ড. মোহাম্মদ আমীন
কথিত হয়, ষোড়শ শতকের মধ্যভাবগে শ্রীবাবু নামের এক ধনী অভিজাত হিন্দু কলকাতায় বিশাল এক প্রাসাদ বানিয়ে বসবাস করতেন। শ্রীবাবু বাস করতেন বলে প্রাসাদটি সাধারণ জনগণের কাছে ‘শ্রীঘর’ নামে পরিচিত ছিল। শাসকগোষ্ঠীর অনেকে প্রায় সময় তাঁর শ্রীঘরে মেহমান হয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার জন্য আসতেন। পেশাগতভাবে শ্রীবাবু ছিলেন ঠিকাদার। মুসলিম শাসনামলে শ্রীবাবু ও তার পূর্বপুরুষগণ মোগল প্রশাসনের ঠিকাদারি করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর শ্রীবাবু কোম্পানির পক্ষে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন।
শ্রীবাবু ছিলেন গৌরীসেনের ব্যাবসায়িক গুরু ও অংশীদার। উভয় সম-অংশীদারত্বে অনেক কাজ করতেন। কালক্রমে শ্রীবাবু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আরও প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। তাঁর সহায়সম্পদ ক্রমশ বেড়েই চলে। শ্রীঘরের শ্রী আরও শ্রীময় হয়ে ওঠে। একসময় বিরাট অঙ্কের এক দেনাপাওনা নিয়ে কোম্পানির অতি প্রভাবশালী কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের সঙ্গে তাঁর মতের অমিল শুরু হয়। ফলে শ্রীবাবু কোম্পানির অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। এর কিছুদিন পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শ্রীবাবুকে কোম্পানির সব কর্মকাণ্ড হতে বহিষ্কার করে দেয়।
কোম্পানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে নিরাপত্তার খাতিরে শ্রীবাবুকে তারই নির্মিত ‘শ্রীঘরে’ আটকে রাখা হয়। তিনি দীর্ঘদিন তাঁর শ্রীঘরে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। শ্রীবাবু মারা যাওয়ার পর শ্রীঘরটি ইংরেজ অপরাধীদের সাময়িক কারাগার হিসাবে ব্যবহার করা শুর হয়। বিশেষ করে, কোনো ইংরেজ বা খুব প্রভাবশালী কেউ অপরাধ করলে তাকে ঘোষিত কারাগারে না-দিয়ে শ্রীঘরে আয়েশে রাখা হতো। ফলে শ্রীঘর শব্দটি বাংলায় উপহাস অর্থে ‘কারাগার’ এর সমার্থক শব্দ হিসাবে স্থান করে নেয়।
——————————————————————————————-
বিস্তারিত: কারাগার বা জেলখানাকে কেন শ্রীঘর বলা হয়