ড. মোহাম্মদ আমীন
কিছু পরিবর্তিত বানান: কিছু জানা কিছু অজানা
ব্যাবহারিক: আগে লেখা হতো ব্যবহারিক। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধান বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ব্যবহারিক শব্দটি নেই। আছে কেবল ব্যাবহারিক। ব্যবহার শব্দের সঙ্গে ইক প্রত্যয় যোগে ব্যাবহারিক করা হয়েছে। যেমন: বর্ষ+ইক= বার্ষিক, অর্থ+ইক= আর্থিক, সমসময় +ইক= সামসময়িক। তেমনি: ব্যবহার+ইক = ব্যাবহারিক।
বৈচারিক: হরদম লেখা হয় বিচারিক। চাকুরির প্রথম বেলায় আমার কক্ষের দরজাতেও টাঙানো থাকত: বিচারিক হাকিম। ব্যাকরণমতে এটি শুদ্ধ নয়। বিচার শব্দের সঙ্গে ইক প্রত্যয় যুক্ত হলে শব্দটি হয় বৈচারিক। যেমন: দিন+ ইক= দৈনিক, বিদেশ+ইক= বৈদেশিক, বিজ্ঞান+ইক= বৈজ্ঞানিক, নীতি+ইক= নৈতিক; তেমনি, বিচার+ ইক= বৈচারিক।
বড়ো গোরুর ছোটোগল্প: আগে লেখা হতো গরু, ছোট, বড়, পটল কিন্তু এখন লিখতে হবে যথাক্রমে গোরু, ছোটো, বড়ো, পটোল। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে গরু, ছোট, বড়, পটল (আনাজ) পাবেন না। তেমনি পাবেন না ছোটগল্প। পাবেন কেবল ছোটোগল্প, গোরু, বড়ো, ছোটো পটোল। ও-কার পেয়ে এরা সবাই মোটাসোটা।
ঘুস: ঘুস অতৎসম শব্দ। তাই ঘুষ অশুদ্ধ। লিখতে হবে ঘুস। ঘুসাঘুসি থেকে ঘুস। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে একমাত্র ঘুস বানানকে ঠাঁই দিয়েছে। অতৎসম বলে ষ নেই ঘুসে।
খ্রিষ্ট খ্রিষ্টাব্দ: ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দেও খ্রিস্ট, খ্রিস্টাব্দ, খ্রিস্টীয় লিখেছি। এখন এসব বানানে স নেই। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে লিখতে হবে, খ্রিষ্ট, খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিষ্টীয়। বাংলা একাডেমি বলছে, এগুলো বিদেশি নয়, আত্তীকৃত শব্দ।
লক্ষ লক্ষ্য উপলক্ষ্য: লক্ষ শব্দের অর্থ খেয়াল করা বা লাখ, ১০০০০০ (ছেলেটির দিকে লক্ষ রেখ, লক্ষ টাকা দেব তোমাকে)। লক্ষ্য শব্দের অর্থ উদ্দেশ্য (আমার লক্ষ্য লেখক হওয়া)। লক্ষ্য থেকে উপলক্ষ্য। তাই লক্ষ্য না থাকলে উপলক্ষ্য আসতে পারে না। অতএব লিখতে হবে উপলক্ষ্য। উপলক্ষ বানান অশুদ্ধ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে উপলক্ষ বানানের কোনো শব্দ নেই।
টম্যাটো: টমেটো বা টমাটো নয়, ফরাসি এই সবজিটির প্রমিত বাংলা বানান টম্যাটো। ইংরেজিতে tomato। বাংলায় ম-য়ে য-ফলা দিতে হবে। মনে করুন, এটি মূল্য বানানের ল্য থেকে এসেছে। জীবনের চেয়ে টম্যাটোর মূল্য কম নয়।
সবজি: সবজি বানানে ব-কে জ-এর সঙ্গে মিশিয়ে দিলে সবজির আসল গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। পৃথক রাখবেন— যদি তাজা সবজি খেতে চান। এটাকে মনে করুন, করোনার সামাজিক দূরত্ব।
একই পদের মধ্যে প্রথমে ঋ ঋৃ র ষ-এর পরে যদি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য-ব-হ এবং অুনস্বারের ব্যবধান থাকে তাহলে ন, ণ হয়ে যায়। তাই রমণ, রমণী ও রমণীয় বানানে মূর্ধন্য-ণ। রমনা বানানে দন্ত্য-ন কেন? কারণ, এটি স্থান নাম। নামে ব্যাকরণবিধি প্রযোজ্য হয় না। অধিকন্তু রমনা তৎসম শব্দ নয়।
শালাশালা মানে শ্বশুরবাড়ি: অনামিকা
কিছু পরিবর্তিত বানান: কিছু জানা কিছু অজানা
All Link : শুবাচে প্রকাশিতগুরুত্বপূর্ণ লেখা
১১. উপর বনাম ওপর
সূত্র: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.