Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
কেনিয়া (Kenya) : ইতিহাস ও নামকরণ – Dr. Mohammed Amin

কেনিয়া (Kenya) : ইতিহাস ও নামকরণ

 

কীভাবে হলো দেশের নাম (আফ্রিকা)

কেনিয়া (Kenya)

ড. মোহাম্মদ আমীন

কেনিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এর উত্তরে সুদান ও ইথিওপিয়া, পূর্বে সোমালিয়া ও ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে তানজানিয়া এবং পশ্চিমে ভিক্টোরিয়া হ্রদ ও উগান্ডা। কেনিয়ার প্রাচীন নাম ব্রিটিশ ইস্ট আফ্রিকা বা ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা। আফ্রিকা মহাদেশের জনপদটির ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় দখলদার যুক্তরাজ্য, উপনিবেশটির নাম দিয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট আফ্রিকা। মাউন্ট কেনিয়া বা কেনিয়া পর্বত হতে কেনিয়া নামক দেশটির নাম নেওয়া হয়েছে। এবার কেনিয়া নামের ব্যুৎপত্তি আলোচনা করা যায়।

কিকুইও (Kikuyu) ভাষার শব্দ কেরে নায়াগা (Kere Nyaga) হতে কেনিয়া নামের উদ্ভব। এর অর্থ শ্বেত পর্বত (White Mountain) বা সাদা পর্বত। তুষারপাতের কারণে পর্বতটির শৃঙ্গ সাদা দেখাত। তাই এটাকে বলা হতো কেরে নায়াগা। পর্বতের আশেপাশে বসবাসরতদের কাছে ‘কেরে নায়াগা’ ছিল পবিত্র স্থান। শৃঙ্গের শুভ্র বরফকে তারা দেবতার আশীর্বাদ মনে করত। অনেকে বলেন, দেবতার আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য তারা জনপদের নাম দেয় ‘কেরে নায়াগা’। যা ক্রমপরিবর্তনের মাধ্যমে কেনিয়া নামে স্থিত হয়।

আবার অনেকে মনে করেন, কিরিনইয়াগা, কিরিনইয়া এবং কিনইয়া শব্দসমূহের অর্থ ‘গড’স রেস্টিং প্লেস’ বা প্রভুর বিশ্রামস্থান। ৫,১৯৯ মিটার উচু মাউন্ট কেনিয়া আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থান। আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্থান তাঞ্জানিয়ায় অবস্থিত মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো দেখা যায় কেনিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে। কেনিয়ার আদিবাসীদের বিশ্বাস এ পর্বত খুব নিরাপদ কারণ এখানে তাদের দেবতা বাস করেন এবং তাই কিলিমাঞ্জারো পর্বত পর্যন্ত এখান থেকে দেখা যায়। প্রাগৈতিহাসিক যুগে ‘মাউন্ট কেনিয়া’র অগ্নুৎপাতের ফলে কেনিয়া সৃষ্টি হয়। আর তখন থেকেই এর মূল আদিবাসী কিকুইয়ুরা এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে। তার পর্বতের সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চলটিরও নাম হয়ে যায় কেনিয়া। কারও কারও মতে, শব্দগুলো হিব্রু। এর অর্থ অ্যানিমাল হর্ন। আবার রাশিয়ান ভাষায় এগুলোর অর্থ ইনোসেন্ট বা নিষ্পাপ বা হার্মলেস।

১৯ শতকে জার্মান শাসক লুদউইক কার্প কেনিয়ার বর্তমান নামকরণটি করেন। কেনিয়ার মালিক ছিলেন জাঞ্জিবারের সুলতান। কিন্তু ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মান এটি দখল করে নেয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের ইস্ট আফ্রিকা কোম্পানি জার্মানদের নিকট হতে জায়গাটি পুনঃদখল করে নেয়। বিংশ শতকের প্রারম্ভে শ্বেতাঙ্গরা এখানে আসতে শুরু করে এবং কফি ও চা উৎপাদন করে ধনী হয়ে উঠে।

কেনিয়ার মোট আয়তন ৫,৮১,৩০৯ বর্গকিলোমিটার বা ২,২৪,০৮০ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ২.৩%। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, কেনিয়ার জনসংখ্যা ৪,৫০,১০,০৫৬ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার লোকসংখ্যা ৭৮ জন। আয়তন বিবেচনায় কেনিয়া পৃথিবীর ৪৯-তম বৃহত্তম দেশ এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় ৩১-তম। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ১২৪-তম জনবহুল দেশ। ধর্ম বিশ্বাসের দিক দিয়ে কেনিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী খ্রিস্টান। এছাড়া মুসলমান ১০%, সনাতন ১০% এবং অন্যান্য ২%।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, কেনিয়ার জিডিপি (পিপিপি) ১৪২.৭৪২ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩,২৩৮ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৬৫.৮৯৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,৪৯৫ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম কেনিয়ান শিলিং। রাজধানী নাইরোবি। সরকারিভাবে কেনিয়ার অধিবাসীদের কেনিয়ান বলা হয়। সরকারি ভাষা ইংরেজি ও সোয়াহিলি (Swahili)। নাইরোবি কেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। নাইরোবি পূর্ণ প্রদেশের মর্যাদা ভোগ করে। নাইরোবি, মোম্বাসা, কিসুমু, নাকুরু এবং এল্ডোরেট কেনিয়ার বড় শহর।

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর দেশটি স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগে সরকার গঠন করে। স্বাধীনতার দিনটিতেই তারা দেশটির প্রথম সংবিধান রচনা করে এবং ওই দিনই জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়। কেনিয়া স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর দ্য রিপাবলিক অব কেনিয়া ঘোষিত হয়। জুমু কেনিয়াত্তা হন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর ড্যানিয়েল আরাপ মই প্রেসিডেন্ট হন।

বনভুমি বন্যপশুদের অন্যতম বৃহৎ আবাসভুমি কেনিয়া। এটি নীল ওয়াইল্ডবিস্টের জন্য বিখ্যাত। এখানে সিংহ, চিতা, মহিষ, গ-ার ও হাতি তো রয়েছেই, এর পাশাপাশি অন্যান্য বন্য পশু ও পাখিও প্রচুর দেখা যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাখ লাখ পশু নিজ নিজ স্থান বদল করে। তাই এটি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয়।

পর্যটন দেশটির অর্থনীতিতে বড় আকারের অবদান রাখছে পর্যটন। মোট জিডিপির ৬৩ শতাংশ আসে পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাত থেকে। মূলত জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পর্যটকরাই কেনিয়া আসেন। কেনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ২০,৮০৮ বর্গ কিলোমিটারের সাভো ন্যাশনাল পার্ক পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কেনিয়াতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত কৃষি। এ খাত থেকে জিডিপির ২৪ শতাংশ আসে। এখানকার প্রধান ফসল হচ্ছে, চা ও কফি।

কফি কেনিয়ার প্রধান রপ্তানি দ্রব্য হলেও তারা এটি পান করে না বললেই চলে। কেনিয়ানদের প্রিয় পানীয় চা ও বিয়ার। কেনিয়ানরা হয়তো অতি গরীব, নয় তো অতি ধনী। এখানে মধ্যবিত্ত পরিবার নেই বললেই চলে। বিয়ের আগে কেনিয়ায় এখনও কনের পরিবারকে যৌতুক দিতে হয়। যা কমপক্ষে ১০টি গরু। তাই এখানে বিয়ে করা বেশ ব্যয়বহুল।

কীভাবে হলো দেশের নাম (Guinea) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (Guinea-Bissau) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম (আফ্রিকা), ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।