অনেকের মতে কেবলমাত্র অপপ্রয়োগ। তাদের যুক্তি— কেবল আর মাত্র সমার্থক। তাই দুটোর যে-কোনো একটা হলে চলে। অনেকে মনে করেন, দ্বিরুক্ত শব্দ হিসেবে কেবলমাত্র বাহুল্য বা অপপ্রয়োগ নয়। কেবলমাত্র যদি অশুদ্ধ হয় তাহলে কাজকর্ম, কাজকারবার, মানুষজন, বইপুস্তক, বসবাস, বাড়িঘর, ঘরবাড়ি, দাবিদাওয়া, জলপানি, হরহামেশা, কথাবার্তা, টাকাপয়সা, চিঠিপত্র, দুঃখকষ্ট, জামবাটি, পাউরুটি, হাটবাজার প্রভৃতি সমার্থক শব্দের দ্বিত্বও অশুদ্ধ হয়ে যাবে। অশ্রুজল, কাজকর্ম, কাজকারবার, মানুষজন, বইপুস্তক, বসবাস, বাড়িঘর, ঘরবাড়ি, দাবিদাওয়া, জলপানি, হরহামেশা, কথাবার্তা, টাকাপয়সা, চিঠিপত্র, দুঃখকষ্ট, জামবাটি, পাউরুটি, হাটবাজার, সঠিক প্রভৃতি সমার্থক শব্দের দ্বিত্ব যদি অশুদ্ধ না হয়, কেবলমাত্র কিংবা শুধুমাত্র অশুদ্ধ হবে কেন? ‘শুধুমাত্র/কেবলমাত্র’ দুটোই এখন বহুল প্রচলিত শব্দ। এরা যদি সমার্থক দ্বিত্বের কারণে অশুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে উদাহরণে বর্ণিত শব্দসমূহ ছাড়াও আরও অনেক অনেক শব্দ একই কারণে অশুদ্ধ হয়ে যাবে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
কেবলমাত্র অশুদ্ধ কি না; কেবলমাত্র শুধুমাত্র সঠিক
ড. মোহাম্মদ আমীন
“কোলাহল তো বারণ হল, এবার কথা কানে কানে।
এখন হবে প্রাণের আলাপ কেবলমাত্র গানে গানে।।”
এ প্রসঙ্গে শুবাচে (শুদ্ধ বানান চর্চা) শীলা হায়াত লিখেছেন: এদেরকে(কেবলমাত্র/শুধুমাত্র) আধুনিক পণ্ডিতরা ব্রাত্য ঘোষণা করেছেন। অপরাধ তো অবশ্যই আছে। কারণ কেবল, মাত্র, শুধু এদের অর্থ একই। তাই একই শব্দের দ্বিত্ব না-ঘটানোর জন্য তাঁরা আদাজল খেয়ে নেমেছেন। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে কি বলবেন কেবল বা মাত্র ব্যবহার করে বাক্য লিখে শান্তি পেয়েছেন? দুঃখ লাগে তখনই যখন এরূপ অন্য শব্দের ক্ষেত্রে তাঁরা চোখে ঠুলি পরে থাকেন। এখন আর চিঠিপত্র আসে না? বইপুস্তক ধরা ছেড়ে দিয়েছ? আমাদের এ এলাকায় বসবাস ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের দাবিদাওয়া আমাদেরই জানাতে হবে। এবারের পরীক্ষায়ও রীতা জলপানি পাবে।
এ ধরনের ভূরিভূরি উদাহরণ দেওয়া যাবে। ‘জামবাটি’ শব্দের ‘জাম’ অর্থ বাটি। আবার বাটি শব্দ লাগিয়ে ‘জামবাটি’ দিব্যি বাংলাভাষায় ঘর-সংসার করছে। পর্তুগিজ থেকে এল ‘পাউ’ বা ‘পাঁউ’। এর অর্থ রুটি। তা হলে ‘পাউরুটি’ লেখা ও বলার মানে কী! বিদেশি শব্দ বলে সাতখুন মাফ! কাগজপত্রে আর কত লিখব? লোকজন শেষে কী বলাকওয়া করে তা-ই ভাবছি। মাথামুণ্ডু ঠেসে ধরে খানাখন্দে ফেলে দিলে ওঠা তো দুষ্কর হয়ে যাবে। এমনিতেই ধারদেনার মধ্যে আছি। গাছগাছালি, পাখপাখালি দেখে গাঁ-গ্রামে ঘরবাড়ি করেছিলাম। সামান্য যা সহায়-সম্বল ছিল তা দিয়ে বহুবহু দরদাম করে কিছু জমিজিরাত কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম সন্তানসন্ততির বিয়েশাদি এখানেই দেব। না রে ভাই, ঠাট্টা-তামাশা করছি না। ঝগড়াবিবাদ তো সেই কবেই ছেড়ে দিয়েছি।
এখন বরং ডরভয়ের মধ্যে থাকি। শুনেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই আপনারা ছাড়পত্র দিচ্ছেন না। তাঁর ‘অশ্রুজল’ অশুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রবিবাবু বলে কথা! আমাদের ভুলভ্রান্তি তো আরও অগণিত। বৃষ্টির পানি ঠিকমতো মাথায় পড়লে ভেসে কোথায় চলে যাব! আচ্ছা, বৃষ্টি তো মেঘের পানি। বৃষ্টির পানি বললে আবার দোষ হবে না তো? জানি, কেউ কেউ বলবেন ছলচাতুরি করছি। ‘অশ্রুজল’ তো ভুল পণ্ডিতরাই বলে দিয়েছেন। গরিবগুরবা মানুষ আমরা। বাদবাকি কথা বলে আর কী হবে! আমাদের জন্য আঁখিবারিও যা শিশির-সলিলও তা।
জানা অজানা অনেক মজার বিষয়: https://draminbd.com/?s=অজানা+অনেক+মজার+বিষয়
শুবাচ গ্রুপের সংযোগ: www.draminbd.com
শুবাচ যযাতি/পোস্ট সংযোগ: http://subachbd.com/