কামরূপ
কামরূপ মূলত জলপাইগুড়ি, আসামের বৃহত্তর গোয়ালপাড়া জেলা, বৃহত্তর কামরূপ জেলা নিয়ে গঠিত। পুরাণ এবং তন্ত্র সাহিত্যে এই কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষ-কামরূপের সীমানা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত। ‘কালিকাপুরাণে’ এটির অবস্থান করতোয়া নদীর পূর্বে ত্রিভুজাকৃতি বলা হয়ে, যার দৈর্ঘ্য ১০০ যোজন ও প্রস্থ ৩০ যোজন এবং এটি পূর্বদিকে দিক্কারবাসিনী (আধুনিক দিকরাই নদী) পরিবেষ্টিত ছিল। অন্যদিকে ‘যোগিনী তন্ত্র’ পুরো কামরূপকে ‘রত্নপীঠ’, ‘ভদ্রপীঠ’, ‘সৌমর পীঠ’ এবং ‘কামপীঠ’ রূপে বিভক্ত করেছে এবং এর সীমানা উত্তর দিকে কাঞ্জ পাহাড়, পূর্ব দিকে পবিত্র নদী দীক্ষু (সাদিয়ায় আধুনিক দিবাং), পশ্চিমে করতোয়া এবং দক্ষিণ দিকে লক্ষ (আধুনিক লখ্যা) ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলিত প্রবাহকে নির্দেশ করেছে। এক সময় কামরূপ রাজ্যে বর্তমান ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, ভুটান, রংপুর, ‘কুচবিহার’ এবং বেশ কিছু সন্নিহিত অঞ্চল অন্তর্ভূুক্ত ছিল। মহাভারতে প্রাগজ্যোতিষের উল্লেখ আছে কিন্তু কামরূপের উল্লেখ নেই। কালিদাসের রঘুবংশ উভয় জনপদের সাক্ষ্য দেয়। চার শতকের মাঝামাঝির সমুদ্র গুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপিতে কামরূপের নাম পাওয়া যায়। চীনা তীর্থ যাত্রী হিউয়েন সাং পুন্ড্রবর্ধন থেকে ভাস্কর বর্মণের দেশে ভ্রমণের সময় কামো-রূ-পো (কামরূপ) এবং কালো-তু(করতোয়া) উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে দুবি তাম্রশাসন, ভাস্কর বর্মণের নালন্দা ক্লে-সিলসমূহে এবং নারায়ণ পালের ভাগলপুর দানপত্রে প্রাগজ্যোতিষ নাম পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যায়, কামরূপ নামের পূর্ব থেকেই গ্রাগজ্যোতিষ নামটি প্রচলিত ছিল এবং উভয় নামই একই ভূখন্ডের। সম্ভবত প্রাচীন কালে গ্রাগজ্যোতিষ একটি বিস্তীর্ণ ‘জনপদ’ ছিল যেখান থেকে পরবর্তী সময়ে কামরূপ একটি ছোট রাজ্য হিসেবে উদ্ভূত। তেরো শতকে অহোমদের আগমনের সময় পর্যন্ত, যখন এটি অসম (অতুলনীয়) বা আসাম নাম গ্রহণ করে। ‘কামরূপ’ শব্দটি একটি অস্ট্রিক শব্দ গঠন ‘কামরূ’ বা ‘কামরূত’ থেকে এসেছে যা সাঁওতালি ভাষায় একটি তাৎপর্যহীন দেবতার নাম যা দ্বারা যাদুবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা বোঝায়।
বাংলার প্রাচীন বাংলা কয়েটি জনপদে বিভক্ত ছিল। জনপদগুলোর নাম ও বর্ণনা নিচে দেওয়া হল। ক্লিক করে জনপদগুলোর সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তথ্যবহুল বিবরণ জেনে নিতে পারেন।