জোনের অন্তর্ভুক্ত। ২০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কানাডার ইয়ং স্ট্রিট (Yonge Street) পৃথিবীর দীর্ঘতম সড়ক। এটি অন্টারিও লেক (Lake Ontario) থেকে শুরু হয়ে মিনিসোটা সীমান্তে শেষ হয়েছে। তটরেখা (coastline) বিবেচনাতেও কানাডা বিশ্বে প্রথম। এর তটরেখার দৈর্ঘ ২,০২,০৮০ কিলোমিটার। পৃথিবীর মোট বনের ১০% একা কানাডাতে। ৪৪,৮০২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওড বাফেলো ন্যাশনাল পার্ক কানাডার


সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে এটা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর আয়তন সুইজারল্যান্ড (৪১,২৮৫ বর্গ কিলোমিটার), নেদারল্যান্ডস (৪১,৮৫০ বর্গকিলোমিটার) ও এবং ভুটানসহ(৩৮,৩৯৪ বর্গকিলোমিটার) পৃথিবীর আরও অনেকে দেশের চেয়ে বড়।
ক্ইুবেক সিটিতে অবস্থিত হোটেল ডি গ্ল্যাস প্রতিবছর ৪০০ টন বরফ ও ১২,০০০ টন তুষার দিয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রতি গ্রীষ্মকালে এটি গলে যায় এবং শীতকালে আবার নির্মাণ করা হয়। মনিট্রল সুন্দর সুন্দর অসংখ্য চার্চের জন্য বিখ্যাত। এ শহরকে অনেক সময় সাধুদের শহর (City of Saints) বা শত ঘণ্টার মিনারের শহর (City of a hundred bell towers) বলা হয়। অন্টারিওতে অবস্থিত ২৪.৩ বর্গমিটার আয়তনের কারাগারটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র কারাগার বলা হয়। বিট্রিশ কলাম্বিয়ায় অবস্থিত ও ১৫ মাইল দীর্ঘ মরুভূমিটি কানাডার একমাত্র মরুভূমি। এটি পৃথিবীর একমাত্র মরুভূমি যাতে পর্যটকগণ ব্রডওয়াক (boardwalk) দিয়ে হাঁটতে পারেন।
কানাডায় ৩০ হাজারের অধিক হ্রদ রয়েছে। যা পুরো পৃথিবীর মোট হ্রদের সংখ্যার চেয়ে বেশি। কানাডায় পাওয়া যায় বিশাল প্রাণী মুজ ও গ্রিজলি ভল্লুক। এছাড়া এখানে রয়েছে, ৫৫,০০০ প্রজাতির পোকা এবং ১১,০০০ প্রজাতির


মাকড়শা ও মাইট (সরঃবং)। প্রচণ্ড শীতের দেশ কানাডা। শীতকালে কোথাও কোথাও তাপমাত্র -৪০সেন্ট্রিগেড হতে -৪০ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। আইস হকি কানাডার প্রিয় খেলা। কানাডার নিউফোল্ড ল্যান্ডে আটলান্টিক মহাসাগর জমে অনেক সময় বরফ হয়ে যায়। সে সময় ওখানে লোকেরা আইস-হকি খেলে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে কানাডায় সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটি ছিল -৮১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা -৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শিক্ষায় দেশটির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কানাডার অর্ধেক জনগণের কলেজ ডিগ্রি আছে। তেল সম্পদ মওজুদের পরিমাণ বিবেচনায় সৌদি আরব ও ভেনেজুয়েলার পর কানাডার স্থান। দস্তা, নিকেল, সীসা ও স্বর্ণ কানাডার অন্যতম খনিজসম্পদ। কানাডায় পতিতবৃত্তি আইনসিদ্ধ। যৌনসেবার বিপরীতে অর্থ বিনিময় নিষিদ্ধ হতে যাবে কেন? তবে এখানে রাস্তাঘাটে পতিতাবৃত্তি করা, প্রচার করা বা পতিতার দালালি করা অবৈধ।
কানাডার লোকেরা পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের লোকের চেয়ে অধিক পরিমাণ ম্যাকোরনি আর চিজ খায়। কানাডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থি লাইসেন্স প্লেটের (Licence Plates) আকৃতি অনেকটা মেরু ভল্লুকের মতো। উল্লেখ্য এখানে অনেক অনেক মরু ভল্লুক থাকে।
If you visit Dawson City, Yukon, you can join the “Sourtoe Cocktail Club” — all you have to do is finish a drink (of anything!) with a real human toe in the bottom. The club’s motto says, “You can drink it fast, you can drink it slow — but the lips have gotta touch the toe.”
উত্তর আমেরিকা (North America) : ইতিহাস ও নামকরণ
এন্টিগুয়া এন্ড বারবুডা (Antigua and Barbuda) : ইতিহাস ও নামকরণ
দি বাহামাস (Bahamas) : ইতিহাস ও নামকরণ
বার্বাডোস (Barbados ) : ইতিহাস ও নামকরণ
বেলিজ (Belize) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
এশিয়া মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক